বোয়ালখালী প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানা হাজতে রিকশা চালক মো. ইউছুপ অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ। ১২ মে রোববার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আফরুজুল হক টুটুলকে প্রধান করে তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করেন চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা। তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটিকে সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পটিয়া সার্কেল) জসিম উদ্দিন খান ১১ মে শনিবার রাতে বোয়ালখালী থানা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ঘটনা সর্ম্পকে বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলেন বলে থানা সুত্রে জানা গেছে।
জায়গা জমির বিরোধের জেরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা পূর্ব গোমদন্ডী পাল পাড়ায় প্রতিবেশিদের সাথে মো. ইউছুপ ও তার পরিবারের সাথে মারামারির ঘটনা ঘটে ৮ মে সন্ধ্যায়। এতে ৭ জন আহত হন। এসময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ মো.ইউছুপ ও তার ছেলে সেলিমকে আটক করে।
আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হলেও মনোতোষ পাল (৫০) এর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মারামারি ঘটনায় ৯ মে থানায় ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন শিমুল পালের স্ত্রী তানিয়া পাল। তবে পুলিশ দালালদের আশ্বাসে আপোষের চেষ্টা চালিয়ে মামলা নিতে গড়িমসি শুরু করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোয়ালখালী থানার এক কর্মকর্তা জানান, মারামারির ঘটনায় এক পক্ষের মামলা নিলে অপর পক্ষেরও মামলা নিতে হবে বলে দাবি করে বসে দালালরা। অন্যথায় আটককৃতদের ছেড়ে দিতে হবে বলে চাপ সৃষ্টি করে একটি মহল। তাদের বিষয়ে থানার সিসিটিভি ও সংশ্লিষ্ট অফিসারের মোবাইল রেকর্ডে বেরিয়ে আসবে বলেও জানান তিনি। ফলে বিষয়টি মীমাংসার প্রস্তাবে দীর্ঘয়িত হয়ে যায়।
এর মধ্যে বিষয়টি দীর্ঘায়িত হয়ে পড়ায় ও ১১ মে দুপুরে ইউছুপকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে এ ইস্যুকে কাজে লাগায় একটি পক্ষ। ওই দিন আটককৃত মো, ইউছুপের ছেলে মো. সেলিমকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোর্পদ করে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানায়, পূর্ব গোমদন্ডী বহদ্দার পাড়ার আবদুল মজিদের ছেলে মো. ইউসুফ মিয়া (৪৫) পেশায় একজন রিকশা চালক। তিনি গত একদশক আগে পালপাড়ায় চার শতক জায়গা ক্রয় করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।
প্রতিবেশি সুবোধ পাল (৬৫) চট্টগ্রাম কলেজের অবসর প্রাপ্ত মালি ও তার ছেলে শিমুল পাল (৩৪) পেশায় একটি কোম্পানীর সেলসম্যান। মনোতোষ পাল (৫০) পেশায় দর্জি, মৃদুল পাল (৬০) উপজেলা সদরে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন ও তার ছেলে খোকন পাল (২৩) সেলুনের কর্মচারী। এ ছাড়া বাকী পরিবারগুলো খালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।
অত্যন্ত দরিদ্র শ্রেণীর পরিবারগুলো দিনে এনে দিনে খায়। বাড়ি ঘরের অবস্থাও জরাজীর্ণ। তাদের ঝগড়াঝাটির তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে কারোরই রাজনীতি করাটা উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন এলাকাবাসী।
১১ মে শনিবার দুপুরে থানা হাজতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মো. ইউছুপকে একদিন পর রোববার বিকেলে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। মো. ইউছুপের স্ত্রী জরিনা বেগমের দায়ের করা মামলায় আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
আসামীরা ঘরে তালাবদ্ধ করে পলাতক রয়েছে জানিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই তাজ উদ্দীন বলেন, আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বিএম/পুজন সেন/রাজীব..