সেই নুসরাতের আলিম পরীক্ষার ফলাফল

    আজ প্রকাশিত হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল। এই বছরের পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী ছিলেন ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিও। তবে একটি মাত্র পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেতে পেরেছিলেন তিনি।

    পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন ৬ এপ্রিল তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় খুনিরা। পরবর্তীতে ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুসরাত মারা যান। ফলে কোরআন ও হাদিস বিষয়ের ওই একটি পরীক্ষা বাদে বাকি পরীক্ষাগুলো দেওয়া হয়নি তার।

    কোরআন মাজিদ ও হাদিস বিষয়ের ওই পরীক্ষায় তিনি ‘এ’ গ্রেড পেয়েছেন। বাকি পরীক্ষাগুলোতে অংশ নিতে না পারায় তাকে অনুত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে।

    মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. হুসাইন বলেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় নুসরাতসহ ১৭৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে ১৫২ জন পাস করে। নুসরাতসহ ২৭ জন ফেল করে। এ মাদরাসার এবার পাসের হার ৮৬.৮৬ শতাংশ।

    নুসরাত জাহান রাফি মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল জানিয়ে মো. হুসাইন আরও বলেন, সবগুলো পরীক্ষা দিতে পারলে নুসরাত ভালো ফলাফল করতো। লেখাপড়ার প্রতি মেয়েটার কতটা আগ্রহ থাকলে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পরীক্ষায় অংশ নেয়।

    পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর নুসরাতের সহপাঠী ও স্বজনরা শোক ধরে রাখতে পারছেন না। বুধবার মাদরাসায় পরীক্ষার ফলাফল জানতে আসা শিক্ষার্থীরা নুসরাতের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় উপস্থিত শিক্ষকদের চোখেও নেমে আসে শোকের অশ্রু। সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

    ফলাফল জানতে আসা নুসরাতের সহপাঠী তামান্না, নিশাত সুলতানা, নাসরিন সুলতানা, সাইফুল ইসলাম ও জাহেদুল ইসলাম জানান, আজ নুসরাতেরও পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে আনন্দে থাকার কথা ছিল। কিন্তু পাষণ্ডদের নির্মমতায় নুসরাত আজ আমাদের মাঝে নেই। দুটি পরীক্ষায় সে ‘এ’ গ্রেড পেয়েছে। বাকী পরীক্ষা দিতে পারলে নুসরাত ভালো ফলাফল করতো বলে তারা জানান।

    এর আগে গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী রাফিকে মাদরাসার ছাদে কৌশলে ডেকে নিয়ে যান হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা। সেখানে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হলে তার শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এর চারদিন পর ১০ এপ্রিল আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাফি মারা যান।

    উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে সোনাগাজী সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন। এমন অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে ওসি মোয়াজ্জেম নিয়ম ভেঙে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিওধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

    ফলাফল প্রকাশের দিনে নুসরাত হত্যাকাণ্ডে দায়ের হওয়া মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বুধবার বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস সামশ জগলুল হোসেনের আদালতে বেলা ২টায় এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গত ১৬ জুন শাহবাগ থেকে মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

    বিএম/এমআর

    আরো : ‘প্রেম প্রত্যাখ্যান’:কলেজছাত্রীর শরীরে আগুন দিলো দুর্বৃত্তরা