ছেলের কাটা হাত নিয়ে বিচার চেয়ে ঘুরছেন বাবা

    প্রকাশ্যে ধরে নিয়ে এক যুবকের হাত কেটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মর্মান্তিক এই ঘটনার পর যা ঘটেছে, সেটা আরও অবিশ্বাস্য। বিচার চেয়ে ছেলের কাটা দুই হাত নিয়ে পথে পথে ঘুরছেন বাবা। গেছেন পুলিশের কাছে। ওদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছেলে ভর্তি হাসপাতালে।

    বিচার চেয়ে বাবার আকুতি ছুঁয়ে গেছে পুলিশকে। আর নৃশংসতা দেখে শিউরে উঠেছেন কর্মকর্তারা। বাবাকে সান্তনা দিয়ে তারা বলেছেন, কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে হাসেম খান তাদের বলে এসেছেন, যতদিন আসামিদের ধরা না হবে, ততদিন তিনি কাটা হাত তার কাছে রাখবেন এভাবে।

    রবিবার রাজবাড়ীতে কেটে নেওয়া হয় ২৫ বছর বয়সী যুবক শাহিন খানের দুই হাত। গুরুতর অবস্থায় প্রথমে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সবশেষে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউট বা পঙ্গু হাসপাতালে।

    শাহিন খান রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের হাসেম খানের ছেলে। শোকাতুর হাসেম তার ছেলের দুই হাত পলিথিনের ব্যাগে করে সোমবার সকালে যান রাজবাড়ী সদর থানা এবং পরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। সেখানে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে সান্তনা দিয়ে আশ্বাস দেন কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার।

    ‘আমার ছেলেরে পঙ্গু কইরা দিছে আমি তার বিচার চাই। যতদিন বিচার না হবে, আমার ছেলের হাত আমি আমার কাছে এভাবেই রাখব’- বলতে বলতে চোখেন কোণে পানি চলে আসে বাবা হাসেম খান।

    শাহিনের বাবার অভিযোগ, এলাকার এলাকায় মাদকসেবী ও মাদক বিক্রেতাদের কর্মকাণ্ডে বাধা হয়েছিলেন তার ছেলে। অবৈধ কাজ করতে নিষেধ করায় ক্ষিপ্ত হয় তারা।

    পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘পুলিশে চাকরি করেছি, আমরা অনেক নৃশংস ঘটনা দেখেছি। কিন্তু এই ধরনের অভিজ্ঞতা কখনো হয়নি। বিষয়টি আমার কাছেও খুব খারাপ লেগেছে।’

    ‘শাহিনের বাবা আমার কাছে এসেছিলেন। আমরা তার কথা শুনেছি। তাকে সান্তনা দিয়েছি। আমরা বলেছি, আসামি ধরা হবে। বিচার হবে। কাউকে ছাড়া হবে না।’

    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার বিকাল তিনটার দিকে শাহিনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। আধা কিলোমিটার দূরে কল্যাণপুর মহিলা মাদ্রাসার পাশে নিয়ে দুই হাতই কনুইয়ের উপর থেকে কেটে ফেলে। এসময় শাহীনের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

    ছেলেকে হাসপাতালে পাঠিয়ে সোমবার সকালে বাবা হাসেম খান যান থানায়। মামলা করেন পাঁচজনের বিরুদ্ধে। প্রধান অভিযুক্ত ইসমাইল ও শাহীনের বিরুদ্ধে থানায় মাদকের মামলা ছিল আগে থেকেই।

    পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কল্যাণপুর গ্রামের শাহিন রারীকে সোমবার দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনি ওই মামলার এজাহারভুক্ত তৃতীয় আসামি। তার দেখানো মতে শাহিনের হাত কাটায় ব্যবহত তিনটি চাপাতিও উদ্ধার হয়েছে।

    রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমার মজুমদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ওনি (শাহিনের বাবা) আজকে (সোমবার) সকালে থানায় এসেছিলেন। ঘটনার (ছেলের হাত টাকা) বর্ণনা দেন। পরে আমরা ৩২৬ (হত্যা চেষ্টা) ও ৩০৭ ধারায় মামলা নিই।’

    রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) সালাহউদ্দিন বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রধান অভিযুক্ত ইসমাইলের সহযোগী শাহীনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের ধরতে পুলিশি অভিযান চলছে।’

    পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই আমরা জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হব।’

    বিএম/এমআর