৬ মাসে বিচ্ছিন্ন ১৫০ সংযোগ, রাজস্ব আদায় দেড় কোটি
    মাঠে ওয়াসার ভ্রাম্যমান আদালত : ভোগান্তি ও হয়রানির অভিযোগ গ্রাহকের

    চট্টগ্রাম মেইল : চট্টগ্রাম ওয়াসার গ্রাহকদের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবং অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও লাইসেন্সবিহীন নলকূপ ব্যবহার ঠেকাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে। অভিযানের নের্তৃত্বে রয়েছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বেগম লুৎফুন নাহার।

    পাশাপাশি ওয়াসার গ্রাহকদের বকেয়া বিল ও রাজস্ব আদায়ে কঠোর হয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযান চলাকালে চট্টগ্রাম ওয়াসার রাজস্ব কর্মকর্তাগণ, এলাকার সাধারণ মানুষ এবং সিএমপির পুলিশের একটি টীম স্বতঃস্ফুর্ত সহযোগিতা করেন।

    ভ্রাম্যমান আদালত সূত্রে জানা গেছে, ওয়াসার পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতের কল্যাণে গত ছয় মাসে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। প্রতিমাসে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয়মাসে শুধু রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৩১ হাজার ১৩২ টাকা।

    তাছাড়া চলতি বছরেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ গ্রাহকের পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং বকেয়া বিল অনাদায়ে প্রায় দে শতাধিক গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এছাড়াও কয়েকজন গ্রাহককে ইতিমধ্যে জরিমানা ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। জব্দ করা হয়েছে অবৈধ ভাবে সংযোগ স্থাপন করে পানি বিক্রিতে ব্যবহৃত মোটর।

    এসব ভ্রাম্যমান আদালতে নেতৃত্ব দেওয়া ওয়াসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বেগম লুৎফুন নাহার বলেন, নিয়মিত অভিযানের ফলে প্রতিমাসে অন্তত ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হচ্ছে। গ্রাহকরা সচেতন হচ্ছে। আগের তুলনায় অনেক কম হচ্ছে ওয়াসার পানি চুরি।

    তিনি বলেন, সুষ্ঠু পানি সরবরাহের লক্ষ্যে এ ধরনের অভিযান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি লাইসেন্সবিহীন নলকূপগুলো লাইসেন্সের আওতায় এনে ওয়াসার আয়ের পরিধি আরো বাড়ানো হচ্ছে বলে জানায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন নাহার।

    ওয়াসার হিসাব মতে ২৬টি পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি ২৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৪ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। এভাবে ফ্রেবুয়ারিতে ২১টি পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৪ লাখ ১১ হাজার ১শ ৫৬ টাকা। মার্চে ২৩ লাখ ২১ হাজার ৭১২ টাকা ও ২৬টি পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এপ্রিল মাসে রাজস্ব আদায় হয় ২৫ লাখ ৪২ হাজার ৫৩৫ টাকা বিচ্ছিন্ন করা হয় ২৫টি পানির সংযোগ। মে মাসে ২৪ লাখ ১১ হাজার ৬৬১ টাকা ও ২৮টি পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং জুনে ২৪টি পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি বকেয়া রাজস্ব আদায় হয় ২৪ লাখ ১২ হাজার ৯৭৪ টাকা।

    ওয়াসা’র বাণিজ্যিক শাখার তথ্যমতে প্রায় ৮১ কোটি টাকা এখনো বকেয়া রয়েছে নগরীর আবাসিক-অনাবাসিক গ্রাহকদের কাছ থেকে। এরমধ্যে ৬০ কোটি টাকার মতো পাওনা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক গ্রাহকের কাছে। তবে এসব বকেয়া আদায়ে ভ্রাম্যমান আদালত শীঘ্রই আরো কঠোর অভিযান পরিচালনা করবে। এ বিষয়ে সচেতন করতে এসব বকেয়া গ্রাহকদের ইতিমধ্যে ওয়াসা থেকে নোটিশও দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) গোলাম হোসেন।

    সরেজমিনে গ্রাহক ভোগান্তি, অভিযোগের  পাহাড় : এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর অধিকাংশ এলাকায় সরেজমিনে গেলে দেখা যায় ওয়াসার সফলতার গল্পের পেছনে রয়েছে পাহাড়সম অভিযোগও। নগর জুড়ে রয়েছে তীব্র পানি সংকট। এখনো নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কলসি নিয়ে দীর্ঘ লাইনে পানির আশায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় এলাকাবাসীকে। পানির দাবিতে প্রায় সময় হচ্ছে সভা-সমাবেশ। চাহিদা অনুযায়ী পানি না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। আছে হয়রানির অভিযোগও।

    নগরীর হালিশহর, বন্দর, পতেঙ্গা, বাকলিয়া, পাহাড়তলী, অলংকারসহ বেশ কিছু এলাকায় গ্রাহকদের সাথে কথা হলে অনেকেই অভিযোগে জানায়, ওয়াসার পানি সরবরাহ মোটেও স্বাভাবিক নয়। প্রতিদিন পানি পাওয়া যায় না। দুই-তিন দিন পর পর পানি পাওয়া যায়। তাও কোনো দিন ১০-১৫ মিনিট, আবার কোনো দিন আসেও না। এ ছাড়া পানি সরবরাহের কোনো নির্দিষ্ট শিডিউলও নেই। আবার কোনো কোনো সময় সাত দিন পরও পানি জুটছে। তীব্র গরমে ওয়াসার পানি সংকটে নগর জীবনে এখন ত্রাহি অবস্থা।

    ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার গ্রাহক সংখ্যায় বর্তমান ৭২ হাজার ৪শ ১১ জন। নগরীর ৪৫ শতাংশ এলাকা উঁচু-নিচু পাহাড়ি ভূমি। মহানগরী এলাকায় পানির চাহিদা দৈনিক প্রায় ৫০ কোটি গ্যালন। কিন্তু চট্টগ্রাম ওয়াসা সরবরাহ করতে পারছে ৩৫ থেকে ৩৬ কোটি গ্যালন। যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

    অথচ গত চার বছর ধরে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ সংকট নিরসন করে নগরবাসীর কাছে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের আশ্বাস দিয়ে আসছেন।

    পানির চাহিদা ও সরবরাহ ঘাটতি পূরণে বর্তমানে ওয়াসার ৩টি প্রকল্প চলমান রয়েছে জানিয়ে ওয়াসা থেকে বলা হয় তিনটি প্রকল্পের মধ্যে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-২ এর কাজ শেষ হলে শতভাগ পানির চাহিদা পূরণ হবে।

    বিএম/আরএসপি..