‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’
    আজ অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট পেশ

    টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথম বাজেট আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে।

    দেশের ৪৮তম বাজেট পেশ করবেন নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন উপলক্ষে ইতোমধ্যে সকল প্রকার প্রস্তুতি শেষ করেছে সংসদ সচিবালয়।

    সংশিষ্ট সূত্র মতে, আজ বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের মুলতবি অধিবেশন শুরু হবে।

    এরপর নতুন অর্থবছরের জন্য ‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’ ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবনা উত্থাপন করবেন পরিকল্পনা মন্ত্রীর পর নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণকারী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

    বিশাল এই বাজেটে থাকছে বিরাট অঙ্কের ঘাটতিও। আসন্ন বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ।

    এ ছাড়া নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির চাপ ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

    সীমিত সম্পদের সুষম ব্যবহারের মাধ্যমে সমগ্র দেশের উন্নয়ন করতে চায় সরকার। বিশেষ করে গ্রাম ও শহরের মধ্যকার বৈষম্য নিরসনে গ্রামাঞ্চলে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

    অন্যদিকে ভ্যাট ও করের বোঝা কমিয়ে অর্থের সংস্থানে করজাল বিস্তৃত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের আগেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চূড়ান্ত প্রবেশ করানোর জন্য আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

    কেননা চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অধিকাংশ বৃহৎ প্রকল্পই দু-এক বছরের মধ্যে সমাপ্ত হবে। ফলে এসব প্রকল্পে যেন কোনোভাবেই অর্থায়ন সংক্রান্ত সমস্যার সৃষ্টি না হয় সেদিকে বিশেষ নজর থাকছে।

    নতুন এই বাজেটে প্রথমবারের মতো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়াচ্ছে।

    জানা গেছে, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মধ্যে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার মধ্যেই আগামী বাজেটে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করতে যাচ্ছে সরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবাকে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দিয়ে সাত বছর আগে পাস করা আলোচিত আইনটি কার্যকর হতে যাচ্ছে বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই। তবে আগামী বাজেটে থাকছে প্রথমবারের মতো কিছু জনকল্যাণমুখী উদ্যোগ।

    ভ্যাট আইনের চাপ থেকে সাধারণ ভোক্তাদের কিছুটা রেহাই দিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্য, সব ধরনের কৃষিপণ্য কেনা-বেচা এবং ছোট ব্যবসায়ীদের ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। তবে জটিল ও কঠিন রোগের কিছু ওষুধ ছাড়া সব ধরনের ওষুধের ব্যবসায় ২ শতাংশের বেশি হারে ভ্যাট আরোপ হতে যাচ্ছে। এতে সর্দি-জ্বর থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগের ওষুধ কিনতে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার আগের চেয়ে খরচ বাড়তে পারে।

    বাজেটে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে মূল অস্ত্র হিসেবে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে ভ্যাট খাত থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার বেশি আদায়ের পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটি।

    চলতি অর্থবছর এ খাতে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে গত ৯ মাসে আয় হয়েছে ৬০ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম ভ্যাট আরোপ (এভিটি) করতে যাচ্ছে সংস্থাটি।

    সহজে ভ্যাট আদায়ের কৌশল হিসেবে এ উদ্যোগ নিচ্ছে সংস্থাটি। মাসিক ভ্যাট পরিশোধের পর অগ্রিম দেয়া ভ্যাট ফেরত দেবে এনবিআর। বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর রয়েছে। এর বদলে অগ্রিম ভ্যাট আরোপ হবে, তবে এক্ষেত্রে হার কিছুটা কমতে পারে।

    ২০১৭ সালে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের উদ্যোগ নেয়ার সময় বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। তখন ভ্যাটের একক হার হিসেবে বিদ্যুৎ বিলের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কথা ছিল। তবে নতুন অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিলের ওপর এখনকার মতো ৫ শতাংশ ভ্যাটই বহাল রাখা হচ্ছে বলে রাজস্ব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

    নতুন ভ্যাট আইন অনুযায়ী কৃষিপণ্যে ভ্যাট আরোপের সুযোগ নেই। সব ধরনের কৃষিপণ্য ভ্যাট থেকে অব্যাহতি পাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য ভোজ্যতেল, চিনি, গুড় ও লবণের ওপর কোনো ভ্যাট বসছে না। কৃষিকাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রাংশ ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ভ্যাট অব্যাহতি পাচ্ছে। সব ধরনের মাংস, কাঁটা ছাড়ানো মাছ বাদে সব ধরনের মাছ, পোল্ট্রি ফিড ও গবাদিপশুর ভ্যাকসিন ভ্যাট অব্যাহতি পেতে পারে।

