স্বেচ্ছায় পদত্যাগকারী নেতাই এখন পাহাড়তলী বিএনপির সভাপতি
    সাবেক মেয়র মঞ্জুর মত ডিগবাজি ভায়রা বাবুলের

    বিশেষ প্রতিবেদন : সামনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। প্রধান বড় দুটি রাজনৈতিক দলেও চলছে নানান হিসেব নিকেশ। মেয়র পদে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ছাড়াও নির্বাচনের বিভিন্ন ছক কষতে ব্যস্ত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরাও। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যস্ত ডিগবাজী খাওয়া নেতারাও।

    এরই মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার ঝড় তুলেছেন পাহাড়তলী থানা বিএনপির সভাপতি হাজী বাবুল হক। তার পদটি নিয়ে রীতিমতো তিনি তামাশার জন্ম দিয়েছেন। যিনি চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদী ও দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিএনপির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। সম্প্রতি বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার ঘোষনা এলে বিএনপিতে স্বপদে পূনঃর্বহাল হওয়ার জন্য শাহাদাত ও বক্করের স্বরণাপন্ন হন। মূলত বিএনপি থেকে পূনরায় কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ার জন্যই এ নেতার ডিগবাজী বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা।

    অনেক নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পাহাড়তলী থানা বিএনপির সভাপতি পদে আসীন থেকেও হাজী বাবুল হক বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ করেনি। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সে বিএনপি প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সে বিএনপি নেতা হওয়া সত্বেও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তার ভায়রা সাবেক মেয়র মনজুর আলমের পক্ষে কাজ করেছিল।

    তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী দলীয় প্রার্থীর মতামত ছাড়া নগর বিএনপি তাকে স্বপদে পূনঃর্বহাল এর কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা। অন্যদিকে বিগত বেশ কিছুদিন ধরে পদত্যাগ ও স্বপদে বহাল থেকে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ায় বাবুলের প্রতি ক্ষুদ্ধ নেতা কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবী করেছে হাইব্রীড নয়, তৃনমূলের মূল্যায়ন চাই।

    এ বিষয়ে কথা হয় হাজী বাবুল হকের সাথে। তার কাছে প্রশ্ন ছিলো অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে কয়েকজন সঙ্গিসহ বিএনপির কোন কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ততা না থাকার ঘোষণা দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলেও বর্তমানে দলের বিভিন্ন কর্মসুচি ও পাহাড়তলী ওয়ার্ড বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনে অন্যতম ভুমিকার রহস্য কি? মুঠোফোনে তিনি বাংলাদেশ মেইলকে বলেন, আমি শারিরীকভাবে সেসময় খুবই অসুস্থ ছিলাম, দলের কোন কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করার মতো পরিস্থিতি ছিলো না। তাই আমি পত্রিকায় ঘোষণা দিয়ে নেতাকর্মীদের অবগত করে নীরব ছিলাম।

    তিনি বলেন, বর্তমানে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে তাই আমার প্রাণের দলটির দুঃসময়ে দলকে সুসংগঠিত করতে আবারো হাল ধরার চেষ্টা করছি। বিএনপিতে যে ফের কাজ শুরু করেছেন অনেক নেতাকর্মী সেটা জানে না কিংবা পুণঃ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সকলকে জানানো উচিৎ কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাকে কিছুই জানায়নি, তারা যদি আমাকে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে বলে তবে আমি সেটা করবো।

    এ বিষয়ে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বাংলাদেশ মেইলকে বলেন, নগরের পাহাড়তলী থানা বিএনপির সভাপতি হাজী বাবুল হক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজ পদ থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দিয়েছিলো ঠিকই তবে তিনিই আবার আমাদের কাছে স্বপদে বহাল থাকার জন্য আবেদন করেছে।

    তিনি এ বিষয়টি নিয়ে হৈচৈ না করার পরামর্শ দিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দ্যেশে বলেন, বাবুল যদি অন্যদলে যোগ দিতেন সেক্ষেত্রে ব্যপারটা আমরা দল থেকে অন্যভাবে নিতাম। তবে তিনি দল থেকে অব্যাহতি নিলেও আওয়ামী লীগ কিংবা অন্য দলে যোগদান করেনি। হয়তো উনি নীরব ছিলো।

    তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কিংবা অন্য কোন দলের কোন কর্মসূচিতে তাকে দেখা যায়নি, এখন উনি যখন নিজ থেকেই দলের দুঃসময়ে আবারও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার আগ্রহ প্রকাশ করে আমাদের কাছে আবেদন করে বিষয়টা আমরা বিবেচনার পক্ষে এনেছি।

