জিলহজ মাসের বিশেষ আমল ও ফজিলত

    আরবি ১২ মাসের সর্বশেষ মাস জিলহজ মাস। এ মাসটি বছরের চারটি সম্মানিত মাসের একটি। অনেক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এ মাস। এ পবিত্র মাসের ১০ তারিখে কোরবানির ঈদ পালনের মাধ্যমে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইলের (আ.) অতুলনীয় আনুগত্য এবং মহান ত্যাগের পুণ্যময় স্মৃতি বহন করেন।

    আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর হজব্রত পালন ও পশু কোরবানি করে থাকে। হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তার পুরো পরিবারের নজিরবিহীন কোরবানির ইতিহাস মানুষকে যে ত্যাগের শিক্ষা দেয়, তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে একজন মুমিন তার সবকিছুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতে সদা প্রস্তুত থাকে। হজরত ইবরাহিম (আ.) এবং তার প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) এবং মা হাজেরার আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশগুলোকে আল্লাহতায়ালা হজের অংশ হিসেবে গণ্য করেছেন। আর এই হজ ও কোরবানি সম্পন্ন হয় পবিত্র জিলহজ মাসে। যার ফলে ইসলামে জিলহজ মাসের গুরুত্ব অতি ব্যাপক।

    মাস হিসেবে রমজান আর দিন হিসেবে এই দশক শ্রেষ্ঠ ও সর্বাপেক্ষা মর্যাদাপূর্ণ। সুরা হজের ২৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারা আল্লাহর নামের স্মরণ করে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে।’ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, নির্দিষ্ট দিন বলতে এখানে জিলহজ মাসের প্রথম দশককে বোঝানো হয়েছে (ইবনে কাসির)। এ মাসের নবম দিন ও রাত আল্লাহর কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই দিনটি আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার দিন। আর রাতটি হলো মুজদালিফায় অবস্থানের রাত। বিশেষ করে ৯ জিলহজ রোজা আদায়ের ব্যাপারে প্রিয় নবী সবচেয়ে বেশি আশাবাদী ছিলেন যে, এদিনের রোজা পালনকারীকে গত এক বছর এবং আগাম (সামনের) এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন। যেভাবে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে আরাফার দিনে রোজা রাখল অবশ্যই আল্লাহতায়ালা তার এক বছর পূর্বের এবং এক বছর পরের তথা দুই বছরের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন’ (মুসলিম)। তবে যারা হজ আদায়ে ওইদিন আরাফায় থাকবেন, তাদের জন্য এই বিধান নয়। কেননা নবী করিম (সা.) আরাফায় থেকে এই রোজা রাখেননি। আরাফায় যারা অবস্থান করবেন, তারা যদি রোজা রাখেন, তাহলে হয়তো অন্যান্য যে ইবাদত-বন্দেগি রয়েছে, তা সঠিকভাবে পালন করতে তাদের কষ্ট হতে পারে। তাই আরাফায় যারা অবস্থান করবেন, তাদের জন্য রোজা না রাখাটাই শ্রেয়।

    জিলহজ মাস মানে হজের মাস। হজের তিনটি মাস শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ। এর মধ্যে প্রধান মাস হলো জিলহজ মাস। এই মাসের ৮ থেকে ১৩ তারিখ—এই ছয় দিনেই হজের মূল কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়।

    কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হজ সম্পাদন সুবিদিত মাসসমূহে। অতঃপর যে কেউ এই মাসগুলোতে হজ করা স্থির করে, তার জন্য হজের সময়ে স্ত্রীসম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহবিবাদ বিধেয় নহে। তোমরা উত্তম কাজে যা কিছু করো, আল্লাহ তা জানেন এবং তোমরা পাথেয়র ব্যবস্থা করবে, আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ, তোমরা আমাকে ভয় করো’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৯৭)।