    হস্তচালিত লন্ড্রি বা কাপড় ধোয়ার দোকানসহ আবাসিক হোটেলের লন্ড্রি ও ছোটখাটো ব্যবসার জন্য দেড়শ বর্গফুট আয়তন পর্যন্ত সব ধরনের স্থাপনার ভাড়া ভ্যাটমুক্ত থাকছে। পর্যটন স্থাপনার টিকিট মূল্য ও জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপ হচ্ছে না।

    নতুন ভ্যাট আইন অনুযায়ী কৃষিপণ্যে ভ্যাট আরোপের সুযোগ নেই। সব ধরনের কৃষিপণ্য ভ্যাট থেকে অব্যাহতি পাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য ভোজ্যতেল, চিনি, গুড় ও লবণের ওপর কোনো ভ্যাট বসছে না। কৃষিকাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রাংশ ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ভ্যাট অব্যাহতি পাচ্ছে। সব ধরনের মাংস, কাঁটা ছাড়ানো মাছ বাদে সব ধরনের মাছ, পোল্ট্রি ফিড ও গবাদিপশুর ভ্যাকসিন ভ্যাট অব্যাহতি পেতে পারে।

    হস্তচালিত লন্ড্রি বা কাপড় ধোয়ার দোকানসহ আবাসিক হোটেলের লন্ড্রি ও ছোটখাটো ব্যবসার জন্য দেড়শ বর্গফুট আয়তন পর্যন্ত সব ধরনের স্থাপনার ভাড়া ভ্যাটমুক্ত থাকছে। পর্যটন স্থাপনার টিকিট মূল্য ও জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপ হচ্ছে না।

    বড় আকারের বাজেট বাস্তবায়নে রাজস্ব আদায়ের ওপর জোর দেয়ার কথা বরাবরই বলে আসছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। ১০ হাজার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দিয়ে ছয় মাসে নতুন ৮৫ লাখ করদাতা খুঁজে বের করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি। এতে করের চাপ কিছুটা বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া আলোচিত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই। তাতে নতুন করে বাড়তি ভ্যাট ও শুল্ককর আদায়ের আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। যদিও এই ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মধ্যে পণ্যমূল্য বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

    আমদানি পর্যায়ে রাজস্ব আয় বাড়াতে দেশের সব বন্দরে স্ক্যানার মেশিন বসানো হবে। ফলে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক আদায় বাড়ার পাশাপাশি আমদানি-রফতানির আড়ালে অর্থপাচার রোধ হবে বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী। এসব লক্ষ্য সামনে রেখেই নতুন অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে।

    নতুন অর্থবছরে ভ্যাট অব্যাহতির সীমা ৩০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখ করার কথা আগেই জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থাৎ বছরে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত কেনাবেচা করেন এমন ব্যবসায়ীদের ভ্যাট দিতে হবে না। ফলে শহরের অলিগলির দোকানসহ গ্রামগঞ্জের ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের আয়ে নতুন ভ্যাট আইনের প্রভাব পড়বে না।

    এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স, যাত্রী ও খাদ্য পরিবহনকারী যানবাহন, চিকিৎসাসেবা, ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়া অন্যসব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং শিশু পালন, বয়স্ক লোকদের সেবাও ভ্যাট অব্যাহতি পাচ্ছে। অস্থায়ী হোটেল ও রেস্তোরাঁ- যাদের বৈদ্যুতিক ফ্যান নেই এবং সর্বোচ্চ দুটি বাল্ব ব্যবহার করছে- এ ধরনের হোটেলগুলোও ভ্যাটের আওতার বাইরে থাকবে। অন্য হোটেলগুলোতে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ হতে পারে।

    ওষুধের মধ্যে সব ধরনের জন্মনিরোধক, হিউম্যান মেডিসিনের ভ্যাকসিন, লিভার সিরোসিস বা হেপাটাইটিস সি নিরাময়কারী হোমিওপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক, ইউনানি ও ভেষজ ওষুধ, কিডনি ডায়ালাইসিস সলিউশন, ক্যান্সার নিরোধক ওষুধ, ম্যালেরিয়া ও কুষ্ঠরোগ নিরোধক ওষুধ, টক্সিন ও কার্ডিওভাসকুলার ওষুধ, অ্যান্টি-হ্যাপাটিক ও অ্যান্টি-হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথিক, বায়োকেমিক ও সাইকোট্রপিকের ওষুধ, সাধারণ ও লোকাল এনাসথেটিক, ইথার এনাসথেটিক বিপি/ইউএসবি, ইথাইল ক্লোরাইড বিপি, কিডনি রোগের ডায়ালাইসিস ফ্লুইড ও কিডনি সংযোজনের জন্য সাইক্লোসপরিন ওষুধ, ইনসুলিন ও থ্যালাসেমিয়া রোগের ওষুধ, হেয়ারিং এইডস, পেসমেকার, ইনসুলিন পেন বা কার্টিস ও ক্যানলা আমদানি এবং সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি পাচ্ছে।

