ফটিকছড়ি জুড়ে ছেলে ধরা গুজবে আতংক, স্কুলে যাচ্ছেনা শিশুরা

    এম.জুনায়েদ, ফটিকছড়ি প্রতিনিধি : 

    চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে ছেলে ধরা গুজব। এতে স্থানীয় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পাঠাতেও ভয় পাচ্ছেন অভিভাবকরা।

    প্রায় সপ্তাহ ধরে উপজেলার ফটিকছড়ি পৌরসভা , নাজিরহাট পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ছেলে ধরা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। গুজবের ধরণটা অনেকটা এমন–অমুক জায়গা থেকে এক ছেলেকে ছেলেধরা নিয়ে গেছে। যাকে বলা হচ্ছে তিনি বলছেন, অমুক জায়গা থেকে তিন চারজন নিয়ে গেছে। এছাড়া মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠিয়েও একে অপরকে সতর্ক করছেন।

    একটি ম্যাসেজে দেখা যায়, পদ্মাসেতুর জন্য মানুষের মাথার প্রয়োজন হচ্ছে, তাই ছোট ছোট বাচ্চাদের ধরে নিয়ে মাথা কেটে সেতুতে ব্যবহার করা হচ্ছে মর্মে আজগুবি খবর এখন পুরো ফটিকছড়ি জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।

    উত্তর রাঙ্গামাটিয়া এলাকার গৃহবধূ শাহেদা বেগম এই প্রতিবেদককে বলেন, মাওলানা শফি সাহেব হুজুরের মাদ্রাসা থেকে দুইজন ছেলে ধরে নিয়ে গেছে। তাকে কে বলেছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমার ভাগিনি বলেছেন। ভাগিনিকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমিও মানুষের মুখে শুনেছি। পরে যাচাই শেষে এই প্রতিবেদক বিষয়টি নিছক গুজবই মনে করেন।

    ইতোমধ্যে ছেলে ধরা সন্দেহে গুজব ছড়িয়ে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি কয়েকজন মানসিক প্রতিবন্ধি ও ফকিরকে মারধর করার খবরও ফেসবুক মারফত জানা গেছে। তবে এর কোন সত্যতা এখনো পাওয়া যায়নি। আর এ বিষয়ে যাচাই বাছাই না করে কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর ছড়ালে স্থানীয় সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

    আজাদী বাজার মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা মুজহিরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন আগে বাবুনগরের পেটান চৌধুরী বাড়ির এক ছেলে লেখাপড়ার ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এটিকে নিয়ে গুজব রটে যায়,ছেলেটিকে ছেলেধরা নিয়ে গেছে। অবশ্য, পরে ছেলেটিকে এক জায়গা থেকে পাওয়া যায়। সে নিজেই সেখানে লুকিয়ে ছিলেন বলে স্বীকার করে।

    এদিকে ছেলে ধরা গুজবের ফলে উপজেলার বিভিন্ন স্কুল মাদরাসায় শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে গেছে। অভিভাবকরা জানান, এলাকায় ছেলে ধরা আসছে খবরে ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে।

    দক্ষিণ রাঙ্গামাটিয়া আল মদিনা মহিলা মাদরাসার পরিচালক মাওলানা হাবিবুল হক বলেন, ছেলে ধরা আতংকে মাদরাসার প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি অর্ধেকের চেয়েও কমে গেছে।

    এব্যাপারে ফটিকছড়ি থানার ওসি বাবুল আকতার বাংলাদেশমেইলকে বলেন, ছেলে ধরা খবরটি একটি নিছক গুজব। উপজেলার কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে তার কোন সত্যতা নেই। সোস্যাল মিড়িয়ায় যারা এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের ব্যপারে আমরা খোজ পেয়েছি।

    এসব অপপ্রচারকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। গুজবে কান না দিয়ে তিনি অভিভাবকদের আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। সেই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে গুজব না ছড়ানোর পরামর্শ দেন।

    বিএম/রাজীব সেন..