মহসিনের প্রশংসায় সিএমপি কমিশনার : ১৬ থানায় হ্যালো ওসি বুথের নির্দেশনা

    চট্টগ্রাম মেইল : চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার ওসি মোহসিনের ব্যাতিক্রমী উদ্দ্যেগ হ্যালো ওসি প্রশংসা কুড়িয়েছে সিএমপির সর্বমহলে। ব্যাতিক্রমী এ উদ্দ্যেগতার ভুয়সী প্রশংসা করে ওসি মোহসিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ১৬ থানায় “হ্যালো ওসি” কার্যক্রম চালুর নির্দেশ দিয়েছেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।

    বুধবার (১৭ জুলাই) সিএমপির মাসিক অপরাধ সভায় সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এই নির্দেশনা দেন। এসময় তিনি বলেন, পুলিশিং কার্যক্রমকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে “হ্যালো ওসি” একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এ উদ্যোগের আওতায় প্রতিটি থানা এলাকায় একটি বুথ স্থাপন করে স্ব স্ব ওসিগণ বুথে সরাসরি উপস্থিত থেকে এই কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

    জনগণ এ সময় নিজ এলাকার চলমান সমস্যা ও অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি ওসিকে তথ্য প্রদান করবেন। ওসিগণ তাৎক্ষনিক ভাবে সে সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নিবেন। প্রতি মাসে সকল থানার অফিসার ইনচার্জগণ স্ব স্ব থানায় এক বা একাধিকবার এ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

    এ প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার আরো বলেন, জনগণের আস্থায় যেতে “হ্যালো ওসি” একটি অনুকরণীয় উদ্যোগ। এই উদ্যোগে ব্যাপক সাড়া আমাকে আশান্বিত করেছে। তাই নগরীর ১৬ থানাতেই এই কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

    সেবা প্রার্থীরা সরাসরি ওসি’র সাথে কথা বলে সমাধানযোগ্য বিষয়গুলো তাৎক্ষণিকভাবেই সমাধান পাবেন। অন্যান্য আইনি সহায়তার বিষয়েও ওসিরা জনগণকে এখান থেকেই সরাসরি সহযোগিতা করবেন। যে সকল মানুষ থানায় আসতে ভয় পায় কিংবা সংকোচ বোধ করে এ সেবার মাধ্যমে তারা সরাসরি তাদের সমস্যার বিষয়ে অফিসার ইনচার্জ এর সাথে কথা বলে সাধারন ডায়েরী করনঃ ও অন্যান্য আইনী সহায়তা দ্রুত পাবেন।

    এর আগে সাধারণ জনগণের দ্বারে দ্বারে পুলিশি সেবা দিতে হ্যালো ওসি’র প্রথম কার্যক্রম শুরু হয় গত ১০ জুলাই বুধবার। নগরীর বিআরটিসি জামতলা বস্তি এলাকায় বিকেল সোয়া ৫টা থেকে সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত কোতোয়ালি থানার ওসি তার টিম নিয়ে প্রথমবারের মতো হ্যালো ওসি বুথের কার্যক্রম শুরু করেন।

    মানুষ থানায় আসতে নাকি লজ্জা পায়। আর ওসির কাছে যেতে ভয় পায়! মানুষের সেই লাজ ভাঙাতে আর ভয় কাটাতে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহসিন নিজেই গেলেন জনগণের দৌড় গোড়ায়। চৌদ্দ জামতলা এলাকায় হাজির হয় হ্যালো ওসি বুথ নিয়ে। মানুষও সাড়া দিয়েছে বেশ। তাদের অভিযোগ নির্ভয়ে জানিয়েছে।

    এলাকাবাসী অপরাধমুক্ত এলাকা গড়তে সুন্দর কিছু প্রস্তাবও দিয়েছে। সমাধানযোগ্য বিষয়গুলো তাৎক্ষণিকই সমাধান করেছে ওসি মোহসিন। অন্যান্য সমস্যাগুলোও তিনি শুনেছেন মনোযোগ সহকারে, আইনি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে সকলকে। কথা দিয়েছে কোতোয়ালি থানাকে সবার আস্থা ও ভরসার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার।

    ওসি মহসিনের শুরু করা ব্যাতিক্রম এ উদ্দ্যেগের সংবাদটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর প্রশংসা কুড়িয়েছে গোটা পুলিশ প্রশাসনে। তাই প্রশংসা আর আস্তার সে জায়গাটা স্থায়ী করতে বুধবার নগর পুলিশের মাসিক অপরাধ সভায় বিষয়টি আলোচনায় আনেন সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমান। ওসি মহসিনের মতো প্রতিটি থানার প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে সাধারণ লোকজনের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের নির্দেশনা দেন পুলিশ কমিশনার।

    নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) আবু বক্কর সিদ্দিক গণমাধ্যমকে জানান, নগরীর ১৬ থানার ‘হ্যালো ওসি’ বুথ স্থাপন করে দুর্গম এলাকাতেও স্ব-স্ব থানার ওসিরা উপস্থিত থেকে সাধারণ জনগণের কথা শুনবেন। তাৎক্ষনিক সমাধানের চেষ্টা করবেন। কোন ঘটনায় চাঞ্চল্যতা থাকলে তা থানার অন্যান্য সহযোগী প্রশাসনকে সাথে নিয়ে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করবেন।

    এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিএমপির বাকলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ নেজাম উদ্দিন বলেন, এ উদ্যোগের ফলে পুলিশের সাথে সাধারণ মানুষের দুরত্ব আরো কমবে। যারা ভয়ভীতির কারণে পুলিশের কাছে আসতে চায়না তাদের সে ভয় কেটে যাবে। এ কর্মসূচিতে আমরা ওসিরা এখন এলাকায় গিয়ে মানুষের সুবিধা অসুবিধা জানতে চাইবো এবং সমাধানের চেষ্টা করবো। কমিশনার স্যারের এই ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ সব ওসিরা সানন্দে গ্রহণ করেছেন। শীঘ্রই প্রতি এলাকায় হ্যালো ওসির বুথ তৈরী করে কার্যক্রম শুরু করবো।

    ব্যাতিক্রমী এ আয়োজনে সকলের সহযোগীতা কামনা করে ওসি মোহসিন বলেন, কোন এলাকায় অপরাধ বেশি হয়, অপরাধ দমনে করণীয় কি, অপরাধ দমনে পুলিশ কতটুকু ভূমিকা পালন করতে পারে এসব বিষয়ে আমি সাধারণ মানুষের মতামত আশা করছি। পাশাপাশি এলাকাবাসীর ছোটখাট সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করার অঙ্গিকার করছি।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স..