    গত ৩১ মার্চ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন আইনে ভ্যাটের হার হবে চারটি- ১৫, ১০, ৭.৫ ও ৫ শতাংশ। পরে তিনি আরও জানান যে, যেসব পণ্যে ২ শতাংশ ভ্যাট আছে, সেসবের ভ্যাট বাড়বে না। অর্থাৎ, ভ্যাটের হার হচ্ছে পাঁচটি।

    বর্তমানে শুধু পেট্রোলিয়াম পণ্যে ২ শতাংশ ভ্যাট আরোপ আছে। নতুন বছরে স্টিল ও রি-রোলিং মিলসহ বিভিন্নখাতের ব্যবসায়ীরা ২ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছেন। তাদের কথায়, নতুন আইনে ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা উঠে যাবে, ফলে সর্বনিম্ন ২ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হলেও বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ব্যয় ও বাজারমূল্য বাড়তে পারে। কারণ, যেসব পণ্য ও সেবায় ১৫ শতাংশের কম ভ্যাট আরোপ হবে, তারা প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী রেয়াত বা ক্রেডিট পাবে না। এ কারণে ভ্যাটের হার কমলেও অনেক পণ্যে ব্যবসায়ীদের আগের চেয়ে বেশি ভ্যাট দিতে হবে।

    এমপিওভুক্তিতে বরাদ্দ থাকছে ১১৫০ কোটি টাকা

    আগামী বাজেটে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সুখবর থাকছে। বাজেটে অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে ঝুলে আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া। তবে আগামী (২০১৯-২০) অর্থবছরের বাজেটে এমপিওভুক্তির প্রতিশ্রুতি থাকছে। এ জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।

    চলতি (২০১৮-১৯) অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৫০০ কোটি টাকা। নানা দিক বিবেচনায় সে টাকা অব্যবহৃতই থেকে যায়।

    বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন ও সব মহলের দীর্ঘদিনের দাবি এবং সর্বশেষ নন-এমপিও শিক্ষকদের গত বছরের লাগাতার আন্দোলনের মুখে এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার। নানা ধাপে যাচাই-বাছাই ও নীতিমালা সংশোধন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাই প্রক্রিয়াও শেষ করেছে মন্ত্রণালয়।

    আগামী বাজেটে জনগণের ওপর কিছুটা করের বোঝা থাকার আশঙ্কা থাকলেও প্রথমবারের মতো বেকারদের ঋণ তহবিল, প্রবাসীদের জন্য বীমা সুবিধাসহ বেশকিছু জনকল্যাণমুখী উদ্যোগের প্রস্তাব থাকছে, যা আগের কোনো বাজেটে ছিল না।

    বেকার তরুণদের জন্য থাকছে সুখবর

    শিক্ষিত বেকার তরুণদের জন্য সুখবর থাকছে নতুন বাজেটে। তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। তরুণরা যাতে সহজে ব্যবসা শুরু করে স্বাবলম্বী হতে পারেন, সেজন্য আলাদা একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হচ্ছে এবারের বাজেটে। ‘স্টার্টআপ ফান্ড’ নামে এতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে।

    অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, যেসব যুবক ব্যবসা শুরু করতে চাইবেন, তাদের প্রাথমিক পুঁজি সরবরাহ করা হবে এই তহবিল থেকে। দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের জন্য সবসময় বরাদ্দ দেয়া হলেও বাজেটে তরুণদের জন্য সরাসরি সহায়তার এমন উদ্যোগ এবারই প্রথম।

    বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রস্তাবিত ফান্ড কীভাবে পরিচালনা করা হবে, কত টাকা দেয়া হবে, ঋণ হিসেবে দেয়া হবে নাকি অনুদান দেয়া হবে- এসব বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে। ওই নীতিমালার ভিত্তিতে এই সহায়তা দেয়া হবে।’

    তিনি আরও বলেন, ‘বাজেট ঘোষণার পর এটি চূড়ান্ত করা হবে। প্রাথমিকভাবে আসন্ন বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। পরে চাহিদা বাড়লে টাকার অঙ্ক আরও বাড়ানো হবে।’

    প্রবাসীদের জন্য আসছে বীমা সুবিধা

    দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জীবন বীমা সুবিধার আওতায় আনার ঘোষণা থাকছে আগামী বাজেটে। এর আওতায় বীমাকারী মৃত্যুবরণ করলে, দুর্ঘটনাজনিত স্থায়ী ও সম্পূর্ণ অক্ষমতা বা পঙ্গুত্ববরণ করলে মূল বীমার শতভাগ পরিশোধ করার বিধান রাখা হয়েছে। অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের ভিত্তিতে দাবি পরিশোধ করার কথাও থাকবে।

