নুসরাত হত্যা : মামলার বাদী ও আইনজীবীকে হুমকি

    ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার ২১ আসামিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে হাজির করা হয়।

    এর আগে প্রিজন ভ্যান থেকে নামানোর পর কোর্ট হাজতে নেয়া ও আদালতে উপস্থিত করার সময় আসামিরা মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান ও বাদীপক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খোকনকে অকথ্য গালাগাল ও নানা হুমকি-ধমকি দেন।

    বৃহস্পতিবার ছিল আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলার ধার্য তারিখ। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন মামলাটি পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠান। মামলার পরবর্তী তারিখ ১০ জুন ধার্য করা হয়েছে।

    বাদী পক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খোকন সাংবাদিকদের বলেন, আজকে আদালত প্রাঙ্গণে আপনারা দেখেছেন আসামিরা কেমন সন্ত্রাসী তারা কাস্টডি থেকে বের হওয়ার সময় এজহারকারী ও বাদী পক্ষের আইনজীবীদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছে। পারলে তারা আজকেই আমাদেরকে সেখানেই খুন করতো। তাদের কিছু আত্মীয়-স্বজনও সেভাবে হুঙ্কার দিচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানায় নিরাপত্তা জোরদারের জন্য ও সংশিষ্ট সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।

    তিনি বলেন, নুসরাতের পরিবারকে ও আমাকে তারা ইশারা-ইঙ্গিতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আজকে আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছি এই মামলার শেষ পর্যন্ত আমি লড়বো। প্রয়োজনে আমারও মৃত্যু হবে নুসরাতের মতো। তারপরেও কোনো আসামি বাঁচার সুযোগ নেই। ১৬ জনেরই ফাঁসি নিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ।

    আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, প্রধানমন্ত্রী আলোচিত মামলা হিসেবে তদন্ত ভার দিয়েছেন পিবিআইয়ের হাতে। তারা পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে তদন্ত কাজ শেষ করেছে। এছাড়া গোপনে অনেক সংস্থা এই মামলা তদন্ত করেছে। যে ১৬ জন চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এদের বাঁচার কোনো সুযোগ নেই। নারী ও শিশু নির্যাতনের সংশোধিত ২০০৩ এর ৪ ধারায় মামলাটি আনা হয়েছে তার একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন। যেহেতু পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে তদন্ত করে পিবিআই অল্পসময়ে চৌকস অফিসার দ্বারা সচিত্র তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে তাতে আসামিরা যতই চল-চাতুরী করুক বাঁচতে পারবে না। এই চার্জশিটে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানও একই অভিযোগ করেছেন।

    রফিকুল ইসলাম খোকন জানান, বুধবার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই। পিবিআইর ৮২২ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে এজহারনামীয় ৮ জন, এজহার বহির্ভূত তদন্তে প্রাপ্ত আসামি ৮ জন। আমরা সব আসামির মৃত্যুদণ্ড চেয়ে সুপারিশ করেছি।

    এই মামলাটি গত ১০ এপ্রিল থেকে শুরু করে মোট ৫০ দিনে ৩৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্য সমাপ্ত করে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এই মামলায় সর্বমোট ৯২ জন সাক্ষী মামলাটি প্রমাণ করবেন। এর মধ্যে কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ৬৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন অন্যান্য হলেন বিশেষজ্ঞ, বাদী, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিজার লিস্টের সাক্ষী। মামলায় ৭ জন সাক্ষী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। ১২ জন আসামি নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। এ মামলায় ২১ জনকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করা হয়। পিবিআই নুসরাত হত্যায় ব্যবহৃত বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করেছে এবং হত্যার ঘটনার ধারাবাহিক ডিজিটাল স্কেচ ম্যাপ ও আদালতে জমা দেয়া হয়েছে।

    চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আট আসামিসহ এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।

    বিএম/রনী/রাজীব