বাংলাদেশে ফণীর আঘাত শনিবার দুপুরে

    ভারতীয় অংশ থেকে ঘূর্ণিঝড় ফণী অগ্রসর হতে হতে বাংলাদেশের স্থলভাগ খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া – এ অঞ্চল দিয়ে এর কেন্দ্রটি প্রবেশ করতে আরও ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় লাগবে।

    অর্থাৎ শুক্রবার রাত শেষে শনিবার (৪ মে) বেলা ১১টা অথবা ১২টার দিয়ে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রটি পৌঁছতে পারে। রাজশাহী ও রংপুর কেন্দ্রের আশপাশের অঞ্চল হিসেবেই পড়বে।

    শুক্রবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।

    ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে কতক্ষণ অবস্থান করবে জানতে চাইলে শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আগামীকাল (শনিবার) সারাদিন লেগে যাবে। বিকালের পরে হয়তো বাংলাদেশ অতিক্রম করে এটি আরও উত্তরে চলে যাবে।’

    ‘এটি প্রবেশের সময় ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই প্রবেশ করবে। ঘূর্ণিঝড় হিসেবে প্রবেশ করে, তারপর এটি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে শুরু করবে’- যোগ করেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক।

    তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রবেশের পর ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার।’

    ফণীর আঘাতে বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতি হলেও ভারতের তুলনায় কম হবে বলেও জানান শামসুদ্দিন আহমেদ।

    ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘দু-চারদিন আগে আমরা ঘূর্ণিঝড়ের যে ভয়াবহতা আশঙ্কা করেছিলাম, ভারতের স্থলভাগের ওপর দিয়ে না আসলে এর ক্ষয়ক্ষতি হয়তো আরও বেশি হতো। অন্যদিকে আমাদের প্রস্তুতি একেবারে পরিপূর্ণভাবে সম্পূর্ণ করা হয়েছে। সবাইকে সাইক্লোন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাটা সর্বোচ্চ পর্যায়ের রয়েছে। এ কারণে ক্ষতি সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। হয়তো বা একেবারে ক্ষতি হবেই না। শুধু ধানক্ষেতের ফসল যদি নষ্ট না হয়, তাহলে ক্ষতি হবেই না।’

    শুক্রবারের সারাদিনের অবস্থা বর্ণনা করে শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এর মধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছি, শুক্রবার সকাল থেকে সারাদেশেই প্রায় হালকা থেকে মাঝারি আকারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এখন সারা বাংলাদেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার রিপোর্ট এখনও আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। তবে মোংলায় শুক্রবার সকাল বেলার দিকে সর্বোচ্চ ৩৭ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে গেছে।’

    ফণীর গতিপথ বর্ণনা করে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক বলেন, ‘সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ফণী আজ সকাল ৯টায় ভারতের উড়িশা উপকূল অতিক্রম করেছে। উপকূল অতিক্রম করার সময় ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। উপকূল অতিক্রম করার পর এটি ধীরে ধীরে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকে।’

    ‘গত ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা যেভাবে ফণী এগিয়েছে, তাতে প্রতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার করে অগ্রসর হয়েছে।’

    ‘এটি স্থলভাগের ওপর দিয়েই বাংলাদেশের যশোর, কুষ্টিয়া- এ অঞ্চল দিয়ে কেন্দ্রটি উত্তর দিকে চলে যাবে। ঘূর্ণিঝড়টির ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ বর্তমানে ১০০ কিলোমিটার।’

    ‘ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে খুলনা এবং দেশের পশ্চিমাঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মুহূর্তে আমাদের ইস্টিমেট অনুসারে, স্বাভাবিক জোয়ারের চাইতে ২ থেকে ৪ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।’

    ‘খুলনা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা – এ অঞ্চলগুলো এখনও ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় রয়েছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় রয়েছে।’

    বিএম/রনী/রাজীব