নামাযে যে ভুলগুলো হলে সিজদায়ে সাহু করবেন

    নামাযে পরিপূর্ণ মনোযোগী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তবু আমরা মানুষ, আমাদের ভুল হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহ বান্দার আমল নষ্ট হতে দেন না। তাই নামাযে একান্তই কোন ফরয রোকন ছেড়ে না দিলে, ওয়াজিব ছেড়ে দিলেও সিজদায়ে সাহুর মাধ্যমে নামাযকে শুদ্ধ করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কোন কোন ভুলে সিজদায়ে সাহু করতে হবে, তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।

    এক.
    নামাযে কোন ওয়াজিব ছুটে গেলে সিজদায়ে সাহু আদায় করতে হবে। অন্যথায় নামায হবে না। ভুলক্রমে বা ইচ্ছাকৃতভাবে সিজদায়ে সাহু আদায় না করলে নামায পুনরায় পড়তে হবে।

    সিজদায়ে সাহু বা সাহু সিজদা দেয়ার নিয়ম হলো- শেষ রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে শুধু ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে ২টি সিজদা দিতে হবে। দুই সিজদার মাঝখানে অবশ্যই ১ তাসবিহ পরিমাণ সোজা হয়ে বসতে হবে। তারপর যথারীতি আবার আত্তাহিয়্যাতু, দুরুদ শরীফ ও দুআয়ে মাসূরা পড়ে নামায শেষ করতে হবে।

    তবে নামাযে যদি কোনো ফরয ছুটে যায় তাহলে সিজদায়ে সাহু কার্যকর হবে না। নামায পুনরায় আদায় করতে হবে। আবার অনেককে দেখা যায় কোনো কারণ ছাড়াই সব নামাযের শেষে একটা সাহু সিজদা দিয়ে দেয়। এমনটি করাও সঠিক নয়।

    দুই.
    আপনি যদি জামাতে নামায পড়েন তাহলে ইমাম সাহেব যদি সাহু সিজদা দেয় তাহলে আপনি দিবেন। আর যদি আপনি জামাতে মাসবুক তথা ইমাম সাহেব এক বা একাধিক রাকাত পড়ে ফেলার পর জামাতে এসে যুক্ত হন এবং তখন আপনার নিজের পড়া রাকাতে কোনো ওয়াজিব ছুটে যায় তাহলে আপনাকে সিজদায়ে সাহু করতে হবে।

    তিন.
    মনে রাখতে হবে যে-
    ১. ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়া ওয়াজিব। যদি আপনি ফরয নামাযের ১ম রাকাত বা ২য় রাকাত বা উভয় রাকাতেই সূরা ফাতেহা ভুল করে না পড়েন, তাহলে আপনাকে সিজদায়ে সাহু আদায় করতে হবে। আবার ফরয নামাযের ৩য়/৪র্থ রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়া সুন্নাত। আপনি যদি যে কোনো ফরয নামাযের ৩য়/৪র্থ রাকাতে সূরা ফাতেহা ভুল করে না পড়েন, তবে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না।

    ২. ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়ার পর অন্য একটি সূরা মিলানো ওয়াজিব। যদি আপনি ভুল করে ফরয নামাযের প্রথম ২ রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়ার পর অন্য কোনো সূরা না পড়েন, তাহলে আপনাকে সিজদায়ে সাহু করতে হবে। আবার ফরয নামাযের ৩য়/৪র্থ রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়ার পর অন্য কোনো সূরা পড়ার বিধান নেই। তবে আপনি ভুলে ফরয নামাযের ৩য়/৪র্থ রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়ার পর অন্য কোনো সূরা পড়ে ফেললে সিজদায়ে সাহু করতে হবে না।

    ৩. সুন্নাত ও নফল নামাযের প্রত্যেক রাকাতেই সূরা ফাতেহা পড়ার পর অন্য একটি সূরা মিলানো ওয়াজিব।আপনি যদি যে কোনো সুন্নাত/নফল নামাযের যে কোনো রাকাতে সূরা ফাতেহা বা সূরা ফাতেহার পর অন্য একটি সূরা না পড়েন তাহলে আপনি একটি ওয়াজিব ছেড়ে দিলেন। আপনাকে অবশ্যই সিজদায়ে সাহু করতে হবে।

    ৪. ভুল করে যে কোনো রাকাতে ২ রুকু বা ৩ সিজদা দিলে সিজদায়ে সাহু করতে হবে।

    ৫. সূরা ফাতেহা পড়ার পর এখন কি সূরা পড়বো- এ চিন্তায় যদি ৩ তসবীহ পরিমাণ সময় চলে যায় তাহলে সিজদায়ে সাহু করতে হবে। অথবা কোনো সূরার কোনো আয়াত ভুলে গেছেন ঐ আয়াত স্মরণ করার জন্য যদি ৩ তাসবীহ পরিমাণ সময় চলে যায় তাহলে সিজদায়ে সাহু করতে হবে। ফরয ও সুন্নত নামাযের ১ম বৈঠকে যদি ভুলে দুইবার আত্তাহিয়্যাতু পড়ে ফেলেন তাহলে সিজদায়ে সাহু করতে হবে। আবার ফরয ও সুন্নত নামাযের ১ম বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর যদি দুরুদ শরীফের ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ’ পর্যন্ত পড়ে ফেলেন তাহলে শেষ বৈঠকে সিজদায়ে সাহু করতে হবে। অবশ্য তারচেয়ে কম পড়লে সিজদায়ে সাহু করতে হবে না। তবে নফল নামাযের যে কোনো বৈঠকে দুইবার আত্তাহিয়্যাতু পড়ে ফেললে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না।

