বাজেট অধিবেশনে বিব্রত মেয়র খোকন

    ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) বাজেট ঘোষণায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিককে চ্যালেঞ্জ করে উল্টো বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন মেয়র সাঈদ খোকন।

    চলাচলের অনুপযোগী সড়ক চিহ্নিত করার চ্যালেঞ্জ দিলে সাংবাদিকের বক্তব্য সঠিক বলে মন্তব্য করেন খোদ ডিএসসিসিরই এক কাউন্সিলর।

    ধানমন্ডি ও কলাবাগান এলাকায় সড়ক সংস্কারের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছিলেন ওই সাংবাদিক। তবে মেয়র খোকন বলেছিলেন এটা হতেই পারে না। পরে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর গণমাধ্যমকর্মীর পক্ষেই বললেন। আর পরে মেয়র রাগ ঝেড়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর ওপর।

    রবিবার নগর ভবনে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা ও গত অর্থবছরের বাজেট অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতা চলছিল। বরাবর এরপর থাকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের পালা। এ সময় এই ঘটনা ঘটে।

    প্রশ্নোত্তর পবেং ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের উত্তেজিত হয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠার ঘটনা ঘটেছে। পরে মেয়র সাঈদ খোকনের ধমকে থামতে বাধ্য হন তারা।

    ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার প্রতিবেদক কামরুন নাহার বলেন, ‘আপনি (খোকন) বক্তব্যে দাবি করেছেন যে, আপনার এলাকার ৯০ শতাংশ সড়ক চলাচলের উপযোগী। কিন্তু, বাস্তবতা ঠিক উল্টো।’

    প্রশ্নকর্তাকে থামিয়ে দিয়ে মেয়র বলে ওঠেন, ‘আপনি প্রমাণ করতে পারলে যা চাইবেন তাই পুরস্কার দেব।’

    প্রতিবেদক বলেন, ‘আমার পুরস্কার লাগবে না। আমি কাঠালবাগান, কলাবাগান এলাকায় থাকি। সেখানে প্রায় পুরো এলাকাতেই সড়কের বেহাল দশা। বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠ ও গর্ভবতী নারীদের রিকশা নিয়েও চলাচল করতে কষ্ট হয়।’

    ‘আপনার কাউন্সিলর ওই এলাকায় উন্নয়নের জন্য কোনো বরাদ্দ পান না বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।’

    মেয়র বলেন, ‘এমনটা হতে পারে না। এখানে ওই এলাকার কাউন্সিলর আছেন। তাকে এখনই জিজ্ঞেস করা হোক।’

    কাউন্সিলর আলাউদ্দিন আহমেদ ঢালী তখন সাংবাদিক কামরুন নাহারের বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন, ‘কথা সত্য। আমার এলাকায় রাস্তাঘাট উন্নয়নে বরাদ্দ পাচ্ছি না।’

    সাঈদ খোকন তখন ওই এলাকার (অঞ্চল-১) নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল সিদ্দিক ভূইয়াকে দাঁড় করিয়ে ব্যাখ্যা জানতে চান মেয়র। বলেন, ‘কেন হয়নি? বলুন, আমি আপনাকে বরখাস্ত করব।’

    জবাবে শফিউল বলেন, ‘টেন্ডার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

    এরপর মেয়র কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করতে বলেন। কারণ সন্তোষজনক না হলে ওই প্রকৌশলীকে বরখাস্তের জন্য অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামানকে নির্দেশও দেন।

    সাংবাদিকদের সঙ্গে কাউন্সিলরদের উগ্র আচরণ

    একটি অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিক শাহেদ শফিক বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার পরও মশা নিয়ন্ত্রণে কাউন্সিলরদের মাঠে দেখা যায়নি। তাহলে মেয়র সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কীভাবে কাজ করবেন?

    মেয়র জবাব দেওয়ার আগেই একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর উত্তেজিত হয়ে উঠেন। শুরু হয় হট্টগোল। কেউ কেউ ‘মিথ্যা মিথ্যা’, ‘থাম সাংবাদিক’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।

    সাংবাদিক ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা এ সময় কাউন্সিলরদের থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা নিবৃত্ত হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত মাইক অন করে কাউন্সিলরদের ‘ধমক’ দেন মেয়র খোকন।

    এতেও কাউন্সিলররা থামছিলেন না। আর সাংবাদিকরা এর প্রতিবাদ করলে তাদেরকে মিলনায়তন থেকে বের হয়ে যেতে বলে চিৎকার করেন একজন কাউন্সিলররা। এ সময় নগর সাংবাদিকদের সংগঠন ডুরা’র সভাপতি মশিউর রহমানসহ অন্যরা প্রতিবাদ করেন।

    পরে মেয়র মাইক ছাড়া খালি গলায় উচ্চস্বরে মেয়র বলেন, ‘এই থামেন, বসেন। উনারা (সাংবাদিক) আমার ইনভাইটেড গেস্ট। আপনারা সম্মানিত কাউন্সিলর। আপনাদের সাথে সিটি কর্পোরেশনের মানসম্মান জড়িত। আশ্চর্য! অবাক লাগছে, আপনারা কীভাবে এমন করতে পারেন!’

    মেয়র খোকনের শেষ বাজেট ঘোষণা

    এর আগে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাজেট ঘোষণা করেন মেয়র সাঈদ খোকন। চলতি মেয়াদে এটাই তার শেষ বাজেট ঘোষণা।

    ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য মোট তিন হাজার ৬৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। এতে মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। গত বছর সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

    বাজেটে জ্বালানিসহ মশক নিধনের ওষুধের জন্য ৩৮ কোটি টাকা, কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যার জন্য এক কোটি ৩০ লাখ এবং ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন পরিবহনের জন্য চার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

    মেয়র বলেন, ‘মাদক, জুয়া, অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়ায় পরিণত হওয়া নগরীর বেদখল পার্ক, খেলার মাঠগুলো আজ জলসবুজ প্রকল্পের আওতায় বিশ্বমানের করে দৃষ্টিনন্দন রূপে সাজানো হয়েছে। নগরীর প্রায় ৯০ শতাংশ সড়ক এখন চলাচল উপযোগী। ফুটপাত, ড্রেন সংস্কার করে আধুনিকায়ন করা হয়েছে।’

    বিএম/এমআর