৫ মিনিট কথা বললে ১২০০ টাকা
    কক্সবাজার কারাগারে দুর্নীতির প্রমান পেয়েছে দুদক

    দুদক

    ইসলাম মাহমুদ, কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজার জেলা কারাগারে অনিয়ম-দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানের শুরুতেই নানা অনিয়ম ও দুর্ণীতির প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে রোববার দুদকের একটি দল কারাগারের ভেতরে গিয়ে বন্দীদের সাথে কথা বলেন এবং দাপ্তরিক বিভিন্ন নথি খতিয়ে দেখেন।

    অনুসন্ধান দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হুমায়ুন কবির ও উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ রিয়াজ উদ্দিন।

    মোঃ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘কাগজপত্র দেখে এবং বন্দিদের সাথে কথা বলে অনুসন্ধানের শুরুতেই নানা অনিয়ম ও দুর্ণীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, খাবার ক্যান্টিনে নানা অনিয়ম, মেডিকেলে অধিকাংশ ইয়াবা ব্যবসায়ির অবস্থান এবং একটি নির্দিষ্ট সেলে উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির চার ভাই ও এক আত্মীয়ের থাকা।

    জানা গেছে, কারাগারের মূল ফটক থেকে ভেতরে সব মিলিয়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার বাণিজ্য হয়। বন্দীর সঙ্গে সাক্ষাৎ, হাসপাতালে থাকা, আসামির জামিন, বন্দী রোগী বাইরের হাসপাতালে পাঠানো, পুনরায় গ্রেফতার, খাবার বা টাকা পাঠানো, মালামাল তল্লাশি করাসহ সবক্ষেত্রেই বাণিজ্য হয় কারাগারে।

    কারাগারের কথিত ‘অফিস কল’ এর মাধ্যমে বন্দিদের সঙ্গে পাঁচ মিনিট কথা বলতে আদায় করা হয় জনপ্রতি ১২০০ টাকা করে। কারাগারের ভেতর থাকা ক্যান্টিন ব্যবসায় প্রতিমাসে ৭০/৮০ লাখ টাকা লাভ হয়। এ ক্যান্টিনেই ২ টাকার শপিং ব্যাগ বিক্রি করা হয় প্রতি পিস ২০ টাকা।

    কারা অভ্যন্তরের একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে এ কারাগারটির প্রধান সমস্যা হলো সাক্ষাৎ বাণিজ্য, অবৈধভাবে কারাগারে কয়েদিদের কাছে টাকা পাঠানো এবং কয়েদিদের মুঠোফোনের ব্যবহার।

    নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কারা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় রসিদের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হচ্ছে। বিশেষ কদর রয়েছে কারান্তরীন ইয়াবা কারবারীদের। কয়েদিদের মুঠোফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভেতরে দায়িত্বরত কারারক্ষীদের সহায়তায় মুঠোফোনে কথা বলেন বন্দীরা। প্রায়শই টাকা দিয়ে মেডিকেল ওয়ার্ড দখল করে রাখেন ইয়াবা কারবারীরা।

    কারাগার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রবিবার পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন ৪ হাজারের বেশি। এসব বন্দির মধ্যে শতকরা ৭০ জন অর্থাৎ তিন হাজারেরও বেশি রয়েছেন ইয়াবা কারবারি।

    অভিযোগ রয়েছে, মাস তিনেক আগে কারাগারটির ব্যবস্থাপনা তদারকিতে নতুন করে ৯ সদস্যের একটি বেসরকারি কারা পরিদর্শক দলকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্ত পরিদর্শকদের মধ্যে রয়েছেন তিনজন স্থানীয় এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, একজন জেলা যুবলীগ নেতা, একজন নারী নেত্রী, একজন শিক্ষাবিদ ও একজন মুক্তিযোদ্ধা।

    নিয়োগপ্রাপ্ত একজন বেসরকারি পরিদর্শকের বিরুদ্ধেও উঠেছে নানা অভিযোগ। বলা হচ্ছে, ওই পরিদর্শক কয়েক ঘণ্টা ধরে বন্দিদের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতে চুক্তির পর দর্শনার্থীদের কারগারে পাঠিয়ে থাকেন।

    এসব অভিযোগের বিষয়ে কক্সবাজার কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক বজলুর রশিদ আখন্দ বলেছেন, ‘কারাগার থেকে যারা অনৈতিক সুবিধা নিতে পারে না তারাই মূলত নানা ধরনের মিথ্যাচার করে। এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই।

    বিএম/রাজীব সেন..

    আরো খবর :: ডিআইজি মিজান কি দুদকের চাইতে ক্ষমতাশালী: আপিল বিভাগ