এসডিজি’র সব লক্ষ্য অর্জনে সংশয়

    বিএম ডেস্ক : টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ যেভাবে কাজ করছে তাতে ৫০টি সূচকের মধ্যে ২৬টি অর্জন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি।

    সংস্থাটি মনে করে, এসডিজির বড় ছয় অভীষ্টের ৫০টি সূচকের মধ্যে মাত্র ছয়টি সঠিক পথে রয়েছে। এ কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে সব লক্ষ্য পূরণ নাও হতে পারে।

    এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

    শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের গত চার বছরের কাজের ওপর ভিত্তি করে ‘ফোর ইয়ার্স অব এসডিজিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

    এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপে সভাপতিত্ব করেন।

    এসডিজির মোট ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা, ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং ২৩০টি ইন্ডিকেটর রয়েছে। ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার ছয়টি নিয়ে এ গবেষণা চালানো হয়। এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি মূল্যায়নে পর্যাপ্ত অর্থ ও তথ্য সংকটকে অন্যতম বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন এ দিন আয়োজিত একটি নাগরিক সংলাপের বক্তারা। এই নাগরিক সম্মেলনের অংশ নেওয়া পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানও বিষয়টি স্বীকার করেন।

    সম্মেলনে মূল প্রবন্ধে ফাহমিদা খাতুন বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নের চার বছর পার হলেও অগ্রগতি মূল্যায়নে এখনও বড় প্রতিবন্ধকতা তথ্যঘাটতি। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অধিকাংশ লক্ষ্য ও সূচকেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হতাশাজনক।

    মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, এসডিজির মোট ১৭ অভীষ্টের মধ্যে প্রধান ছয়টি বাস্তবায়নে ৬৮টি লক্ষ্য ও ৯৫টি সূচক বেঁধে দেওয়া হলেও বেশ কিছু লক্ষ্য ও সূচকে অগ্রগতির তথ্য বাংলাদেশে নেই।
    শিক্ষা, শোভন কর্ম, অসমতা, জলবায়ু, শান্তি ও ন্যায়বিচার এবং উন্নয়ন অংশিদারিত্বসংক্রান্ত ছয় অভীষ্টের মাত্র ৩৮টি লক্ষ্য ও ৫০টি সূচকের অগ্রগতির সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে।

    মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার হার ১৯৯৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩০ শতাংশ বেড়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নকালের তুলনায় এসডিজি সময়কালে শিক্ষার হার বেড়েছে।

    তবে শিক্ষা সমাপ্তি, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তি, স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ, প্রযুক্তি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করার মতো সূচকে আরও উন্নতি করতে হবে।

    ফাহমিদা বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থের সংকট। আরেকটা সংকট হলো তথ্যের অভাব। তথ্য না থাকলে আমাদের অগ্রগতি কতটুকু হচ্ছে, সেটা বিবেচনা করতে পারবো না।

    প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বৈষম্য কমানোর আগে দারিদ্র্য দূর করার বিষয়ে মত দেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণ। কিন্তু এ তিনটির মধ্যে যদি একটা রাখতে হয় তাহলে আমি রাখবো ‘দারিদ্র্য দূরীকরণ’। এটাকে আমি অগ্রাধিকারে প্রথম জায়গায় স্থান দেবো। স্বাস্থ্যসেবার অভাব, খাবারের অভাব, শিক্ষার অভাব— সবকিছুর মূলেই আমার মনে হয় দারিদ্র্য। দারিদ্র্য ব্যক্তিগতভাবে ও জাতিগতভাবে।

    এমএ মান্নান বলেন, আমাদের কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হতে পারে? বিশাল অর্থের প্রয়োজন, মাথা খারাপ হয়ে যায়। যেমন ২০৩০ সালের মধ্যে ৯২ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করতে হবে। তবে আমাদের আস্থা আছে, আমরা পারবো। অর্থায়নের পাশাপাশি তথ্য ঘাটতিও আরেকটি বড় সমস্যা বলে মন্তব্য করেন তিনি।

    বিএম/রনী/রাজীব