বর্ষাকাল হলেও আবহাওয়া যেন চলছে তার নিজস্ব মেজাজে৷ সকালে একঝলক মিষ্টি সোনালী রোদ, তো দুপুরে কাঠফাটা প্রখর রোদ আবার বিকালে মুষলধারে বৃষ্টি! এই সময়টাতে অতিরিক্ত গরমে জন্য প্রায়ই বিভিন্ন বয়সীদের মাঝে একটি কথা বেশি শোনা যাচ্ছে। আর সেটা হচ্ছে ‘হিট স্ট্রোক’ গরমে ছোট-বড় সবার মাঝে যেন একটি আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাই আসুন আপনি ও আপনার পরিবারে সবাই যেন নিরাপদে থাকে তাই ‘হিট স্ট্রোক’ সম্পর্কে ভালোভাবে যেনে নিন৷
হিট স্ট্রোক কী? :
দীর্ঘ সময় অধিক তাপমাত্রাযুক্ত স্থানে অবস্থান করার ফলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে কিছু উপসর্গ সৃষ্টি করে যা হিট স্ট্রোক নামে পরিচিত৷
হিট স্ট্রোকের ধাপসমূহ:
তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে মাংসপেশী অনৈচ্ছিকভাবে তীব্রভাবে সংকুচিত হওয়া,
রক্তচাপ কমে যাওয়ায় জ্ঞান হারানো এবং
মাত্রাতিরিক্ত শারীরিক দুর্বলতা পরিলক্ষিত হওয়া৷
হিট স্ট্রোক কেন হয়?
তীব্র রোদ বা গরমে বেশি সময় অবস্থান করলে, রোদে পুড়ে কাজ বা খেলাধূলা করলে, মাত্রাতিরিক্ত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করলে কিংবা শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম নির্গত হলে পানিশূন্যতা থেকে এটি হতে দেখা যায়৷
হিট স্ট্রোকের লক্ষণ সমূহ:
প্রধান উপসর্গ শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার উর্দ্ধে থাকা,
চামড়া লালবর্ণ ধারণ করা,
দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস,
হৃদপিণ্ডের দ্রুত সঞ্চালন,
মাথা ব্যাথা,
প্রচণ্ড পিপাসা,
বমি ভাব বা বমি,
মানসিক অবস্থা বা আচরণে পরিবর্তন দেখা যাওয়া।
বিপজ্জনক উপসর্গ:
শরীরের একপাশের মুখমণ্ডল, হাত, পায়ে অবশতা,
কথাবার্তায় অসংলগ্নতা,
দ্বিধাগ্রস্ত বা কথা বুঝতে না পারা,
দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা,
মাথা ঘোরানো,
ভারসাম্য হারানো,
হাঁটাচলা বা কথা বলতে সমস্যা সৃষ্টি হওয়া।
আক্রান্ত হলে যা করবেন:
. যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ চিকিৎসাকেন্দ্রে নিতে হবে৷ মোটামুটি ১-২ দিনেই পুরোপুরি নিরাময় হয়ে যায়৷ প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে।
. দ্রুত ছায়াযুক্ত জায়গা বা ঠাণ্ডা পরিবেশে রোগীকে নিয়ে যান৷
. রোগীকে শুইয়ে দিয়ে পায়ের নিচে বালিশ রেখে বা যেকোনো ভাবে উঁচু করে দিন৷
. ফ্যান অথবা হাতপাখা ব্যবহার করুন৷
. পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা পানি বা তরল পানীয় পান করতে দিন৷
. পোশাক ঢিলে করুন বা খুলে দিন৷
. হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি, লিভার বা মস্তিষ্কের ক্ষতি এড়াতে ভেজা ঠাণ্ডা তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে দিন৷ সম্ভব হলে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করা ভাল৷
প্রতিরোধের উপায়:
. কড়া রোদ যতটা সম্ভব পরিহার করুন৷
. বাহির থেকে যেয়ে গোসলে ঢুকবেন না।
. ঘাম শুকালে ঠাণ্ডা হয়ে সময় নিয়ে গোসল করুন।
. ঢিলেঢালা এবং হালকা রঙের পোশাক পরিধান করুন৷
. সিনথেটিক পোশাক এরিয়ে চলুন।
. পর্যাপ্ত পানি পান করুন। তাছাড়া ফলের রস, ডাবের পানি, দইয়ের শরবত, গ্লুকোজের মিশ্রণ, এ্যালোভেরার জুস পান করতে পারেন৷
. অতিরিক্ত স্যালাইন খাবেন না।
. কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন৷ ফ্রিজে রাখা ঠাণ্ডা পানি এড়িয়ে চলুন।
. সামর্থ্যের অতিরিক্ত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করবেন না৷
বিএম/এমআর