অন্তঃসত্তা হওয়ায় আইনজীবির জিম্মায় মুক্ত
    শিশু গৃহকর্মীর উপর অমানুষিক নির্যাতন : নারী আইনজীবি গ্রেফতার

    চট্টগ্রাম মেইল : বাসায় আটকে রেখে দশ বছরের শিশু গৃহকর্মীকে অমানুষিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক নারী আইনজীবির বিরুদ্ধে। অভিযোগের পর নির্যাতনের শিকার ওই গৃহকর্মীকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পুলিশ নির্যাতনকারী গৃহকর্তী শ্যামলী ভট্টাচার্য্যকে আটক করে।

    পাঁচলাইশ থানা পুলিশ জানিয়েছে আটক ওই নারী আইনজীবিকে আজ সোমবার দুপুর ২ টার দিকে আদালতে পাঠানো হয়।

    আদালতে দায়িতে থাকা এসি প্রসিকিশন মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন জানান ১০ বছরের শিশু রিয়াদকে নির্যাতনের অভিযোগে এক নারী আইনজীবিকে আটক করে আজ দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ আবু সালেহ নোমানের আদালতে হাজির করা হয়। এসময় আসামী পক্ষের আইনজীবিরা বিচারকের কাছে শ্যামলীর জামিন প্রার্তণা করলেও আদালত জামিন না মঞ্জুর করে।

    তবে আটক আইনজীবি শ্যামলী ৮ মাসের অন্তঃসত্তা হওয়ায় আদালত চট্টগ্রাম আইনজীবি সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জিম্মায় তাকে মুক্ত করার আদেশ দেন বিচারক।

    এর আগে শুক্রবার দুপুরে নগরের হামজারবাগের মোমিনবাগ আবাসিক এলাকার ১ নাম্বার রোডে অবস্থিত আইনজীবি শ্যামলীর ছয়তলার বাসার গ্রিল কেটে আটতলার ছাদে উঠে যায় নির্যাতনের শিকার রিয়াদ। পরে ওই ভবনের সিকিউরিটি গার্ডের সহায়তায় শিশু গৃহকর্মী রিয়াদকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা।

    পরে পুলিশকে খবর দিলে রিয়াদকে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। রিয়াদের বরাতে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া জানিয়েছেন রিয়াদের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলায়। গত তিন মাস আগে সে শ্যামলীর বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে আসে। গৃহকর্মীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাতে শ্যামলী তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতো। ছেলেটির শরীরে অসংখ্য ক্ষত চিহ্ন দেখে ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর মন্তব্য করে ওসি।

    স্থানীয়রা জানায়, হামজারবাগে একটি ভবনে গৃহকর্তী মহিলার নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন শিশু গৃহকর্মী রিয়াদ (৮)। তার সারা শরীরজুড়ে গরম খঞ্চি দিয়ে চ্যাকা ও কামড় আর মারধরের দাগ রয়েছে।

    ওই ভবনের একজন বাসিন্দা জানান, শিশুটিকে ২ মাস আড়াই মাস বাসায় আটকে রেখে অমানুষিকভাবে নির্যাতন চালাতো গৃহকর্মী শ্যামলী। তিনি একজন উৎশৃঙ্খল নারী। তার স্বামী আদনান মুসলিম হলেও এই মহিলা হিন্দু। সকালে স্বামী স্ত্রী দুজন শিশু আদনানকে বাসায় বন্দি করে বাইরে তালা মেরে চলে যায়। রাতে এসে তার উপর নির্যাতন চালাতো।

    গতকাল দুপুরে ছেলেটি নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ভবনের ৬ তলা থেকে জানালা দিয়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করলে ভবনের দারোয়ানের সহায়তায় এলাকার লোকজন তাকে উদ্ধার করে পুলিশের খবর দেয়। এই ঘটনায় গৃহকত্রী অ্যাডভোকেট শ্যামলী ভট্টাচার্য্যকে রাতে পুলিশ গ্রেফতার করে।

    বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সিনিয়র ডেপুটি গভর্ণর আমিনুল হক বাবু বলেন, শিশু রিয়াদকে উদ্ধারের পর আমি থানায় গিয়েছিলাম তাকে দেখতে। তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। যা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। পুরো শরীর দগদগে হয়ে গেছে। শরীরে হাতে কামড় এবং গরম লোহার খঞ্চি দিয়ে চ্যাকা দেয়া হয়েছে। আমি এই নারীর বিচার দাবী করছি।

    বিএম/রাজীব..