প্রেমিকের সঙ্গে হোটেলে স্কুলছাত্রী, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু

    মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় আবাসিক হোটেল থেকে ইন্নি আক্তার নামে নবম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

    ওই হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত প্রেমিক রুবেল খান ও আবাসিক হোটেলটির দুই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

    অভিযুক্ত রুবেল নিজেকে মেয়েটির প্রেমিক দাবি করছেন। তার ভাষ্য, যৌন উত্তেজক ওষুধ সেবনের পর দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের এক পর্যায়ে অশ্লীল যৌনাচারে নিহত ইন্নীর অতিরিক্ত রক্তক্ষণ দেখে তিনি পালিয়ে যান। পরে তার মৃত্যু হয়।

    গ্রেপ্তার রুবেলকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেওয়ার জন্য মাদারীপুর আদালতে নেওয়া হয়েছে। আবাসিক হোটেলটি বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

    এর আগে সোমবার দুপুরে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রেমিক রুবেলের অশ্লীল যৌনাচার ও ধর্ষণে ইন্নির অতিরিক্ত রক্তক্ষণে মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন।

    পুলিশসহ একাধিক সূত্রে জানা যায়, রোববার দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের ৭১ উৎসব আবাসিক হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রুবেল খান ও স্কুলছাত্রী ইন্নি আক্তার নিজেদের নাম পরিচয় গোপন রেখে তিন তলার ৩০৫ নম্বর রুমটি ভাড়া নেয়। বিকেলে হোটেলের কর্মচারীরা ওই রুমের সামনে গেলে রুমের দরজা খোলা দেখতে পান। এ সময় রুমের ভেতর উঁকি দিলে স্কুলছাত্রীকে একা রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন তারা। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাতে লাশ উদ্ধার করে।

    পরে পুলিশ হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে, স্কুলছাত্রীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে ও তার ব্যাগে থাকা ডায়েরি পড়ে নিশ্চিত হয় রুবেল খান নামে এক যুবকের সঙ্গেই মেয়েটি আবাসিক হোটেলে আসে। পরে পুলিশের একাধিক দল রুবেলকে গ্রেপ্তারে মাঠে নামে।

    শিবচর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমির হোসেন, উপপরিদর্শক (এসআই) খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে শিবচর থানা পুলিশের একটি দল কাঠালবাড়ি লঞ্চ ঘাট এলাকা থেকে লঞ্চ মালিক সমিতির সহায়তায় রোববার রাতে রুবেলকে আটক করে।

    রুবেল লঞ্চ ঘাটে সুপারভাইজার পদে চাকরি করতেন। তিনি শিবচর উপজেলার কাঠালবাড়ি ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকার তোতা খানের ছেলে।

    আর ইন্নী আক্তার শেখ ফজিলাতুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। সে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার পশ্চিম নাওডোবা মুন্সীকান্দি গ্রামের মৃত ইলিয়াস মুন্সীর মেয়ে। তার মা শিবচর উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের কর্মচারী। তারা শিবচর পৌরসভার স্বাস্থ্য কলোনীতে ভাড়া বাসায় থাকে।

    এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হোটেল ম্যানেজার খায়রুল, হোটেল বয় রোনাল্ডকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

    শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার আবির হোসেন, শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন, পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

    ঘটনাস্থল থেকে জন্মবিরতিকরণ ট্যাবলেটের প্যাকেটের শুন্য খোসা, কনডম ছাড়াও মেয়েটির স্কুল ব্যাগ থেকে বই-খাতা ও একটি ডায়েরি পাওয়া গেছে। ডায়েরিটিতে প্রেমঘটিত নানান কথা লেখা রয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলা করেছেন।

    স্কুল ছাত্রীটির এক সহপাঠী শুরুতেই ঘটনার সূত্র জানিয়ে ক্রন্দনরত অবস্থায় বলে, ‘ও রুবেলের সাথেই এখানে (হোটেলে) এসেছে। এর আগেও ও এখানে এসেছিল।’

    ওই স্কুলছাত্রীর মা বলেন, ‘আমার মেয়েকে রুবেল ধর্ষণ কইরা মাইরা ফেলছে। আমি ওর ফাসি চাই।’

    অভিযুক্ত রুবেল খান বলেন,’ ইন্নীর সাথে আমার প্রেম ছিল। আমরা মিথ্যা পরিচয় দিয়া হোটেলে উঠছি। শারীরিক সম্পর্কের একপর্যায়ে অনেক রক্তপাত দেইখা আমি ওরে থুইয়া পালাইছি’।

    শিবচর থানার ওসি জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল ইন্নির সাথে প্রেমঘটিত ও ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। আজও গর্ভনিরোধী পিল খাইয়ে ধর্ষণকালে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে সে পালিয়ে যায়। মামলার পর রুবেলকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীর জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে। আবাসিক হোটেলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

    মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার বলেন, ‘হোটেলে প্রেমিক রুবেল দ্বারা ধর্ষণের শিকার নিহত নবম শ্রেণির ছাত্রী ইন্নির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক রুবেল ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। ইন্নিকে গর্ভনিরোধী ওষুধ খাইয়ে ধর্ষণ করে রুবেল।’

    তিনি আরও বলেন, ‘রুবেলও যৌন উত্তেজক ওষুধ খায়। প্লেবয় স্টাইলে অশ্লীল যৌনাচার চালায় ইন্নির সাথে। এক পর্যায়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ইন্নি মারা গেলে কৌশলে হোটেল থেকে রুবেল পালিয়ে যায় বলে স্বীকার করেছে।’