যান চলাচল প্রতিবন্ধকতামুক্ত রাখার আহবান সুজনের
    বন্ধের দিনেও তীব্র যানজটে সীমাহীন ভোগান্তিতে বিমানবন্দর সড়কের যাত্রীরা

    রাজীব সেন প্রিন্স : 

    শুক্রবার বন্ধের দিনেও স্বস্থিতে নেই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সড়কের যাত্রীরা। আজ ১২ জুলাই দুপুর থেকেই কাস্টমস মোড় থেকে বিমানবন্দর সড়কে অস্বস্তিকর যানজটের কবলে পড়ে সীমাহীন ভোগান্তিতে এ সড়কের যাত্রীরা। যানজট স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করাই কষ্টকর হবে, দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কের যে কি বেহাল দশা? যানজটের দুর্ভোগটা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, এখন এই সড়কে চলাচলকারীদের আতঙ্কের নাম হয়ে দাড়িয়েছে বিমান বন্দর সড়ক।চট্টগ্রাম বিমান বন্দর সড়ক থেকে ছবি তুলেছেন বাংলাদেশ মেইলের আলোকচিত্রী কাঞ্চন চক্রবর্ত্তী।

    প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি পণ্য পরিবহনেও সৃষ্টি হচ্ছে বিঘ্নতা। সড়কের বেহাল অবস্থা তার উপর অসহনীয় যানজটের কবলে পড়ে অপচয় হচ্ছে সাধারণ মানুষের কর্মঘণ্টা। শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বচোক্ষে পরিলক্ষিত হয় কাস্টমস মোড় থেকে বিমানবন্দর সড়কের যানজটের দৃশ্য। ঠাঁই দাড়িয়ে আছে ট্রাক, লড়ি, কাভার্ডভ্যানসহ ছোট বড় সব যাত্রীবাহি পরিবহণ। দু এক মিনিট পর পর সামান্য একটু নড়াচড়া করলেও এক কিলোমিটার পথ পারি দিতে সময় নিচ্ছে দেড় থেকে দু ঘন্টা। যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে দেখা যায়।

    চট্টগ্রাম বিমান বন্দর সড়ক থেকে ছবি তুলেছেন বাংলাদেশ মেইলের আলোকচিত্রী কাঞ্চন চক্রবর্ত্তী।

    কয়েকজন যাত্রীর সাথে কথা বলতে চাইলে তারা তিক্ততার সহিত বলেন, এ সড়কে এমন যানজট আর কখনোই দেখিনি। তারা বলেন, চরম ভোগান্তিতে গত কয়েকদিন ধরে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যানজটের ভয়াবহতার খবর প্রকাশ হলেও সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানেরই মাথা ব্যাথাও নেই। আক্ষেপ করে বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগের গাফিলতির কারণেই নগরের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন যাত্রীরা। তাছাড়া সড়কটির বেহালদশার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতাকেই দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা।

    চট্টগ্রাম বিমান বন্দর সড়ক থেকে ছবি তুলেছেন বাংলাদেশ মেইলের আলোকচিত্রী কাঞ্চন চক্রবর্ত্তী।

    নগরীর কাঠগড়ের বাসিন্দা পোষাককর্মী সুমাইয়া ইসলাম জানায়, কাঠগড় থেকে যাত্রীবাহি বাসে চড়ে প্রতিদিন ইপিজেডের একটি পোষাক কারখানায় আসা যাওয়া করলেও গত দুদিন ধরে তার সময়মত কর্মস্থলে পৌছাতে পারেনি। ফলে অফিস থেকে তার চাকরি চলে যাওয়ার হুমকি পেয়েছেন। এদিকে তিন সন্তানের সংসারের খরচ যোগাতে আজ শুক্রবার বন্ধের দিনেও তিনি ওভারটাম করে ক্ষতিটা পুষিয়ে নেওয়ার জন্যই কর্মস্থলের উদ্দ্যেশে ঘর থেকে বের হন। কিন্তু বন্ধের দিনেও তীব্র যানজটে পড়ে আজও তার কর্মস্থলে যেতে দু ঘন্টার বেশি সময় দেরি হয়।

    ফলে তাকে ওভারটাইমের উদ্দ্যেশে আর কাজে যোগ দিতে দেয়নি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। এদিকে ডিউটি না করলেও যানযটের কবলে পড়ে বাসায় যেতে ছুটির সময় হয়ে যাচ্ছে। এখনে যানজটেই বসে আছি। এভাবে চলতে থাকলে আমার মতো অনেকেরই চাকরি চলে যাবে বলে মত প্রকাশ করেন এ পোষাক কর্মী।

    চট্টগ্রাম বিমান বন্দর সড়ক থেকে ছবি তুলেছেন বাংলাদেশ মেইলের আলোকচিত্রী কাঞ্চন চক্রবর্ত্তী।

     

