৪-১২ জুলাই‘ আড়ম্বরভাবে উদযাপন হবে ২২তম রথযাত্রা
    হিন্দুদের রথযাত্রা উৎসবে সরকারি ছুটি ঘোষণাসহ ৭ দফা দাবি

    চট্টগ্রাম মেইল : পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মানুষের মিলনোৎসব হল রথযাত্রা উৎসব। রথযাত্রা হল পৃথিবীর একমাত্র উৎসব যেখানে ভগবান মন্দির থেকে বের হয়ে এসে রথে আরোহন করে নগর পরিক্রমা করেন। কলিযুগের অধঃপতিত ধর্মবিমুখ জীবদের যারা মন্দিরে যেতে সময় পায় না তাদের দর্শন দানের মাধ্যমে জগন্নাথদেব তার অহৈতুকী কৃপা বিতরণ করেন। এই হল জগন্নাথদেবের মহিমা। তাই রথযাত্রা উৎসবের দিন রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি ছুটি ঘোষণাসহ ৭ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আন্তজার্তিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন) চট্টগ্রাম।

    শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের ২২তম রথযাত্রা‘১৯ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবী জানানো হয়। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রাম ইস্কনের বিভাগীয় রিজিওন্যাল সেক্রেটারী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।

    লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রথযাত্রা উৎসবের উৎপত্তি ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের অন্তর্গত শ্রীজগন্নাথ পুরীধাম। পুরীধামে বিরাজিত আছেন জগতের অধীশ্বর, পরম দয়ালু, জীবের পরম আশ্রয়দাতা পরমেশ্বর ভগবান জগন্নাথ। জগন্নাথদেবের বিভিন্ন বিস্ময়কর ও অদ্ভুতলীলা থেকে উপলদ্ধি করা যায় তিনি মন্দিরে স্বয়ং বিরাজিত।

    আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) এর প্রতিষ্ঠাতা আচার্য জগৎগুরু শ্রীল প্রভুপাদের কল্যাণে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব জগতের নাথ জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব আজ সারা বিশ্বের প্রায় ১২৭টি দেশের সব বড় বড় শহরে সারা বৎসরব্যাপী হাজার হাজার বিদেশী ধর্মপ্রাণ নরনারীর অংশগ্রহণে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যার মাধ্যমে এই বাংলার কৃষ্টি, প্রথা, সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য সারা বিশ্বের প্রতি নগরাদি গ্রামে প্রচারিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত।

    স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার গর্ভভূমি এই দেশে ধর্মীয় উৎসবসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদায় সবার অংশগ্রহণের উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হওয়ার ফলশ্রুতিতে জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ ও সর্বপ্রকার অশুভশক্তি শতবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করেও বার বার দমিত হয়েছে। বর্তমান সরকার ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার এর স্থলে ধর্ম যার যার উৎসব সবার সংযোজন করেছেন। সংখ্যালঘুদের উপর বার বার পরিকল্পিত হামলা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিচ্ছে না। তাই প্রতিনিয়ত মঠ-মন্দিরে হামলা, গুম হত্যা ও ধর্ষন বেড়েছে। এসব গুপ্ত হত্যা করে দেশ থেকে সংখ্যালঘুদের বিতাড়িত করার একটা অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সরকার যদি এসব হত্যকারীদের এবং মূল হোতাদের গ্রেপ্তারপূর্বক শাস্তি প্রদান না করে তাহলে দেশ অনেক দূর পিছিয়ে যাবে।

    তিনি আরো বলেন বিশ্বব্যাপী সনাতন ধর্ম প্রচারে অগ্রগামী সংগঠন ইস্কনের বিভিন্ন মঠ, মন্দির ও ভক্তদের উপর হামলা বাংলাদেশের ধর্ম নিরপেক্ষ শান্তিপ্রিয় মানুষের হৃদয়কে বিদীর্ণ করেছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সেই স্বাধীন বাংলাদেশে এইসব ঘটনা নিশ্চয়ই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যে বাংলাদেশে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনাকালে ভক্তদের উপর হামলা করা হয় তা কি কোনো স্বাধীন বাংলাদেশের চিত্র হতে পারে না।

