সার্ভার ত্রুটিতে টিকিট প্রত্যাশীদের সাময়িক ভোগান্তি
    চট্টগ্রামে ১ম দিনের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট : সকালে দীর্ঘলাইন দুপুরে ফাঁকা (ভিডিও)

    রাজীব সেন প্রিন্স : চট্টগ্রামে ১ম দিনের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বুধবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়েছে। বুধবার দেয়া হয়েছে আগামী ৩১ মে’র টিকিট। নির্ধারিত তারিখের জন্য মোট ৭ হাজার ৪১টি টিকিটের মধ্যে অর্ধেক অ্যাপ এর মাধ্যমে অনলাইনে আর বাকি ৩ হাজার ৭শ ৫৯ টি টিকিট কাউন্টারে বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

    আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সকাল ৯টায় থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হলেও নাড়ির টানে ঘরে ফেরার জন্য গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকেই স্টেশনে জড়ো হতে থাকেন টিকিট প্রত্যাশীরা। আর তাই চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের কাউন্টারে ছিল টিকিট প্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড়।

    বুধবার সকাল সোয়া ৯টার সময় চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৯টায় টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পরপরই কাউন্টারের সার্ভারে ত্রুটি দেখা দিলে যাত্রীদের ভোগান্তি আর অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এসময় পুরো স্টেশন জুড়ে টিকিট প্রত্যাশীদের হৈই ছৈই আর ছুটোছুটি করতে দেখা যায়।

    সেহেরি খেয়ে ভোররাতে ৩১ মে’র অগ্রিম ট্রেনের টিকিট ক্রয় করতে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে এসেছেন মিনহাজ উদ্দিন। তিনি তার পরিবারের ৪ সদস্যকে আগে ভাগে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়ার উদ্দ্যেশে তুর্ণা নিশিতার টিকিট ক্রয় করতে আসেন। লাইনের মাত্র ১২ জন পরেই ছিল তার অবস্থান। সকালে যখন টিকিট বিক্রি শুরু হয় তখন ভেবেছেন টিকিটটি সংগ্রহ করে তিনি অফিস করতে পারবেন। কিন্তু লাইনের ধীরগতি আর গরমের যন্ত্রণা তার ধৈর্য্যরে বাধ ভেঙ্গে দিচ্ছে।

    একই অবস্থা নগরীর হালিশহর থেকে আসা খদিজা বেগমের। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে তিনি সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। তারও অভিযোগ লাইন সামনে আগায় না। প্রায় টিকিট প্রত্যাশী অপেক্ষমান সকলের অভিযোগ একই সমস্বরে ভেসে উঠে স্টেশনে। এসময় সকলে মিলে পুরো রেলস্টেশন জুড়ে হৈইচৈই ও বিশৃঙ্খলা শুরু করে।
    খবর পেয়ে রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজর আবুল কালাম আজাদসহ রেলের অন্যান্য উদ্ধতন কর্মকর্তারা এসে কাউন্টারে গিয়ে দেখেন একজন যাত্রী টিকিট সংগ্রহ করতে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগছে। পরে তারা জানিয়েছে সার্ভারে সামান্য ত্রুটির কারণে সমস্যা হচ্ছে।

    তবে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের তড়িৎ তৎপরতায় খুব স্বল্প সময়েই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। ফলে টিকিট বিক্রির প্রথম দিনে চট্টগ্রামের ৭টি কাউন্টারেই সকাল থেকে দীর্ঘ লাইন দেখা গেলেও দুপুরে এসে তা অনেকখানি ফাঁকা হয়ে যায়। তাছাড়া বড় কোন বিশৃঙ্খলা ছাড়াই প্রথম দিনের টিকেট বিক্রি কার্যক্রম চলে। টিকেট হাতে পেয়ে খুশির কথা জানান টিকিট প্রত্যাশীরাও।

    চট্টগ্রাম স্টেশন ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ জানান, কাউন্টারে সুন্দরভাবে টিকিট বিক্রি কার্যক্রম তদারকির জন্য কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকটি টিম ভেতরে এবং বাইরে কাজ করছে। পাশাপাশি জেনারেল ম্যানেজার, জিআরওসহ রেলওয়ের উদ্ধতন কর্মকর্তারা সেগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন। এছাড়া ৫৭টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে স্টেশনের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে।

    যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করতে এবং টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে প্রস্তুত জানিয়ে এবার পুরো স্টেশন জুড়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। বলেন, টিকেট কালোবাজারী রোধে রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী, জিআরপি, আর্ম ব্যাটেলিয়ান, র‌্যাব ও ডিবি পুলিশসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা সার্বিক নজরদারিতে রয়েছেন।

    রেলওয়ে সূত্র জানা যায়, আগামী ৫ জুন ঈদের সম্ভাব্য দিন ধরে নিয়ে দশদিন আগে থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রির দিন ধার্য করা হয়েছে। আর ঈদের পূর্বের পাঁচদিন আপ ঈদের পরবর্তী ছয়দিনকে ডাউন হিসেবে ঈদের টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। বুধবার (২২ মে) প্রথম দিন দেয়া হচ্ছে ৩১ মে’র অগ্রিম টিকিট। ২৩ মে দেওয়া হবে ১ জুনের, ২৪ মে দেওয়া হবে ২ জুন, ২৫ মে দেওয়া হবে ৩ জুনের টিকিট এবং ২৬ মে দেওয়া হবে ৪ জুনের টিকিট। এছাড়া ঈদ শেষে ফিরতি যাত্রীদের জন্য ২৯ মে দেওয়া হবে ৭ জুনের টিকিট, একইভাবে ৩০ ও ৩১ মে এবং ১ ও ২ জুন দেওয়া হবে যথাক্রমে ৮, ৯, ১০ ও ১১ জুনের টিকিট।

    ভিডিও লিংক :

    রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক আহমদ বলেন, চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের বাইরে কালোবাজারি রোধে বিশেষ ব্যবস্থার পাশাপাশি ভেতরে টিকিট কাউন্টারগুলোতেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তিনি জানান, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল থেকে প্রতিদিন ১২ হাজার টিকিট দেওয়া হবে। তারমধ্যে চট্টগ্রাম-ঢাকাগামী টিকেট বিক্রি হবে ৭৪৪১ এবং বাকীগুলো বিভিন্ন রুটে। রেলওয়ের অ্যাপসে ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ৬ হাজার টিকিট এবং বাকি ৬ হাজার টিকিট রেল স্টেশনে দেওয়া হবে। টিকেট সংগ্রহ করার জন্য যাত্রীকে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র আনতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

    বিএম/রাজীব সেন..