বিএম ডেস্ক : রংপুরের মিঠাপুকুরে দুই নৃগোষ্ঠী তরুণীকে গণধর্ষণ ও তাদের মধ্যে এক তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামি রতন মিনজিকে (২৬) গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৩। অপর আসামী স্বপন মিনজি ওরফে মামুনকে রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
আসামি রতন মাথার চুল ন্যাড়া করে ছদ্মবেশে বান্দরবানের জঙ্গলে লুকানোর পরিকল্পনা করছিল। তার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই রাজধানীর সাভার থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
শুক্রবার সকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-১৩ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক। ওই তরুণীর আত্মহত্যার কিছু সুইসাইডাল নোট উদ্ধারের তথ্যও জানান তিনি।
রংপুর মহানগরীর স্টেশন আলমনগর এলাকায় র্যাব-১৩ এর সদর দফতরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক জানান, মিঠাপুকুরের খোর্দনুরপুর এলাকার আদিবাসী দুই তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে সাভার এলাকায় আত্মগোপনে থাকা মামলার প্রধান আসামি রতন মিনজিকে র্যাব সদস্যরা গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে রতন মিনজি। গ্রেফতার এড়ানোর জন্য রতন মিনজি ছদ্মবেশ ধারণের উদ্দেশ্যে মাথার ন্যাড়া করে ও বান্দরবানের জঙ্গলে লুকানোর পরিকল্পনা করে সেখানে যাচ্ছিল। কিন্তু র্যাবের জালে তার আগেই সে ধরা পড়ে বলে জানান অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
এদিকে, রংপুরের ডিবি পুলিশ শুক্রবার পীরগঞ্জের তাহেরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্বপন মিনজি ওরফে মামুনকে গ্রেপ্তার করে বলে জানিয়েছেন রংপুর জেলা ডিবি ওসি মোবারক হোসেন। গ্রেপ্তারকৃত মামুন পীরগাছা উপজেলার সোম নারায়ন গ্রামের ফজলুর রহমানের পুত্র। ওসি জানান, আসামীকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
মামলা ও পারিবারিক সূত্র জানায়, রংপুরের মিঠাপুকুরের নৃগোষ্ঠী পল্লীর দশম শ্রেণির স্কুলছাত্রীর (চলতি বছরে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে পীরগাছার সোমনারায়ণ গ্রামের বুধু মিনজির ছেলে রতন মিনজি।
গত ১৮ এপ্রিল মোবাইল ফোনে দেখা করতে ওই ছাত্রীকে ডাকে রতন। ওই দিন বিকালে একই শ্রেণিতে পড়ুয়া চাচাতো বোনকে সঙ্গে নিয়ে ওই তরুণী ভগ্নিপতির বাড়ি পীরগাছায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। তারা রংপুর মহানগরীর মাহিগঞ্জে পৌঁছালে সেখানে আগে থেকে থাকা রতন ও তার দুই বন্ধু হযরত এবং মামুন দুই বোনকে কৌশলে একটি ভুট্টাক্ষেতে নিয়ে গণধর্ষণ করে।
এরপর তারা দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা কাউকে বলতে নিষেধ করে দেয়। গোপন না রাখলে তাদের জীবননাশের হুমকি দেয়। এতে ভীত হয়ে কাউকে কিছু না বলে ভগ্নিপতির বাড়ি যায় দুই বোন। সেখান থেকে পরের দিন তারা নিজ বাড়ি ফেরে।
এরপর ১৯ এপ্রিল বিকালে লজ্জা ও ক্ষোভে এসএসএসি পরীক্ষার ফলপ্রার্থী ওই তরুণী গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। বিষয়টি প্রথমে কেউ না জানলেও পরে ওই ছাত্রীর মোবাইল ফোনে প্রেমিক রতনের ছবি এবং তাকে উদ্দেশ্য করে লেখা ক্ষুদে বার্তায় আত্মহত্যার নেপথ্যের কারণ বেরিয়ে আসে।
পুলিশ এ ঘটনায় প্রথমে মামলা নিতে না চাইলে পরে ঘটনার পাঁচদিন পর ২৩ এপ্রিল আত্মহত্যা করা ওই তরুণীর বোন বাদী হয়ে রতন মিনজি, হযরত এবং মামুনের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, ওই তরুণী সুইসাইড নোট লিখে যায়। তাতে রতন মিনজির সঙ্গে তার পূর্বপরিচয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে। র্যাব ওই সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে। যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হবে।
বিএম/রনী/রাজীব