ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ নেই, অপরাধের সুযোগ পাচ্ছে চালক

    এম. জুনায়েদ, ফটিকছড়ি : সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বিশেষ করে উত্তর ফটিকছড়ির বিভিন্ন এলাকায় মাদকদ্রব্য পাচার, পাহাড়ের স্থানীয় সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে তথ্য আদান প্রদানসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনায় নিরাপদ বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল। এছাড়াও এসব বাহনের চালকদের বিরুদ্ধে মোটরযান আইন না মেনেই গাড়ি চালানোর অভিযোগও রয়েছে অহরহ।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফটিকছড়ি সদর থেকে শুরু করে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন শতশত ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চলাচল করছে। গ্রামীণ ও পাহাড়ি পথে যাতায়াতে সুবিধাজনক ও আরামদায়ক বাহন হওয়ায় এসব এলাকার মানুষের কাছে দিনদিন তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। ফলে চালকদের যাত্রী পেতেও কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের চালকরা নানা অনিয়ম ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

    এসব মোটরসাইকেলে করে যাত্রীবেশে মাদক ব্যবসায়ীরা পাহাড় থেকে স্থানীয়ভাবে বানানো মদ (বাংলা মদ), ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করছে এবং পাহাড়ের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের পরস্পরের কাছে তথ্য আদান প্রদান ও অবৈধ মালামাল আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব মোটরসাইকেল। আর এই কাজে অপরাধীদের পুরোপুরি সহায়তা করছে চালকরা।

    এছাড়া ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের সিংহভাগের কাছে ভাইভিং লাইসেন্স নেই। অনেক গাড়ির নাম্বার এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। গাড়ি চালানোর সময় অধিকাংশ চালক হেলমেট ব্যবহার করেন না এবং যাত্রীদেরও হেলমেটে দেন না। যাত্রী বহনেও কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেন না এরা। সর্বোচ্চ দুইজন যাত্রী নেওয়ার নিয়ম থাকলেও এসব মোটরসাইকেলে চার পাঁচজন যাত্রী নিতেও দেখা যায়। ট্রিপ বেশি মারার জন্য বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগও রয়েছে এদের বিরুদ্ধে।

    শহরের উবার, পাঠাও, উভায়, সহজ ইত্যাদি অ্যাপস ভিত্তিক মোটরসাইকেলগুলোর মতো কোন সংস্থার মাধ্যমে বা অন্য কোন উপায়ে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনা খুবই জরুরি বলে মনে করেন সচেতন মহল। এক্ষেত্রে ড্রেসকোডও কিছুটা ভূমিকা রাখতে পারে। অর্থাৎ ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের জন্য নম্বরযুক্ত ড্রেসকোড থাকবে। তারা সেগুলো পরেই গাড়ি চালাবেন।

    নম্বরযুক্ত ড্রেসকোড পরিধান করা বাধ্যতামুলক করা হলে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সুবিধা নিয়ে যারা অপরাধমূলক কাজ করে থাকেন তাদের দৌরাত্ব কমবে।

    ড্রেসকোডে নম্বর থাকার কারণে সহজেই চিহ্নিত করা যাবে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের। রাতের গভীরেও কত নম্বর ড্রেসকোডধারী কোন জায়গা থেকে কোন যাত্রী নিয়ে গেলো তা এলাকাবাসী সনাক্ত করতে সক্ষম হবেন সহজেই। এছাড়া এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঝটিকা গিয়ে কোন অপরাধ করতে সাহস পাবে না অপরিচিত কোন সংঘবদ্ধ চক্র।

    জানা যায়, গ্রাম ও পাহাড়ি এলাকায় দুই ধরনের মোটরসাইকেল রয়েছে-ভাড়ায় চালিত এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন। অনেকেই ব্যক্তি মালিকানাধীন মোটরসাইকেলকে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল মনে করে থামানোর জন্য সিগনাল দিয়ে থাকেন। এর ফলে ব্যক্তি মালিকানাধীন মোটরসাইকেল চালককে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এই উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের নম্বরযুক্ত ড্রেসকোড হওয়া দরকার বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।

    এ ব্যাপারে বিবিরহাট হাতিরপুলে দাঁড়িয়ে থাকা রেজিষ্ট্রেশনবিহীন একটি মোটরসাইকেলের চালকের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি তার নাম বলতে রাজি হননি। তার মোটরসাইকেলের রেজিষ্ট্রেশন নেই কেন জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, গ্রাম এলাকায় রেজিষ্ট্রেশন লাগে না। একই কারণ বলেন ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যাপারেও।

    এ ব্যপারে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সায়েদুল আরেফিন বলেন, ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে লাইসেন্স বিহীন চালকদের কয়েকবার জরিমানা করা হয়েছে। আগামীতেও এ অভিযান আরো জোরদার করা হবে। তবে এক্ষেত্রে সাধারণ যাত্রীরা এবং এলাকাবাসীরা সচেতন হলে এদের দৌরাত্ম কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

    বিএম/আরএসপি..