    বছরের বারো মাসের চারটি মাস বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন। এই চার মাসের অন্যতম হলো জিলহজ মাস। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি, যা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী সেই দিন থেকে চালু আছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান’ (সুরা-৯ তাওবাহ, আয়াত: ৩৬)। এই চার মাস হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। এসব মাসে যুদ্ধবিগ্রহ, কলহবিবাদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

    হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার প্রতি আজহার দিন (১০ জিলহজ) ঈদ পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা আল্লাহ এই উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন।

    তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আপনি বলুন, (যদি আমার কোরবানির পশু কেনার সামর্থ্য না থাকে) কিন্তু আমার কাছে এমন উট বা বকরি থাকে, যার দুধ পান করা বা মাল বহন করার জন্য তা প্রতিপালন করি। আমি কি তা কোরবানি করতে পারি?

    তিনি বললেন, না। বরং তুমি তোমার মাথার চুল, নখ, গোঁফ কেটে ফেলো এবং নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করো। এ-ই আল্লাহর নিকট তোমার কোরবানি’ (আবু দাউদ, নাসাই, ত্বহাবি, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা: ৩০৫)।

    জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত দিনে রোজা পালন করা, রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা উচিত। যথা: নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার ইত্যাদি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জিলহজের ১০ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদতের তুলনায় বেশি প্রিয়, প্রতিটি দিনের রোজা এক বছরের রোজার মতো আর প্রতি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের মতো’ (তিরমিজি, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা: ১৫৮)।

    আরাফার দিন, অর্থাৎ ৯ জিলহজ নফল রোজা রাখা বিশেষ সুন্নত আমল। তবে আরাফায় উপস্থিত হাজি সাহেবদের জন্য এই রোজা প্রযোজ্য নয়। হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে আল্লাহ তাআলা তার (রোজাদারের) বিগত এক বত্সরের ও সামনের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন’ (তিরমিজি, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা: ১৫৭)।

    জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রতি ফরজ নামাজের পর একবার তাকবির বলা ওয়াজিব (ইলাউস সুনান, খণ্ড-৮,
    পৃষ্ঠা: ১৪৮)।

    জিলহজের ১০, ১১ ও ১২ যেকোনো দিন, কোনো ব্যক্তির মালিকানায় নিত্যপ্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকলে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। পুরুষ ও নারী সবার জন্য এ বিধান প্রযোজ্য (ইবনে মাজাহ: ২২৬)।

    হজরত জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর কাছে সাহাবাগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! এ কোরবানি কী?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ.)–এর সুন্নত।’

    তাঁরা পুনরায় বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! তাতে আমাদের জন্য কী সওয়াব রয়েছে?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে।’

    তাঁরা আবারও প্রশ্ন করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! ভেড়ার লোমের কী হুকুম? (এটা তো গণনা করা সম্ভব নয়)’,

    তিনি বললেন, ‘ভেড়ার প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি সওয়াব রয়েছে’ (ইবনে মাজাহ: ২২৬)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত।

    রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে’ (ইবনে মাজাহ: ২২৬)।

    চাঁদ দেখা

    যিলহজ্জের চাঁদ উঠছে কিনা সতর্ক থাকা। কারণ এ চাঁদ উঠা না উঠার ওপর ভিত্তি করে শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়। সঠিক সময়ে চাঁদ দেখতে যদি অবহেলা করা হয় তা হলে হজ, রোজা আর কুরবানি ইত্যাদি আমল একদিন আগেপরে হয়ে যাবে। তাই অনেক আলেম চাঁদ দেখাকে ওয়াজিব বা আবশ্যক বলেছেন।

    চাঁদ দেখে দেখে আমরা যে দোয়া পড়ব। ‘হে আল্লাহ্‌! আপনি এ চাঁদ আমাদের ওপর উদিত করুন কল্যাণ ও ঈমানের সঙ্গে এবং নিরাপত্তা ও ইসলামের সঙ্গে। আমার প্রতিপালক ( হে নতুন চাঁদ!) তোমার প্রতিপালক আল্লাহ। তিরমিজি: ৩৪৫১।

