চাপাতার এক উপাদানেই ৫ বিদেশি মোড়ক
    গ্রামের কারখানায় তৈরি হচ্ছে বিদেশি পণ্য, রুহুল আমিনের কাছে ধরা

    রাজীব সেন প্রিন্স :

    চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ধলই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বালুর টাল এলাকায় অবস্থিত ৮ফুট বাই ১৫ ফুটের একটি রুম। আয়তনে খুব ছোট হলেও এইরুমেই রয়েছে অনেক গুনীজন। বিশ্ববিখ্যাত নামি দামি অনেক ব্র্যান্ডের পণ্য তৈরি হয় ছোট্ট এই রুম থেকেই।

    কি নেই এই রুমে? এখানেই উৎপাদন হয় বিশ্ব বিখ্যাত কয়েকটি ব্র্যান্ডের চা পাতা। চোখ ধাঁধানো রঙ্গিন মোড়কের পরিবর্তণ হলেও প্যাকেটের ভেতর উপকরণ কিন্ত একই। তবে বাজারজাত হয় ভিন্ন ভিন্ন দামে।

    শুধু চা পাতাই নই, এই ছোট্ট রুমের গুনী কারিগরদের হাতের যাদুতে সেখানে তৈরি হচ্ছে বিদেশি ব্র্যান্ডের রান্নার মসল্লা, হালিম ও পায়েস মিক্স, সয়াবিন, ভেজিটেবল ও সরিষার তৈল, বাঘাবাড়ি ঘি, ঝালমুড়ি, দাঁতের মাজন, মোল্লার বোম্বাই সুইটসসহ আরো কত কি?

    অসাস্থ্যকর পরিবেশে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সব ভেজাল উপকরণে ছোট্ট ঘরে ২৮ ধরনের পণ্য তৈরি করে স্বল্প সময়ে বেশ অর্থ উপার্জন সম্ভব হলেও শেষ রক্ষা হয়নি জনৈক আব্দুল ও তার গেঁয়ো কারখানার প্রতিভাবান কারিগরদের তৈরি পণ্যগুলো।

    উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.রুহুল আমিনের কাছে ধরা পড়েছে ভেজাল সব পণ্য। মঙ্গলবার সকাল সাড় ১০ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভেজাল বিরোধী অভিযান চলাকালে এমন গুনী প্রতিভাবান বিদেশি পণ্যের কারখানাটির আবিস্কার করেন রুহুল আমিন।

    অভিযান চালিয়ে ৮ফুট বাই ১৫ ফুটের ঘরটি থেকে ৫ ধরনের চা পাতা, ৬ টি বিদেশি ব্র্যান্ডের নামকরণে মসল্লা, পায়েস ও হালিম মিক্স, সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, ভেজিটেবল ওয়েল, বাঘাবাড়ি ঘিসহ ২৮ টি উৎপাদিত পণ্য ও মোড়ক জব্দ করা হয়।

    অভিযানের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, গোপন সূত্রে গ্রামের ভেতরে এমন প্রতিভাবান বিদেশি পণ্যের কারখানার সন্ধান পেয়ে পরিদর্শণে যায়।

    সরেজমিনে গিয়ে দেখি মাত্র ৮ ফুট বাই ১৫ ফুট আয়তনের একটা ছোট্ট ঘরে দেশি বিদেশি প্রায় ২৮ টি পণ্য উৎপাদন এবং প্যাকেটজাত করা হচ্ছিল এই কারখানায়।

    সিলন চা,মির্জাপুর চা,রাধুনি সরিষা তেল,রাধুনি হালিম মিক্সড, রাধুনি পায়েস মিক্সড সহ বিদেশি নানান ব্রান্ডের নকল পণ্য বানানো হচ্ছিল এই কারখানায়, এছাড়াও নানান কেমিকেল দিয়ে বানানো হচ্ছিল ট্যাং আদলে ড্রিংকস, ৫ আইটেমের ঘি।

    পুরনো নিম্নমানের চা এবং মসলাই মূলত প্যাকেট জাত করা হচ্ছিল নানান ব্রান্ডের। মসলার বস্তা ইদুরে কেটে আগেই গর্ত করে রেখেছে উপকরনের। আর সেগুলো দিয়েই বিদেশি ব্রান্ডের মোড়কে ঢুকানোর জন্য রয়েছে সব প্রস্তুতি।

    রুহুল আমিন জানান, অন্য কোন ইউনিয়নের জনৈক ফিরোজের ছেলে আব্দুল নামের কোন ব্যক্তি উপজেলার ধলই ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বালুর টাল এলাকার ঘরটি ভাড়া নিয়ে এসব নকল ও ভেজাল পণ্যের কারখানাটি তৈরি করেছে।

    তবে অভিযানের খবর পেয়ে কারখানায় তালা লাগিয়ে প্রতিভাবান কারিগরদের নিয়ে পালিয়ে যায়। তালা ভেঙ্গে প্রায় এক টন ভেজাল, নকল এবং নিম্নমানের চা এবং মসলা জব্দ করা হয়।

    জব্দকৃত নিম্নমানের মালামাল ধ্বংস করা হবে জানিয়ে রুহুল আমিন বলেন, মালিকের সঠিক পরিচয় ও ঠিকানা সনাক্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স..