    অন্যদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, যে কোন রাজনৈতিক নেতাকর্মীর জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার মত। বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে অকৃতকার্য হলেও তাকে বিশেষ বিবেচনায় প্রমোশন দেওয়া যায় কিন্তু যে ব্যাক্তি থানার সভাপতির মত গুরু দায়িত্বে থেকেও নির্বাচনী কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত ছিলনা অথবা বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেনি থাকে কোন ভাবেই বিএনপিতে থানার সভাপতি পদে পূনঃর্বহালের সুযোগ নেই।

    তাছাড়া যেহেতু তিনি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিএনপির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে এবং বিএনপিকে জনসম্মুখে হেয় করেছে সেহেতু তার উচিত হবে পত্রিকায় পূনঃরায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং নতুন করে দলের প্রাথমিক সদস্য পদের জন্য আবেদন করা।

    বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র এ নেতা বলেন, নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করা সত্বেও সে যদি বিশেষ কোন কারণে মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আস্থাভাজন হয় তাঁরা চাইলে তাঁকে নগর বিএনপির কোন পদে আসীন করতে পারে তবে সরাসরি থানা বিএনপির সভাপতি পদে তাঁকে পূনঃর্বহাল করার কোন সুযোগ নেই।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির আরো এক সিনিয়র নেতা বলেন, বাবুল পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। উনি ভেবেছিলেন বিএনপি আর কোন নির্বাচনে যাবে না। এখন যখন উনি দেখছেন বিএনপি আগামী সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তখন তিনি ওই এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হতে পুনরায় দলে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর আগে তিনি বিজ্ঞাপন দিয়ে দলকে হেয় করেছে এটা মোটেও কাম্য ছিলনা।

    তিনি বলেন, বিএনপি থেকে বিতর্কিত মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলমের ভাইরা ভাই পাহাড়তলী থানা বিএনপির সভাপতি হাজী বাবুল হক। মেয়র মঞ্জু নির্বাচনের চলাকালীন মাত্র ১ ঘন্টার মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়ে বিএনপির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ঠিক তেমনিভাবে দলের দুঃসময়ে মামলা থেকে বাঁচতে এবং গ্রেফতার এড়াতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পদত্যাগ করেন বাবুল হক। এ দুজনের কারণে বিএনপি এখন নেতাকর্মীদের প্রশ্নের সম্মুখিন বলেই মন্তব্য করছে অনেক নেতাকর্মী।

    এদিকে গত কিছুদিন ধরে পদত্যাগ করে দলকে হেয় করেও বাবুলের স্বপদে বহাল থাকা নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ অভিনন্দন জানিয়ে শুভেচ্ছা পোস্ট দিচ্ছে আবার অধিকাংশই তাকে স্বপদে পুন বহাল করলে দল থেকে বের হয়ে যাবার ঘোষণাও দিয়েছে। অনেকের অভিযোগ, সুবিধাবাদী নেতাদের মধ্যে বাবুল হক অন্যতম। দলের দুঃসময়ে তিনি নিজেকে বাঁচাতে ব্যস্থ থাকেন। এর অংশ হিসেবেই এই পদত্যাগের নাটক।

    সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাবুল হকের পদত্যাগ ও স্বপদে বহাল নিয়ে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি মন্তব্য তুলে ধরা হলো।

    মহিলা দলের নেত্রী আঁখি সুলতানা তার ফেসবুক ওয়ালে হাইব্রীড নয়, তৃনমূলের মূল্যায়ন চাই শিরোনামে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন আমরা আর কত নগ্নতার পরিচয় দেব। কত আর হেরে যাব, দলে হঠাৎ ধুমকেতু সম ছুটে আসা হাইব্রিড নামক অপাংক্তেয়র কাছে ??? কেন তারা আমাদের এদলে এতটা মূল্যবান? কারন এ দলে কোন জবাবদিহিতার রাজনীতির চর্চা হয় না। এ দলে তৃনমূলের কোন সম্মান দলপতিরা দেন না। দিলে আজ কোন ভাবেই বাবুল হক হাজী সাহের এত তামাশার জন্ম দিয়ে পদত্যাগ করে, ৫ মাসের মাথায় আবার এ দলে ভিড়ার সাহস করতেন না ।