    হজ আদায় করা
    যাদের উপর হজ ফরজ হয়েছে তারা ফরজ হজ আদায় করবো। আর এটিই হল জিলহজের প্রথম দশ দিনের শ্রেষ্ঠ আমল। আল্লাহ্ যাকে তাওফিক দান করেছেন সুতরাং সে হজ আদায় করে নিবে।
    আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর (হে ইবরাহিম) মানুষের মাঝে আপনি হজের ঘোষণা দিন, যাতে তারা আসে পায়ে হেঁটে এবং প্রত্যেক বাহনে করে, যেগুলি আসবে প্রত্যেক দূর-দূরান্তের পথ হতে, যাতে তারা উপস্থিত হতে পারে তাদের উপকারলাভের বিভিন্ন স্থানে। (সূরাতুল হজ্ব-২৭-২৮)

    এরশাদ হয়েছে মানুষের মধ্যে যারা সেখানে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহর জন্য এ ঘরের হজ করা ফরজ। কেউ এটা অস্বীকার করলে আল্লাহ তো বিশ্ব জগতের সমস্ত মানুষ হতে বেনিয়ায। (সূরা আলি ইমরান-৯৭)

    আর হজের ফজিলত হিসেবে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ করল, আর (তাতে) কোনোরূপ অশ্লীলতা করল না ( অর্থাৎ কোনো অশ্লীল কাজ করল না, অশ্লীল কথা বলল না) এবং কোনো পাপাচার করল না সে ঐ দিনের মত (নিষ্পাপ অবস্থায়) ফিরবে যেদিন তার মা তাকে জন্মদান করেছেন। (বুখারি, ১৫২১, মুসলিম, ১৩৫০)

    তিনি আরও বলেছেন- ‘তোমরা বারবার হজ্ব ও উমরা আদায় কর, কারণ কর্মকারের ও স্বর্ণকারের আগুন যেমন লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা মুছে ফেলে তেমনিভাবে এ দুই ইবাদত দারিদ্র্য ও পাপ মুছে ফেলে। আর পুণ্যময়-পরোপকারময় হজ্বের একমাত্র পুরস্কার হলো জান্নাত। তিরমিজি, আস-সুনান ৩/১৭৫, ইবনু মাজাহ, আস-সুনান ২/৯৬৪, নাসাঈ, আস-সুনান ৫/১১৫, ইবনু খুযাইমা, আস-সহীহ ৪/১৩০।

    চুল, নখ ইত্যাদি পশম কাটাছাটা

    জিলহজ মাসের আরেকটি মুস্তাহাবি আমল হল, চাঁদ উঠার আগে নখ, চুল আর পশমাদি কাটাছাটার প্রয়োজন হলে কেটেছেটে ফেলা এবং কুরবানির দিন পশুর গলায় ছুরি দেয়ার আগ পর্যন্ত এসবে হাত না দেয়া।

    এতে করে উক্ত আমলকারী কুরবানি করার ছুয়াব পায়। সুতরাং যারা কুরবানি করলনা তারা কুরবানি করার নেকি পাইল আর যারা কুরবানি করল, তারা কুরবানির দ্বিগুণ নেকি পাইল। তবে সামর্থ্যবান ব্যক্তি যদি কুরবানি না করে ওয়াজিব তরকের গুনাহ হবে।

    সতর্কতা: বগল আর নাভির নিচের কেশ যদি কাটতে ছাটতে ৪০ দিনের বেশি দেরি হলে বা আপনি ভুলে গেলেন কাটতে, আবার এদিকে কুরবানির চাঁদ উদয় হয়ে গেছে। এমন যদি হয় তাহলে চাঁদ উদয় হলেও আপনি যা কাটার তা কাটতে ছাটতে পারবেন।

    নারী পুরুষের অভিন্ন হুকুম। কারণ ৪০ দিনের বেশি হয়ে গেলে নামায ইত্যাদি মাকরূহে তাহরিমী হয়। যা পূর্বেকার মুস্তাহাবি আমলের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

