মিয়ানমারে মুক্তি পেলেন রয়টার্সের সেই ২ সাংবাদিক

    মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন ভাঙার অভিযোগে দণ্ডিত রয়টার্সের ২ সাংবাদিক ৫১২ দিন কারাগারে কাটানোর পর মুক্তি পেয়েছেন।

    রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাজধানী ইয়াংগনের একটি কারাগার থেকে মঙ্গলবার সকালে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসেন সাংবাদিক ওয়া লোন (৩২) ও কিয়াও সোয়ে (২৮)। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাদের দুজনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

    তাদের দুজনকে আটকের ঘটনায় মিয়ানমারে গণতন্ত্রের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং মানবাধিকার আইনজীবীরা। ওই দুই সাংবাদিককে গ্রেফতার এবং কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। তার পরও নিজেদের সিদ্ধান্তে অনঢ় থেকে তাদের মুক্তি দেয়নি মিয়ানমার।

    গত মাসে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট নিজের ক্ষমতাবলে কয়েক হাজার বন্দিকে মুক্তি দেন। প্রতিবছরই দেশটি নববর্ষ উদযাপনকালে দেশব্যাপী বিপুলসংখ্যক বন্দিকে মুক্তি দিয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৭ এপ্রিল থেকে। এই প্রক্রিয়াতেই অন্যান্য বন্দিদের সঙ্গে মুক্তি পেলেন রয়টার্সের ওই দুই সাংবাদিক।

    তবে বরাবরই রয়টার্সের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ওই দুই সাংবাদিক কোনো অপরাধ করেননি। তারা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের সংবাদ সংগ্রহের জন্যই সেখানে গিয়েছিলেন। একই সঙ্গে বার বার তাদের মুক্তির দাবি জানানো হয়।

    ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের এক সন্ধ্যায় পুলিশ সদস্যদের আমন্ত্রণে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পর নিখোঁজ হন মিয়ানমারে কর্মরত রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে। পরে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দাফতরিক গোপনীয়তা আইন ভঙ্গের অভিযোগে তাদের গ্রেফতার দেখায়।

    রাখাইনের ইন দিন গ্রামে সেনা অভিযানের সময় রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যার ওপর অনুসন্ধান চালাতে গিয়েই মামলার কবলে পড়েন তারা।

    দুই সাংবাদিকের মুক্তির বিষয়ে মিয়ানমার সরকার ও রয়টার্সের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

    এক ভিডিওতে দেখা যায়, ইয়াঙ্গুনের কুখ্যাত ইনসেন কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তাঁদের ঘিরে ধরেন গণমাধ্যমকর্মীরা।

    রয়টার্সের প্রধান সম্পাদক স্টিফেন অ্যাডলার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিয়ানমার আমাদের সাহসী সাংবাদিকদের কারামুক্ত করায় দারুণ খুশি হয়েছি। ৫১১ দিন ধরে কারাবাস করা এই দুই সাংবাদিক সারা বিশ্বে গণমাধ্যম স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তাঁদের ফিরে আসাকে আমরা স্বাগত জানাই।’

    রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিকতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন মিয়ানমারের দুই রয়টার্স সাংবাদিক।

    ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হয় মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

    আরও বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন তারা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, ফরেইন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড, পেন/বারবেই ফ্রিডম টু রাইট অ্যাওয়ার্ড, ওসবর্ন এলিয়ট প্রাইজ, ওয়ান ওয়ার্ল্ড মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড, জেমস ফলে মেডিল মেডাল ফর করেজ ইন জার্নালিজম, আইআরই’র ডন বোলস মেডাল এবং ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবের আবুশন প্রেস ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড।

    বিএম/রনী/রাজীব