বিমানের দুই শতাধিক কর্মীকে দুদকে তলব করা হতে পারে

    বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিভিন্ন শাখায় দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এখন দুদকের নজরদারিতে। ইতিমধ্যেই সদ্যবিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ১০ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

    দুদক সূত্র জানায় ইতিমধ্যে সংস্থার চারটি দলকে বিমানের বিভিন্ন শাখার দুর্নীতির অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলগুলো প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির পাশাপাশি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তদের সম্পদেরও অনুসন্ধান করবে। ইতিমধ্যে দলগুলো তথ্য সংগ্রহসহ বিভিন্ন কাজে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। বিমানের অন্তত ২০০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হতে পারে বলে দুদক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করাও হয়েছে।

    গত ৩ মার্চ বিমান নিয়ে দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক দলের যে প্রতিবেদন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর কাছে হস্তান্তর করা হয় তাতে বিমানের দুর্নীতির ৮ খাতকে চিহ্নিত করা হয়। এতে বলা হয়, এ দুর্নীতির লাগাম টেনে না ধরলে এ প্রতিষ্ঠানটি মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। প্রতিবেদনে যে আটটি খাতকে চিহ্নিত করা হয় সেগুলো হলো এয়ারক্রাফট কেনা ও ইজারা নেওয়া, রক্ষণাবেক্ষণ-ওভারহোলিং, গ্রাউন্ড সার্ভিস, কার্গো আমদানি-রপ্তানি, ট্রানজিট যাত্রী ও লে-ওভার যাত্রী, অতিরিক্ত ব্যাগেজের চার্জ আত্মসাৎ, টিকিট বিক্রি ও ক্যাটারিং খাতের দুর্নীতি।

    দুদকের উচ্চপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবেদন তৈরির সময় দুর্নীতির বড় চিত্র দুদকের নজরে আসে। অনেক তথ্য প্রমাণও হাতে আসে। প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। সবাই এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর জোর দেন। দুদকও এ বিষয়ে জোরদার ভূমিকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

    ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ঘুষ নিয়ে ক্যাডেট পাইলট নিয়োগসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান করছেন সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম। গত ২ মে ১০ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন। এসবির বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) এবং শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ওসি (ইমিগ্রেশন) বরাবর চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়।

    যাঁদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন, বিমানের সদ্য পদত্যাগী এমডি আবদুল মুনীম মোসাদ্দিক আহম্মেদ, জুনিয়র গ্রাউন্ড সার্ভিস অফিসার–বিমান শ্রমিক লীগের সভাপতি ও বিমানের সিবিএ নেতা মশিকুর রহমান, গ্রাউন্ড সার্ভিস সুপারভাইজার জিএম জাকির হোসেন, মিজানুর রহমান ও এ কে এম মাসুম বিল্লাহ, কমার্শিয়াল সুপারভাইজার রফিকুল আলম ও গোলাম কায়সার আহমেদ, জুনিয়র কমার্শিয়াল অফিসার মারুফ মেহেদী হাসান এবং কমার্শিয়াল অফিসার জাওয়েদ তারিক খান ও মাহফুজুল করিম সিদ্দিকী। এই দশ জনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

    সূত্রমতে, দুদক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম এরই মধ্যে পাইলট নিয়োগ সম্পর্কিত কিছু নথি সংগ্রহ করেছেন। আরও কিছু নথির অপেক্ষায় আছেন তিনি। নথি পাওয়ার পরপরই এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হতে পারে। দুদকের এই কর্মকর্তার হাতে বিমানের কারগো ও গ্রাউন্ড সার্ভিসের ৩৭ জনের সম্পদের অনুসন্ধান রয়েছে। এদের সবাই বিমানের সিবিএ সংশ্লিষ্ট। শিগগিরই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হতে পারে।

    দুদকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিমানের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা লোপাটের একটি অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে বিমানের পরিচালক (বিপনন) আলী আহসান বাবু, শফিকুর রহমান, মোমিনুল ইসলাম ও মহাব্যবস্থাপক (জিএসই) তোফাজ্জল হোসেন আকন্দের বক্তব্য নিয়েছেন দুদকের সহকারী পরিচালক সালাহ উদ্দিন। কমার্শিয়াল অফিসার মাহফুজুল করিম সিদ্দিকী ও তার স্ত্রীর সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। মাহফুজুল সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন দুদকে। অন্যদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এঁদের সবার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগও অনুসন্ধান চলছে।