    সূত্র জানায়, প্রবাসীকর্মীদের বীমা সেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের বীমা সুবিধার প্রয়োজনীয়তা, কর্মীদের আর্থিক সক্ষমতা, কর্মকালীন সম্ভাব্য ঝুঁকিসহ অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয় বিবেচনায় আনা হয়েছে। বীমার প্রকারভেদের ক্ষেত্রে বলা হয়, এ নীতিমালার আওতায় প্রবাসীকর্মীদের জীবন বীমা সুবিধা প্রদান করা হবে।

    সাধারণত মৃত্যুর ক্ষেত্রে বীমা সুবিধায় প্রিমিয়াম হার ও বীমা অঙ্ক বীমা-গ্রহীতাদের বয়সভেদে পার্থক্য হয়ে থাকে। তবে প্রবাসীকর্মীদের একটি গ্রুপ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে বীমা পরিকল্পটি বা পলিসিটি সহজীকরণের লক্ষ্যে বীমা-গ্রহীতাদের বয়স নির্বিশেষে অভিন্ন প্রিমিয়াম হার আরোপ করা হবে।

    পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে চালু হবে শস্যবীমা

    গ্রাম ও শহরের উন্নয়ন বৈষম্য কমিয়ে আনতে এবং গ্রামে শহরের সুবিধা নিশ্চিত করতে দিকনির্দেশনা আসছে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট। গ্রামের মানুষকে জীবনের তাগিদে যেন শহরে ছুটতে না হয়, সেজন্য গ্রামবান্ধব কর্মসূচিতে বিশেষ নজর দিচ্ছে সরকার।

    চরম দারিদ্র্য শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো হচ্ছে। কৃষকের জন্য ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে চালু করা হবে শস্যবীমা। প্রাথমিকভাবে বেছে নেয়া হবে একটি জেলাকে। পরবর্তী সময়ে এটি ছড়িয়ে দেয়া হবে সারাদেশে।

    অর্থমন্ত্রী তাঁর জীবনের প্রথম বাজেট সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে উত্থাপন করবেন। বাজেট বক্তৃতা শেষে অর্থমন্ত্রী ‘অর্থ বিল-২০১৯’ সংসদে উত্থাপন করবেন।

    সরকারের আর্থিক প্রস্তাবাবলী কার্যকরণ এবং কতিপয় আইন সংশোধনের লক্ষ্যে এই বিলটি উত্থাপন করা হয়। সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিলটি আগামী ৩০ জুন পাস হবে। এর আগে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সরকার ও বিরোধী দলীয় সদস্যরা আলোচনা করবেন।

    দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, সংসদ অধিবেশনের বাজেট উত্থাপনের আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করা হবে। প্রতি বছর বাজেট উত্থাপনের আগে রেওয়াজ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই বৈঠকটি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন পাওয়ার পর বাজেট বিলে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এরপর সংসদে নিজ কক্ষে বসে বাজেট উপস্থাপন প্রত্যক্ষ করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এ সময় রাষ্ট্রপতি ছাড়াও প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, দেশী-বিদেশী কূটনীতিক ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। এজন্য সংসদ ভবন ও তার আশপাশের এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে।

    মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে বাজেটের সবকিছু চূড়ান্ত করেছেন। বাজেটের সব ডকুমেন্ট ছাপা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতার বই ছাপার কাজ শেষ পর্যায়ে। আজ সকালেই তা পৌঁছে যাবে সংসদ সচিবালয়ে। অধিবেশন শুরুর আগে তা পৌঁছে দেয়া হবে এমপিদের টেবিলে।

    উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার থেকে এই অধিবেশন শুরু হয়েছে। যা আগামী ১১ জুলাই শেষ হবে। সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ জুন বাজেট পাসের পর এক সপ্তাহের বিরতি দিয়ে ৭ জুলাই থেকে পুনরায় বসবে। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পাশাপাশি বিএনপি ও গণফোরাম সদস্যদের অংশগ্রহণে পুরো অধিবেশন উত্তপ্ত থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

    সংসদে ছিলেন অর্থমন্ত্রী ॥ কয়েক দিন জ্বরে ভোগার পর গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে যান ৭২ বছর বয়সী অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে রাতে তিনি হাসপাতালেই থেকে যান।

    সংসদে বাজেট পেশের দু’দিন আগে অর্থমন্ত্রীর অসুস্থতার খবরে উদ্বেগ তৈরি হলেও বুধবার বিকেলে তিনি সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন। বাজেট প্রস্তাবনা উত্থাপনে তিনি ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।

    বিএম/এমআর