    তাই রথযাত্রা উৎসবের দিন রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি ছুটি ঘোষণা, সনাতন ঐতিহ্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র সদৃশ বিলুপ্ত প্রায় মন্দির স্থাপনা, স্মৃতি স্থান ও তীর্থস্থান সমূহ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে সংরক্ষণ ও রক্ষণা-বেক্ষণ ও প্রসারের জন্য সরকারি বরাদ্দ নিশ্চিত করা, নন্দনকাননস্থ রাধামাধব মন্দির, লোকনাথ মন্দির ও বিদ্যালয়ের অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্ত করা, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে রূপদান করা, রাষ্ট্রীয় ভাবে ধর্মীয় বৈষম্যমূলক বাজেট সংশোধন করে নতুন মন্দির নির্মাণে বরাদ্ধ প্রদান করা, রথযাত্রায় অংশগ্রহণকারী জনগণের ভোগ্য খাদ্যবস্তু সমূহ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রদান করা, প্রত্যেক মঠ, মন্দির ও দেবোত্তর সম্পত্তি সমূহের নিñিদ্র নিরাপত্তা প্রদান করার দাবি জানান।

    সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট চন্দন তালুকদার, কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রী বিমল কান্তি দে, চট্টগ্রাম মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এড. নিতাই প্রসাদ ঘোষ, নন্দনকানন ইস্কন মন্দিরের অধ্যক্ষ প-িত গদাধর দাস ব্রহ্মচারী, অকিঞ্চন গৌর দাস ব্রহ্মচারী, সাধারণ সম্পাদক তারণ নিত্যানন্দ দাস ব্রহ্মচারী, কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী পরিষদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক এড. তপন কান্তি দাশ, জন্মাষ্টমী প্রকৌশলী আশুতোষ দাশ, ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ পালিত, গৌর পূর্ণিমা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুমন চৌধুরী।

    সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয় নন্দনকানন শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির ও গৌর নিতাই আশ্রম এর সামনে থেকে আগামী ৪ জুলাই থেকে ১২ জুলাই‘১৯ পর্যন্ত ২২তম রথযাত্রা উৎসব আড়ম্বরভাবে উদযাপন করা হবে এবং ৭ দিনব্যাপী জে. এম সেন হলে ভাগবত সপ্তাহ পালন হবে।

    তাছাড়া ৪ জুলাই ও ১২ জুলাই রথযাত্রায় বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞানুষ্ঠান, জগন্নাথদেবের মধ্যাহ্নকালীন ভোগারতি, ধর্ম মহাসম্মেলন ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃিতক অনুষ্ঠান ও বৈদিক নাটক অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় দেশী- বিদেশী অতিথিবৃন্দ, ইসকন মহারাজবৃন্দ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জাতীয় নেতৃবৃন্দ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

    মহাশোভাযাত্রা নন্দনকাননস্থ শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দির ও গৌর নিতাই আশ্রম সম্মুখে ডিসি হিল প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে চেরাগি পাহাড়- আন্দরকিল্লা- বক্সিরহাট বিট- লালদিঘীর পাড়- কোতোয়ালীর মোড়-নিউ মার্কেট-আমতলা-বোস ব্রাদার্স-নন্দনকানন শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির এসে সমাপ্ত হবে।

    ১২ জুলাই শ্রীজগন্নাথদেবের উল্টো রথযাত্রা মহোৎসব নন্দনকানন শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির হতে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে নন্দনকানন এসে শেষ হবে। সর্বোপরি উক্ত রথযাত্রায় কঠোর নিরাপত্তা প্রদানের জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান।

    বিএম/রাজীব সেন..