৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ

    দেশের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের সুরক্ষায় সরকার আরো কঠিন অবস্থানে গেলো। এ জন্য বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইলিশের জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর সফল হওয়ায় এই পথে এগুচ্ছে সরকার।

    আগামী ২০ মে থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। শেষ হবে চলতি বছরের ২৩ জুলাই। এরই মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য -২ (আইন) অধিশাখা এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনটিতে ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরের মাছ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

    এই দীর্ঘসময় বঙ্গোপসাগরের কোনো স্থানেই যান্ত্রিক এমনকি ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকা দিয়েও মাছ আহরণ করা যাবে না। শুধু বঙ্গোপসাগর নয় বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া এবং মহেশখালী মোহনাও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। ফলে উল্লিখিত এলাকাগুলোতে কোনো ট্রলার কিংবা দাঁড়বাহী নৌকা মাছ ধরতে গেলেই আইনি ঝামেলার মুখোমুখি হতে হবে।

    অদূর ভবিষ্যতে বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদকাল ছয় মাস পর্যন্ত গড়াতে পারে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণের পেশায় নিয়োজিত মাঝি-মাল্লারা ছয় মাস মাছ ধরতে পারবেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

    এদিকে, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধের কারণে যাতে সাধারণ মাঝি-মাল্লারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকেও নজর দিচ্ছে সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত মাঝি-মাল্লাদের পরিবারকে ভিজিএফ কার্ড দেওয়া হবে। যে কার্ডের মাধ্যমে তাঁরা সরকারের কাছ থেকে রেশনিং সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া নানা সহায়তা দেওয়া হতে পারে। যাতে তাঁরা মাছ ধরতে না গিয়ে সাগরের মৎস্য ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করেন।

    জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা মৎস্য অফিসের তৈরি করা তালিকায় বর্তমানে জেলে রয়েছেন প্রায় ৪৪ হাজার জন। যাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জেলে আছে মহেশখালী উপজেলায়। এই জেলার প্রায় সাড়ে ১১ হাজার জেলে মৎস্য অফিস কর্তৃক নিবন্ধিত। অন্যদিকে সবচেয়ে কম জেলে রয়েছে রামু উপজেলায়। এই উপজেলার দুই হাজারের বেশি মানুষ সাগরে মাছ আহরণকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। নিবন্ধিত এসব জেলেদের মধ্যে থেকে বাছাই করে অপেক্ষাকৃত প্রায় ১০ হাজার জেলেকে দেওয়া হবে ভিজিএফ কার্ড।

    উল্লিখিত জেলের বাইরেও কক্সবাজার জেলায় অনেক জেলে রয়েছেন, যারা মৎস্য অফিস কর্তৃক নিবন্ধিত নন। মৎস্য অফিসে নিবন্ধিত না হওয়ায় তাঁরা ভিজিএফের আওতায় আসবেন না।

    এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকতা এস. এম খালেকুজ্জামান বলেন, ভারত, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কাতেও সাগরের মৎস্য আহরণের ওপর এই ধরনের আইন রয়েছে। এর আগে জাটকা নিধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় ইলিশের প্রজনন হার বেড়েছে। এই অভিযানেও অবশ্যই সফলতা আসবে।

    এই দীর্ঘ সময়ে মানুষ কিভাবে সাগরের মাছ খাবে এমন প্রশ্নের জবাবে এস. এম খালেকুজ্জামান বলেন, সাগরের মাছে যে পুষ্টিগুণ রয়েছে, নদী এবং পুকুরের মাছের পুষ্টিগুণও প্রায় একই। তাছাড়া বাংলাদেশের মাত্র দুই ভাগ মানুষ সাগরের মাছ খাওয়ার সুযোগ পান। ফলে এই নিষেধাজ্ঞা দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ফেলবে না। বরং এদেশের সামুদ্রিক মৎস্যসহ সমুদ্রের অন্যান্য জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।

    বিএম/রনী/রাজীব