    সূত্র আরও জানায়, বিমানের সদ্য পদত্যাগী এমডি আবদুল মুনীম মোসাদ্দিক আহম্মেদসহ অন্য কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও প্রকল্পের দুর্নীতি খোঁজার দায়িত্ব পেয়েছেন দুদকের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম। আরেক সহকারী পরিচালক সালাহ উদ্দিনকেও এই দলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

    বিমানের কার্গো হ্যান্ডেলিং চার্জের ৭২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন উপপরিচালক নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল। গত ১০ বছরে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে অভ্যন্তরীণ তদন্তে কার্গো শাখায় ৪১২ কোটি টাকা লোপাটের তথ্য বেরিয়ে আসে। চিঠি দিয়ে ওই তদন্ত প্রতিবেদন এবং সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেছে দুদক।

    সূত্র জানাচ্ছে, ইতিমধ্যে ১৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। আরও অন্তত ৬০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। অভিযোগসংশ্লিষ্ট এসব ব্যক্তিকে দুদকে তলবের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানা গেছে।

    অনিয়ম দুর্নীতির আরেকটি অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন দুদকের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমানকে। এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে তিনি। পছন্দসই কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিয়ে নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন- এমন একাধিক বোর্ড পরিচালককেও অনুসন্ধানের আওতায় আনার কথা রয়েছে। তবে সূত্র জানাচ্ছে, নাসির উদ্দিন ও আতাউর রহমান যে অনুসন্ধান করছেন তার ধরন অনেকটাই একই রকম। তাই কমিশনের অনুমোদন পেলে দুটি অভিযোগ একসঙ্গে অনুসন্ধানের সম্ভাবনা রয়েছে।

    বিমান, বিমানের যন্ত্রাংশ, গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং যন্ত্রাংশের বড় অঙ্কের কেনাকাটা এবং বিমান লিজের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি হয়ে থাকে বলে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। কম্পিউটার-নেট সর্বস্ব কিছু মধ্যস্বত্বভোগী প্রতিষ্ঠান এ সব কেনাকাটায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিমানের সঙ্গে লিয়াজোঁ করার নামে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পরিচালনা পর্ষদের কিছু সদস্যকে অনৈতিকভাবে যুক্ত করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। বড় অঙ্কের অর্থ লগ্নি করে এ সব ফার্ম দরপত্রের স্পেসিফিকেশন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এমনভাবে নির্ধারণ করে যাতে পছন্দসই কোম্পানি কাজ পায়। প্রাক্কলিত মূল্য প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দেখানোর ব্যবস্থা করে নেয়। ফলে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ২ থেকে ৩ গুন বেশি দামে কিনতে হয়।

    বিমান লিজের ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগী ফার্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এমন শর্তে লিজ নেওয়া হয়,যাতে বাংলাদেশ বিমানকে হাজার কোটি টাকা লোকসান শুনতে হয়। ইঞ্জিনের মেজর চেক-সাইকেল, মেয়াদপূর্তি ইত্যাদি হিসেবে না নিয়ে বিমান লিজ নেওয়ার কারণে এর আগে মেয়াদ শেষে হাজার কোটি টাকা দিয়ে নতুন ইঞ্জিন প্রতিস্থাপন করে বিমান ফেরত দিতে হয়েছিল। সুচতুরভাবে দরপত্র আহ্বান করা হয়, যখন ভালো কোম্পানির হাতে লিজ দেওয়ার মতো বিমান থাকে না। বাধ্য হয়ে বেশি দামে অসাধুদের পছন্দের কোম্পানি থেকে নিম্নমানের বিমান লিজ নিতে হয়। এসব বিষয়ে প্রতিবছর অভ্যন্তরীণ ও সরকারি নিরীক্ষা দল আপত্তি দিলেও শেষ পর্যন্ত তা অনিষ্পন্নই থেকে যায়।

    দুদক বলছে, বিমান এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং ইকুইপমেন্ট রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনাকাটায় শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি হয়ে থাকে। বিমানের বোর্ড পরিচালক ও কর্মকর্তারা লাভবান হওয়ার জন্য তাদের পছন্দসই প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগ করে কার্যাদেশ দেয়। নিম্নমানের যন্ত্রাংশ অতি উচ্চ মূল্যে ক্রয় দেখিয়ে ঠিকাদার ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদক জেনেছে। এ ছাড়া বিমান সি-চেকের জন্য তাদের পছন্দসই বিদেশি প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে অতি উচ্চ মূল্যের বিল দেখিয়ে ভাগাভাগির মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলেও দুদক বলেছে।

    দুদকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, বিমানের দুর্নীতির অন্যতম খাত হলো গ্রাউন্ড সার্ভিস। ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে উচ্চমূল্যে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি কেনা হয়। অদক্ষতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না কিনে অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা হয়। ওই সব যন্ত্রপাতির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। রক্ষণাবেক্ষণের মূল্যবান উপকরণও বিক্রি করে আত্মসাৎ করা হয়। ফলে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে যন্ত্রপাতি নির্ধারিত সময়ে আগেই অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে নতুন করে কেনাকাটা করতে গিয়ে দুর্নীতি করার নতুন সুযোগ তৈরি হয়।

    অন্যদিকে, আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং কর্মী নিয়োগেও চলে ব্যাপক দুর্নীতি। এতে দিনদিন বাংলাদেশ বিমান অদক্ষ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলারে পরিণত হয়েছে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং বিল বাবদ বিভিন্ন এয়ারলাইন থেকে প্রতিদিন ফ্লাইট-টু-ফ্লাইট ভিত্তিতে লাখ লাখ টাকা বিল নেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বিভিন্ন এয়ারলাইন তাদের নিজস্ব উদ্যোগে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের অধিকাংশ কাজ করে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন চুক্তি অনুযায়ী এয়ারলাইনগুলোকে ন্যূনতম সেবাও দিতে পারে না। এতে বহু বিদেশি এয়ারলাইন বাংলাদেশে অপারেশন পরিচালনা করতে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে। অনেক এয়ারলাইন ইতিমধ্যে ঢাকায় তাদের অপারেশন বন্ধ করে দিয়েছে।

    দুদক বলছে, বিমানের আয়ের একটি বড় খাত কার্গো সার্ভিস। এই খাতে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কোটি কোটি টাকা এয়ারওয়ে বিল কম পাচ্ছে বিমান। অনেক সময় বিমানের কার্গো সার্ভিসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী আমদানি-রপ্তানিকারকদের যোগসাজশে ওজনে কম দেখিয়ে আবার কখনো একক পরিবর্তন করে (টন কে ফিফটি, সিএফসি কে টন) কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করছেন। আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের ওজন ও ভলিউম রেকর্ডভিত্তিক কম দেখিয়েও বেশি পরিমাণ মালামাল বিমানে ওঠানো হয়। এই অতিরিক্ত টাকা আমদানি-রপ্তানিকারকের সঙ্গে ভাগাভাগি করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে।

    ট্রানজিট যাত্রীদের হিসেব এদিক-সেদিক করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। প্রতিদিন ট্রানজিট যাত্রীর সংখ্যা যতজন হয়, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দেখিয়ে খাবারের বিল করে অতিরিক্ত টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। লে-ওভার যাত্রীদের জন্য নিয়ম অনুযায়ী হোটেলের প্রতি রুমে একজন রাখার কথা। কিন্তু বাস্তবে প্রতি রুমে ৪/৫ জন রাখা হয়। আর বিল তৈরি করা হয় জনপ্রতি। অনেক ক্ষেত্রে প্রাপ্যতা অনুযায়ী যাত্রীদের খাবার ও হোটেল দেওয়া হয় না। কিন্তু যথারীতি বিল করে অর্থ উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করা হয়।

    দুদক বলছে, অতিরিক্ত ব্যাগেজের জন্য যাত্রীর কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে তা মূল হিসাবে না দেখিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। যাত্রীদের বুকিং ট্যাগ এবং ফ্লাইট ডিটেইলে অতিরিক্ত ওজন দেখানো হয় না।

    দুদকের পর্যবেক্ষণের তথ্যমতে, প্রায়ই বাংলাদেশ বিমানের টিকিট পাওয়া না গেলেও বাস্তবে বিমানের আসন খালি যায়। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য এয়ারলাইনসের সঙ্গে যোগসাজশে অন্য এয়ারলাইনসকে টিকিট বিক্রির সুবিধা করে দেওয়া হয়। বিনিময়ে বিমানের কর্মকর্তারা কমিশন পান।

    খাবারের ক্ষেত্রও ব্যাপক দুর্নীতির কথা বলেছে দুদক। নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের কারণে অনেক দেশি বিদেশি বিমান বিমানের ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টার (বিএফসিসি) খাবার দেয় না। এই খাতে বিমান কোটি কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে। অন্যদিকে ঢাকার নামী দামি হোটেল থেকে বিএফসিসি থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার খাবার বিক্রি করে আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

    এসব অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানের ক্ষেত্র আরও বাড়বে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে। বিমান সম্পর্কিত দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক দলের প্রধান সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। তিনি সবগুলো অনুসন্ধানেরই তদারককারী কর্মকর্তা।

    বিএম/রনী/রাজীব