ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলায় সরকারের সার্বিক প্রস্তুতি

    ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে এমন আশঙ্কায় উপকূলজুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। উপকূলবাসীকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়।

    বুধবার (১ মে) ছুটির দিনে সচিবালয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানার পর কিছুটা দুর্বল হয়ে আগামী ৪ মে সকালে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় দেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে ও সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

    উপকূলীয় জেলাগুলোতে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম সমন্বয় ও জরুরি সাড়াদানের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ১ মে থেকে অব্যাহতভাবে অফিসে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

    দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ্ কামাল বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় আমাদের অফিস সব খোলা রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সিপিপি, স্কাউট ভলান্টিয়ার, আনসার-ভিডিপি, রেড ক্রিসেন্টসহ সব ভলান্টিয়ার রেডি রয়েছে।

    সচিব আরও বলেন, আমরা শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়ে দিয়েছি। ইতিমধ্যে সব জেলায় তা পৌঁছে গেছে। এখন আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।

    এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড় ফণি দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। সমুদ্র বন্দরগুলোকে চার (পুনঃ) চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

    আবহাওয়া অফিস থেকে আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি ৩ মে ওড়িশা উপকূল অতিক্রম হওয়ার কথা। এর প্রভাবে বাংলাদেশে পরদিন ৪ মে বৃষ্টিপাত হবে অনেক। ওড়িশা উপকূল অতিক্রমের পরই বলা যাবে বাংলাদেশে এর কেমন প্রভাব পড়ে।

    আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আরও সামান্য উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১,২৩৫ কি.মি., কক্সবাজার থেকে ১,১৯০ কি.মি. ও মংলা থেকে ১,০৯৫ কি.মি. ও পায়রা থেকে ১,১০০ কি.মি. দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর বা উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে বলে সতর্কবার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে। একই সাথে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

    এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে যাতে করে অল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।

    ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির বরগুনা অঞ্চলের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার সরদার গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের এলার্ট করা হয়েছে। কী কী করণীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। স্বেচ্ছাসেবকদের বলা হয়েছে তারাও সতর্ক আছে। পরিস্থিতির যদি অবনতি হয় তাহলে মাইকিংসহ লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে মাঠে নামার কাজও শুরু হবে।

    বিএম/রনী/রাজীব