    প্রতি রাতই শবেকদর

    সহজভাষায় বলি, যিলহজ্বের প্রথম দশ রজনী প্রত্যেকটি এক এক শবেকদর সমান। আল্লাহ্‌ বলেন,‘বান্দা আমার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না’ কারণ আমার রাগের উপর দয়ার প্রাচীর।

    তাই বলি, আমরা না হয় আমাদের অপরাধের কারণে একটি লাইলাতুলকদর হারিয়েছি, কিন্তু পেয়েগেছি সুনিশ্চিত আরও দশ লাইলাতুলকদর আর তা হল, যিলহজ্জের প্রথম দশরজনী। আলহামদুলিল্লাহ্‌। এরশাদ হয়েছে- আশেকে রাসুল আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- বলেছেন, এমন কোনো দিন নেই যাতে ইবাদত বন্দেগী আল্লাহ্‌র কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়, আছে, তবে তা হলো যিলহজ্বের প্রথম দশদিন।

    যার প্রত্যেকদিনের রোযা এক এক বছর (নফল) রোযা সমতুল্য আর এক একটি রাত লাইলাতুলকদর সমপরিমাণ নেকি! খাদেমুর রাসূল আনাস র. থেকে বর্ণিত আছে যে, যিলহজ্বের প্রতিটি দিন একহাজার দিনের সমতুল্য আর আরাফার দিন একদিনই দশহাজার দিনের সমতুল্য। (বাইহাকি, লাওয়াকিহুল আনওয়ার : ৯২, ফাহমুল মুরাম শারহে ফায়যুল কালাম: ২৯৭, তিরমিজি, ইবনে মাজা, মিশকাত)

    জিলহজের ৯ রোজা

    রাসুুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর কোনো এক আহলিয়া বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- জিলহজের ৯ রোযা, আশুরার রোজা আর প্রত্যেক মাসে তিনটি করে রোযা করতেন। ইমাম আহমদ, আবু দাউদ ও ইমাম নাসায়িসহ অনেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। বিশ্ববিখ্যাত হাদিস ব্যাখ্যাকার ইমান নববি রহ. ৯ রোজার কথা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, তা কঠিন মুস্তাহাব, অসাধারণ মুস্তাহাব।

    নাসায়ি শরিফের এক হাদিসে এসেছে রোজা ঢাল সরূপ। যা মানুষকে পরনিন্দা, গীবত ও মিথ্যাচার থেকে রক্ষা করে। শয়তানের কুমন্ত্রণা আর জাহান্নামের আগুন থেকেও বাঁচিয়ে রাখে। একইভাবে ব্যাখ্যা করেছেন শায়খুল হাদিস আল্লামা যাকারিয়া কান্দলবি রহ.।

    আরাফার দিনে বিশেষ রোজা

    খাদেমুর রাসুল আনাস র. থেকে বর্ণিত আছে যে, জিলহজের প্রতিটি দিন একহাজার দিনের সমতুল্য আর আরাফার দিন একদিনই দশহাজার দিনের সমতুল্য। (বাইহাকি, লাওয়াকিহুল আনওয়ার : ৯২, ফাহমুল মুরাম শারহে ফাইযুল কালাম : ২৯৭।)

    সহিহ মুসলিমের প্রসিদ্ধ একহাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- বলেছেন, আরাফাতের দিনে (চাঁদ দেখা হিসেবে ৯ তারিখ) জিলহজের রোজা রাখার ব্যাপারে আমি ধারণা করি যে, আল্লাহ তায়ালা রোজাদারের একবছর আগের ও পরের (ছোট) গুনা ক্ষমা করে দিবেন।

    তাকবিরে তাশরিক

    তাকবিরে তাশরিক হল, যে তাকবির জিলহজের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত পড়া হয়। যে কারণে এই দিনগুলোকে আইয়্যামে তাশরিক বা তাশরিকের দিন বলা হয়। দিন হিসেবে পাঁচদিন হয়।