    দলের দুর্দিনে তিনি আওয়ামী আঁতাত করে রাতারাতি অসুস্থ হয়ে, দলের নেতাকর্মী ছেড়ে পালান। বার্ধক্যতায় ভোগেন। হঠাৎ তিনি কি এমন ঔষধ খেলেন যে, বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা দূর হয়ে গেল? পদত্যাগের সময় তখন ওনার মনে হয়নি যে এ দল ঘুরে দাঁড়াতে পারে আগামীতে আবার। লীগে নির্বাচন বানিজ্যে দর কষাকষি মন মত হয়নি, তাই বিএনপিতে এলেন বানিজ্য করতে? গেলেন লীগের পতাকা তলে। লীগে সুবিধা করতে পারবেননা জেনে বিএনপিতে আসতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করলেন। কারন দলে সুদিনের হাওয়া বইছে, তাই আসতে পাগল হলেন।

    কেন? ওনার মত একজনকে দলে ফিরিয়ে না নিলে কি দল দেউলিয়া হবে?মহাসাগরের ১/২ ফোটা জল চলে গেলে সাগরের কিছু হয় না। উনি দলে ছিলেন না,তখন দল চলেনি?? আমাদের দলে হাইব্রীডের এত দাম?শুনেছি বাবুল সাহেব চালের বস্তা,টাকা ইত্যাদি নাকি কাকে কাকে ঘুষ দিয়ে দলে ভিড়ার চেষ্টা করেছেন,সফলও হয়েছেন !

    তাহলে ৩৫/৪০ বছর যাবৎ যারা বিএনপির রাজনীতি করছেন, তাদের মূল্যায়ন হবে কবে?যারা দলে আজো কোন পদবী পায়নি দল ভালোবেসে কাজ করছে তারা কই যাবে, এসব ভাসমান হাইব্রীডের চালের বস্তার জোরে? এ দলকে এত লোভ কেন তাড়া করে?? বাহ্ বাবুল সাহেব বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গেছেন, জিহ্বা নেড়ে দলে ভিড়ছেন। চমৎকার! সব সম্ভব এ দলে।

    যদি সম্মানিত দলপতিগণ বাবুল হক সাহেবকে দলে ফিরিয়ে নেন,তবে তৃনমূলের একজন হিসেবে আমার অনুরোধ -” দল ত্যাগকারী আমাদের সাবেক মেয়র জনাব মঞ্জুর আলম সাহেবকেও দলে অর্থাৎ বিএনপিতে ফিরিয়ে নেয়া হোক । তাহলে দলের দারিদ্রতা দূর হবে দেখার মত। বাবুল সাহেব চাল,ডাল আর মঞ্জু সাহেব চিনি,চিড়া,তেল দেবেন আমাদেরকে। চমৎকার!

    তবে আজ যারা বাবুল সাহেবকে দলে ফিরাতে, নেতাদেরকে ম্যানেজ করতে,নিজেদের ফায়দা লুটতে ইন্দন যুগিয়েছেন। তারা ভাল করেননি!! আব্দুল্লাহ আল নোমান ভাইর ২ জন বিশ্বস্তজনও নাকি এ খেলার প্রথম সারির খেলোয়াড়ের ভূমিকায় ছিলেন জানতে পারলাম। নোমান ভাইর কঠিন অবস্থান ছিল বাবুল সাহেব এর বিষয়ে। আমরা দলে গনার বাইরে, ছোট কর্মী।তাই আমাদের কথার দাম নেই।

    আজ দলের উপর মহলের খামখেয়ালীপনার জন্যে তৃণমূলের নেতা কর্মীরা অসহায়।তাদেরকে যে বা যারা তুষ্ট করতে পারে, পদবী তারাই পায়। হাইব্রীড হয়েও বস্তা চালের দাপটে তারা দলকে লাথি মেরে যাবার পরও তাদের জায়গা হয়।হয় না কেবল দলের ঘামে শ্রমে নিবেদিত ভাইদের। ১২ নং ওয়ার্ড এ সামশুল আলম ভাইর মত নেতা থাকতে বাবুল সাহেবকে কেন লাগে আমাদের? বাবুল সাহেব আমার শত্রু নন । তবে আমি দলবিরোধী লাট সাহেবকেও কুর্নিশ করতে রাজি নই।এ দল করি বলেই বাবুল সাহেবকে চিনি। নয় চেনার প্রশ্নই আসে না।

    আব্দার — বিএনপির সাবেক মেয়র মঞ্জুর আলমকেও দলে ফিরিয়ে নেয়া হোক। সমস্যা কোথায় ফিরিয়ে নিতে? দু’জনের কেউ তো দলের আপন নন।তবে পয়সা আছে….!!

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স..