    ৬. যে কোনো বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার সময় যদি ভুলে সূরা ফাতেহা পড়ে ফেলেন তাহলে সিজদায়ে সাহু করতে হবে। তবে নিয়ত করার সময় সানার পরিবর্তে ভুলে দুআয়ে কুনুত পড়ে ফেললে সিজদায়ে সাহু করতে হবে না।

    ৭. ৩/৪ রাকাত বিশিষ্ট নামাযে প্রথম বৈঠক ভুলে গেছেন এবং ৩য় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেছেন, যদি অর্ধেকের কম দাঁড়িয়ে থাকেন তাহলে বসে পড়বেন এবং আত্তাহিয়্যাতু পড়ে ৩য় রাকাতের জন্য দাঁড়াবেন। এ অবস্থায় সিজদায়ে সাহু করতে হবে না।

    আর যদি অর্ধেকের বেশি দাঁড়িয়ে যান তাহলে আর বসবেন না। ৩/৪ রাকাত নামায শেষ করে শেষ বৈঠকে সিজদায়ে সাহু দিবেন।

    ৮. যোহর ও এশার ৪র্থ রাকাতে বসতে মনে নেই। একেবারে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ৫ম রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেছেন। এক্ষেত্রে মনে হবার সাথে সাথে বসে পড়তে হবে। আত্তাহিয়্যাতু ও দুরুদ শরীফ পড়ে সালাম ফিরাবেন। এক্ষেত্রে সিজদায়ে সাহু করতে হবে না।

    আর যদি ৫ম রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়ে ফেলেন এবং রুকুও করে ফেলেন তবুও বসে পড়বেন। এ অবস্থায় সিজদায়ে সাহু করতে হবে। আর যদি রুকু করার পরও মনে না হয় তাহলে আরো দুই রাকাত পড়ে মোট ছয় রাকাত পড়বেন। এক্ষেত্রে শেষ দুই রাকাত নফল ও প্রথম চার রাকাত ফরয হিসাবে আদায় হলো।

    কিন্তু আসরের নামাযে ৪র্থ রাকাতে এ রকম ভুল হলে মোট ৬ রাকাতই পড়বেন, কিন্তু পুরো ৬ রাকাতই নফল হিসেবে গণ্য হবে। কারণ আসর নামাযের পর কোনো নফল নামায নেই। এক্ষেত্রে আপনাকে পুনরায় আসরের নামায পড়তে হবে।

    ৯. নামায ৩ রাকাত পড়েছেন না ৪ রাকাত পড়েছেন- এ রকম সন্দেহ যদি সব সময় হয়ে থাকে তাহলে এ সন্দেহের কোনো ভিত্তি নেই, একে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। আর যদি হঠাৎ করে এ সন্দেহ হয় তাহলে এ রাকাতকে ৩য় রাকাত ধরে আরেক রাকাত পড়ে নিবেন। আর যদি ৪র্থ রাকাত বলেই মনে প্রবল ধারণা হয় তাহলে আরেক রাকাত পড়ার দরকার নেই। এই অবস্থায় সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না।

    আবার ১ম রাকাত পড়লেন না ২য় রাকাত পড়লেন এ রকম সন্দেহ যদি সব সময় হয়ে থাকে তাহলে এ সন্দেহেরও কোনো ভিত্তি নেই। আর যদি হঠাৎ করে এ সন্দেহ হয় তাহলে এ রাকাতকে ১ম রাকাত ধরে আত্তাহিয়্যাতু পড়বেন। কারণ এটা ২য় রাকাতও হতে পারে। আবার ২য় রাকাতেও আত্তাহিয়্যাতু পড়বেন। কারণ এটা ২য় রাকাত হতে পারে। আবার ৩য় রাকাতেও আত্তাহিয়্যাতু পড়বেন। কারণ এটা ৪র্থ রাকাত হতে পারে। তারপর ৪র্থ রাকাতে সিজদায়ে সাহু করে সালাম ফেরাবেন।

    ১০. নামাযে সালাম ফিরানোর পর যদি নামায ৩ রাকাত পড়েছেন, না ৪ রাকাত পড়েছেন এ রকম সন্দেহ সব সময় হয়ে থাকে তাহলে এ সন্দেহের কোনো ভিত্তি নেই। আর যদি স্পষ্টভাবে মনে পড়ে যে, নামায ৩ রাকাতই পড়েছেন এবং আপনি এখনও কিবলামুখি হয়ে বসে আছেন এবং কারো সাথে কথাও বলেন নি তাহলে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে আরেক রাকাত পড়ে সিজদায়ে সাহু করে সালাম ফেরাবেন। নামায হয়ে যাবে। তবে বেশি দেরী হয়ে গেলে বা কারো সাথে কথা বলে ফেললে অথবা এমন কোন কাজ করে ফেললে – যা কোন ব্যক্তি দেখলে মনে করবে যে আপনি নামাযে নেই, তাহলে নামায পুনরায় পড়তে হবে।

    ১১. একই নামাযে সিজদায়ে সাহু করার একাধিক কারণ ঘটলেও একটি সিজদায়ে সাহু করলেই হবে।

    ১২. বিতর নামাযে দুআয়ে কুনুত না পড়েই রুকুতে চলে গেলে বা দুআয়ে কুনুতের পরিবর্তে অন্য কিছু পড়ে ফেললে সিজদায়ে সাহু করতে হবে। আর যদি দুআয়ে কুনুতের পরিবর্তে অন্য কিছু পড়ে ফেলেন কিন্তু মনে হওয়ার সাথে সাথে আবার দুআয়ে কুনুত পড়েছেন তাহলে সিজদায়ে সাহু করতে হবে না।

    রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে পূর্ণ মনোযোগী হয়ে নামায আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

    বিএম/এমআর