ইসিকর্মীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
    চুরি হওয়া ল্যাপটপ দিয়েই রোহিঙ্গাদের এনআইডি তৈরি!

    চট্টগ্রাম মেইল : মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা এবং ল্যাপটপ গায়েব করার ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসের কর্মচারীসহ আটক ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে নির্বাচন কমিশন।

    আজ মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার নির্বাচন কর্মকর্তা পল্লবী চাকমা বাদী হয়ে সিএমপির কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

    ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং নির্বাচন কমিশন আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, মামলায় গতকাল সোমবার রাতে আটক ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কর্মকর্তার অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন, তার দুই সহযোগী বিজয় দাস ও তার বোন সীমা দাশ ছাড়াও আরও দুজনকে আসামি করা হয়েছে। ‘

    তবে তদন্তের স্বার্থে’ অন্য দুই আসামির নাম প্রকাশ করতে অপরাগত প্রকাশ করেন ওসি মহসিন বলেন, পুলিশ গুরুত্বে সাথে মামলাটির তদন্তকাজ শুরু করেছে।

    গতকাল সোমবার রাতে আটককৃতদের মধ্যে পটিয়া উপজেলার মৃত হারাধন দাসের ছেলে বিজয় দাস (২৬) নগরীর ডাবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারী মো. জয়নাল আবেদীন (৩৫)’র বন্ধু এবং সীমা দাস ওরফে সুমাইয়া আক্তার (২৪) বিজয়ের বোন। বিজয় দাস পেশায় গাড়িচালক এবং সুমাইয়া চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আয়া পদে অস্থায়ীভিত্তিতে কর্মরত বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। নির্বাচন অফিস থেকে চুরি হওয়া ল্যাপটপটি নিজেদের হেফাজতে রেখে ওই ল্যাপটপ দিয়েই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হচ্ছে ধারণা প্রশাসনের।

    নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে এনআইডি কার্ডের তথ্য ইনপুট করার জন্য ব্যবহৃত বিশেষ একটি ল্যাপটপ চুরি হয়। তাছাড়া সম্প্রতি কক্সবাজারে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয় অনেক রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে পাসপোর্ট নেওয়ার কয়েকটি ঘটনায় নড়েচড়ে বসে নির্বাচন কমিশন। ঘটনার জোর তদন্তের উদ্দ্যেগ নেন ইসি।

    সম্প্রতি দুদকও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে তারা ধারণা করছে বিশেষ কিছু কম্পিউটার ছাড়া এনআইডির তথ্য ইনপুটের সুযোগ না থাকায় ভোটার তালিকা তৈরির জন্য ব্যবহৃত চুরি হওয়া ওই ল্যাপটপটি দিয়েই রোহিঙ্গাদের এনআইডি কার্ড তৈরি করা হচ্ছে। এ অনুমানের উপর রোহিঙ্গাদের ভুয়া পরিচয়পত্রের বিষয়ে তদন্তের জন্য রবিবার সকালে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

    দুদকের সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। দুদক টিম নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে রোহিঙ্গাদের এনআইডি সংরক্ষিত থাকার প্রমাণ এবং এ ঘটনায় জনপ্রতিনিধিসহ এই দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পায়।

    সোমবার রাতে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীনকে আটক করে পুলিশে দেয় নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। জয়নাল পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চুরি হওয়া ল্যাপটপটির বিষয়ে তথ্য দেন এবং এ কাজে জড়িত আরো বেশ কয়েকজনের নাম বলেন।

    সর্বশেষ সোমবার রাতে জয়নালের দেওয়া তথ্যমতে প্রথমে বিজয়কে নির্বাচন অফিসে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে তার বোনের কাছে নির্বাচন অফিস থেকে চুরি হওয়া ল্যাপটপটি রয়েছে বলে তথ্য দেন। পরে তার মাধ্যমে বোন সীমার সাথে যোগাযোগ করা হলে সে রাতেই ল্যাপটপটি নিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসে।

    রাত ১১টার সময় তিনজনকে আটক করে পুলিশে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান।

    উল্লেখ্য, সম্প্রতি লাকী ওরফে রমজান বিবি নামে এক রোহিঙ্গা নারী জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে এসে পুলিশের হাতে আটক হন। পরে তার স্মার্টকার্ড পরীক্ষা করে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে থাকা কোড নম্বরের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। জানা যায়, ঐ রোহিঙ্গা নারী ভুয়া ঠিকানা দিয়ে তৈরি করিয়েছেন জাল এনআইডি।

    এর আগে সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার করা এবং স্মার্টকার্ড পাইয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচনী কর্মকর্তা কর্মচারীদের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

    বিএম/রাজীব সেন..