    পুরুষদের পড়তে হয় বড় আওয়াজে আর মহিলাদের পড়তে হয় ছোট আওয়াজে। তাকবীর যদিও ওয়াজিব কিন্তু, মহিলাদের আওয়াজ ছতর হিসেবে ছোট আওয়াজে পড়াই বাঞ্ছনীয়।
    এই তাসবীহ কেবল একবার পড়া ওয়াজিব, তিনবার পড়া ওয়াজিব নয়।

    এ মর্মে হযর‍ত আলী ও আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস র. থেকে বর্ণিত আছে যে, আরফার দিন ফজর থেকে তের তারিখ আছর পর্যন্ত। (অর্থাৎ কুরবানিত ৩য় দিন আছর পর্যন্ত।)

    তাকবিরে তাশরিক নিচে দেয়া হল।

    হযরত ওমর ও আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত তাকবিরে তাশরিক এই,
    আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওলিল্লাহিল হামদ।

    জিকির: আমরা একটি কথা বারবার শুনে থাকি। ভাই, যিকিরে ফিকিরে চলি। আসলে কথাটি ছোট বড় সবার জীবনে বেশ রেখাপাত করে। এবং সুন্দর জিন্দেগীর জন্যও বেশ দরকারি।

    ঈদের রাতে ইবাদতে রাত জাগা

    দীনে ইসলামের বড় বড় পাঁচরাতের মধ্যে দুই ঈদের রাত অন্যতম। সামনে আসছে কুরবানির ঈদ। দিনের বেলা আমরা গরুছাগল আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে কুরবানি দিবো, এ তো তার ঠিক আগের রাতটি ঈদের রাত,আর তা দেবো আল্লাহকে। ওলামারা বলেন, মাগরিব, এশা আর ফজর যদি অন্তত জামাতের সাথে পড়ি তাহলেও আমরা সেই ফযিলত পেরে পারি।

    হাদিসে আছে এই দুইরাতকে যে ব্যক্তি জীবিত রাখবেন, কিয়ামত দিবসে তাকে আল্লাহ্‌ তাকে জীবিত রাখবে। হতে পারে মাফ করে দিবেন বা তার প্রতি বিশেষ রহমত করবেন ইত্যাদি। কারণ আনন্দঘন রাতে সে যেমন আল্লাহকে ভুলেনি, আল্লাহ কি করে কঠিন মুহূর্তে তার প্রিয় বান্দাকে ভুলবেন! সুবহানআল্লাহ।

    কুরবানি করা

    কুরবানির দিন ফরজ ইবাদতের পর কুরবানি করা হল সবচে’ বড় ইবাদত এবং আল্লাহ্‌র কাছে অনেক বেশি প্রিয়।

    আম্মাজান আয়েশা র. থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী কারীম সা. বলেছেন, ঈদুল আজহার দিন কুরবানির চে’ আল্লাহর কাছে বনি আদমের আর কোন আমল এত অধিক প্রিয় নয়। কিয়ামত দিবসে তার শিং, পশম আর নক ইত্যাদি কোলে করে নিয়ে হাযির হবেন কুরবানি করেছেন যে ব্যক্তি, আর নিশ্চয় কুরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর দরবারে কুরবানি করাটা কবুল হয়ে যায়, সুতরাং খুশি মনে (আল্লাহ্‌ ওয়াস্তে) কুরবানি করো। -তিরমিজি, ইবনে মাজা,মিশকাত :১২৮, ফায়যুল কালাম ২৯৬ পৃ।

    তাই আসুন, আমরা আল্লাহ্‌র জন্য নেক আমল করি। সুনামের জন্য যদি করি তাহলে মহাপ্রলয়ে আল্লাহ্‌ সুন্দর প্রতিদান দিবেন না। তাই ষোলআনা যেন আল্লাহর জন্য হয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করেন। আমিন।

    বিএম/এমআর