বাংলাদেশ তো সভ্যদের দেশ নয়! অসভ্যদের জয়জয়কার-ম্যাজিস্ট্রেট
    সকালে ধর্মঘট পালন, বিকেলে প্রত্যাহার : ফলভোগ যাত্রীর

    রাজীব সেন প্রিন্স : প্রশাসনের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে ৯ দফা দাবীতে রোববার ভোর থেকে আকস্মিকভাবে অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য পরিবহণের ডাক দিলেও বিকেলে জরুরি এক বৈঠক থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র আ জ ম নাছিরের আশ্বাসে চট্টগ্রাম বিভাগের ৯টি জেলায় পণ্য ও গণপরিবহন ধর্মঘট আগামী ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করেছে সংগঠনটি।

    তবে এর আগে রোববার ভোর থেকেই বিকেল ৩টা পর্যন্ত বন্ধ ছিলো চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন উপজেলার অভ্যন্তরীণ রুটে বাস-ট্রাক চলাচল। ছেড়ে যায়নি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে দূরপাল্লার কোন বাস। নগরীতেও অন্যান্য দিনের তুলনায় বাসসহ যাত্রীবাহি বাস চলাচল ছিলো তুলনামূলক কম। তবে ব্যক্তিগত যানবাহন ও ছোট যান চলাচল ছিলো স্বাভাবিক।

    কাগজপত্র হালনাগাদে বিআরটিএর কার্যক্রমে ভোগান্তির নিরসন, টোকেন বাণিজ্য বন্ধ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে স্থাপিত ওয়েট স্কেল দুটির পরিচালনার দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে প্রদান এবং তল্লাশির নামে হয়রানি বন্ধ করাসহ ৯ দফা দাবীতে রোববার ভোর ৬টা থেকে এ ধর্মঘটের ডাক দেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণ ও পণ্য পরিবহন মালিক ঐক্য পরিষদ। বিকেল পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের ৯টি জেলায় অনির্দ্দিষ্ট কালের এ ধর্মঘট কর্মসূচি পালিত হয়।

    তবে এসময়ে মধ্যেই সাধারণ যাত্রীরা যতটুকু ভোগান্তি ও ফলভোগ করার তা করে নিয়েছে। সাধারণ মানুষের দাবী বৈঠকে যদি বসতে হয় তবে প্রশাসন আগে কেন বসেনি। জনগণকে কষ্ট ভোগ করিয়ে কেন বৈঠকে বসা হয়।

    রবিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম থেকে আন্তঃজেলা সড়ক যোগাযোগের প্রধান প্রধান বাস স্টপগুলো গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর জেলায় যাত্রী ও পণ্যবাহী সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। নগর জুড়েও ছিলো পরিবহণ সংকট।

    রাস্তায় পর্যাপ্ত বাস না পেয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছাতে না পেরে হাজার হাজার লোক রাস্তায় সময় পার করছে। আবার কেউ কেউ চাকরি বাঁচাতে পায়ে হেটে এবং নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও চারগুন বেশি ভাড়া দিয়ে কর্মস্থলে পৌছেছে।

    নগরীর নিউ মার্কেট ও টাইগার পাস এলাকায় গাড়ির জন্য অপেক্ষমান কয়েকজন যাত্রীর সাথে আলাপকালে তারা তাদের মন্তব্যে জানিয়েছেন আকস্মিকভাবে এই ধর্মঘটের কোন মানে হয়না। সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে এভাবে নাজেহাল করা পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে নেই। এ বিষয়ে সর্বাত্মক প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন সাধারণ যাত্রীরা।

    এদিকে একাধিক যাত্রীর অভিযোগ পেয়ে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য চষে বেড়িয়েছেন বিআরটিএ চট্টগ্রামের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস, এম, মনজুরুল হক।

    তিনি জানিয়েছেন সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে ঘুরে দেখলাম। অভিযোগ ছিলো, ধর্মঘটের নাম দিয়ে বিভিন্ন রুটের গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে চালকরা। অভিযানে গিয়ে অভিযোগের কিছু কিছু সত্যতাও পাওয়া গেছে। তৎক্ষনাৎ কোন শাস্তি না দিয়ে বাড়তি ভাড়া না নিতে চালক-হেলপারদের কঠোরভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

    আকস্মিকভাবে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়ে জনসাধারণকে ভোগান্তিতে ফেলা যাত্রীদের এমন মন্তব্যের বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস, এম, মনজুরুল হক ম্যাজিস্ট্রেটস অব বিআরটিএ’ চট্টগ্রাম নামে অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে লিখেছেন, দাবি-দাওয়া থাকতেই পারে। দাবি ন্যায্য হলে এবং জনস্বার্থ বিরোধী না হলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর যথানিয়মে পেশ করা যেতে পারে।

    তিনি সেখানে উল্লেখ করেছেন লাখ লাখ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায় করার যুক্তি কতটুকু? এটা কোন ধরনের কা-জ্ঞানের পরিচয়? পরিবহন ব্যবসা কি একটা ফটকা ব্যবসা? তা তো নয়। এটা তো একটা সেবামূলক ব্যবসা। দুনিয়ার কোন দেশে দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য গণপরিবহন বন্ধ রাখার নিয়ম নাই। কোন সভ্য দেশে এটা করা হয় না। কিন্তু বাংলাদেশ তো সভ্যদের দেশ নয়! এখানে অসভ্যদের জয়জয়কার।

    আকস্মিকভাবে পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণ ও পণ্য পরিবহন মালিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু বলেন, আমাদের আন্দোলন সাধারণ জনগণ কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে নয়, আমাদের ধর্মঘট প্রশাসনের অনিয়মের বিরুদ্ধে।

    তিনি বলেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে ৯ দফা দাবি আদায়ের জন্য প্রশাসনকে তিনদিনের আল্টিমেটাম দেয় হয়েছিলো। এসময়ের মধ্যে প্রশাসনের কেউ যোগাযোগ না করায় রোববার ভোর থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের ১৪টি সংগঠন একযোগে এ ধর্মঘট পালন করেছেন।

    তবে সাধারণ জনগণের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের সাথে জরুরি বৈঠকে বসে তার আশ্বাস পেয়ে ধর্মঘট কর্মসূচি আগামী ১৫ দিনের জন্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

    গণ ও পণ্য পরিবহন মালিক ঐক্য পরিষদের যুগ্ন সদস্য সচিব মো. গোলাম নবী বলেন, মেয়র কয়েকদিনের মধ্যে মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে সেতুপরিবহন মন্ত্রী ওবাদুল কাদের ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল এর সাথে বৈঠক করে সমস্যা সমাধানের উদ্যেগ নেয়ার আশ্বাস দিলে আপাতত ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। রোববার বিকেল ৪টার দিকে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

    বিএম/আরএসপি..