    আব্দুল করিম নামে ১০ নম্বর রুটের এক বাস চালক জানিয়েছে, গত দুদিন ধরে নিজের পকেট থেকেই বাসের মালিককে নিজের পকেট থেকেই টাকা দিতে হচ্ছে। দিনে এ রুটে কমপক্ষে ১০-১২ বার আসা যাওয়া করলেও গত কদিন ধরে একবার বহদ্দারহাট গিয়ে আরেকবার কাঠগড় যেতেই দিনের সময়টা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পক্ষে এ রুটে আর যানবাহন চলাচল করার কোন উপায় থাকবে না।  পরিবার স্বজনরা না খেয়ে থাকতে হবে।

    এদিকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কটি যান ও জনগনের চলাচল প্রতিবন্ধকতামুক্ত রাখতে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের প্রতি বিনীত আহবান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি আজ ১২ জুলাই শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫ টায় নগরীর জামালখানস্থ একটি বেসরকারী সংস্থার কার্যালয়ে নাগরিক উদ্যোগের এক জরুরী সভায় এ আহবান জানান।

    সুজন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করছি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক সড়কটি যান ও জনগনের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সে অবস্থা আরো মারাত্মক হয়ে উঠেছে যা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। একদিকে নগরীর ভাঙ্গা রাস্তা অন্যদিকে বৃষ্টির কারণে বিমানবন্দর সড়কটি বাকী শহর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ীতে অবস্থান করেও কর্মজীবি নারী পুরুষ তাদের কর্মস্থলে সময়মতো পৌঁছাতে পারছে না।

    অন্যদিকে নিজ গন্তব্য থেকে কয়েক ঘন্টা আগে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েও সময়মতো ফ্লাইট ধরতে ব্যর্থ হয়েছে হাজীসহ বিদেশগামী যাত্রীগণ। নির্ধারিত সময়ের এক থেকে দেড় ঘন্টা পরে বিমান ছাড়লেও দেখা যাচ্ছে হজ্ব যাত্রীর আসন শুন্য। আর যারা কোনভাবে ফ্লাইট ধরতে পেরেছে তাদেরকে সৌদি আরবের জেদ্দা বিমানবন্দরে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

    তিনি আরো বলেন, বর্ষা মৌসুম আসার পূর্বেই জনদূর্ভোগের কথা মাথায় রেখে আমরা বিভিন্ন সেবা সংস্থার কাছে গিয়ে জনদূর্ভোগ লাঘবে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম কিন্তু সে অনুরোধ অরণ্য রোদনে পর্যবসিত হয়েছে ফলতঃ এ কয়দিন নগরবাসীকে অবর্ণনীয় দূর্ভোগে পড়তে হয়েছে।

    টাকার অংকে সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতি হাজার কোটি টাকার উপরে ছেড়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নের প্রতি আন্তরিক বিধায় একের পর এক মেগা প্রকল্পের অনুমোদন এবং বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অর্থও বরাদ্ধ করেছে। যা এ যাবতকালে অন্যান্য সরকারের তুলনায় সর্বোচ্চ বরাদ্ধও বটে। তারপরও নগরবাসীকে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। তবে গতকাল সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী রুবি সিমেন্টের সীমানা দেওয়াল ভেঙ্গে দেওয়ার মতো সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছে সুজন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে এভাবেই জলাবদ্ধতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী প্রতিষ্টান এবং ব্যাক্তির বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

    সুজন বলেন, বিমানবন্দর সড়কের প্রধাণতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বিমানবন্দর সড়কের আশেপাশে গড়ে উঠা অবৈধ অফ ডক কন্টেইনার ইয়ার্ডগুলো। অতচ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিধি নিষেধে ২০ কিলোমিটারের ভিতর অফ ডক কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কি কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষ জেগে থেকে ঘুমের ভান করছে তা বোধগম্য নয়।

    তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের কাছে অনুরোধ করে বলেন, বিমানবন্দর সড়কটিকে বাঁচাতে হলে একটি সুষ্টু স্থায়ী কর্মপরিকল্পনা গ্রহনের কোন বিকল্প নেই। আপাততঃ ভোর ৬টা থেকে সকাল ১০টা এবং বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যদি বিমানবন্দর সড়কে লরি, ট্রাক, কাভারভ্যানসহ ভারী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা গেলে পুরো নগরবাসী এর সুফল পাবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস।

    নাগরিক উদ্যোগের উপদেষ্টা হাজী মোঃ ইলিয়াছের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আব্দুর রহমান মিয়া, সাইদুর রহমান চৌধুরী, সংগঠনের সদস্য সচিব হাজী মোঃ হোসেন, মোঃ নিজাম উদ্দিন, মোরশেদ আলম, ছালেহ আহমদ জঙ্গী, অধ্যক্ষ কামরুল হোসেন, হাফেজ মোঃ ওকার উদ্দিন, মোঃ শাহজাহান, শেখ মামুনুর রশীদ, জাহাঙ্গীর আলম, সোলেমান সুমন, সমীর মহাজন লিটন, স্বরূপ দত্ত রাজু, এম ইমরান আহমেদ ইমু, মোঃ ওয়াসিম, মোঃ মাহফুজ, মনিরুল হক মুন্না প্রমূখ।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স…