সৈয়দপুরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের বাড়ি টাকায় কিনল আ’লীগ কর্মী

    শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী  প্রতিনিধি :প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রনালয়ের জায়গা আছে বাড়ি নেই এমন হতদরিদ্রদের জন্য সরকারীভাবে বাড়ি করে দেওয়ার প্রকল্পের অধীনে তৈরী বাড়ি কিনে নিতে হলো এক আওয়ামীলীগ কর্মীকে। এজন্য ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ মহিলা মেম্বার ও অন্যান্যদের দিতে হয়েছে ৪৫ হাাজার টাকা। চরম দরিদ্র ও ভিক্ষা করে খাওয়া ওবায়দুল হক নামের ওই ব্যক্তির কোন রকমে গচ্ছিত টাকা ও এনজিও’র ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে হয়েছে বাড়ির মূল্য বাবদ। এ ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের চওড়া বাজার গুয়াবাড়ি এলাকায়।

    সরেজমিনে গেলে হতদরিদ্র ওবায়দুল হক জানায়, আমি আওয়ামীলীগের একজন নিবেদিত প্রান কর্মী। যা ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা আওয়ামীলীগের সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ জানেন। আমি ভিক্ষা করে কোন রকমে জীবন নির্বাহ করি। অথচ আমার কাছ থেকেই প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বাড়ি বরাদ্দের জন্য ৪৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলিফ ওরফে ফকির নিয়েছে ২৫ হাজার আর ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার আখতারা বেগম ও তার স্বামী বাচ্চা বাউ এবং সুমন নামের এক আওয়ামীলীগ কর্মী মিলে নিয়েছেন ২০ হাজার টাকা। অনেক কষ্টে ভিক করে সঞ্চয় করা কিছু টাকা আর দুইটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তাদের টাকা দিয়েছি। এখন এনজিও’র ঋণের টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করতে হচ্ছে।
    তিনি আরও জানান, উপরোক্ত ব্যক্তিরা উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিনের কথা বলে এসব টাকা নিয়েছেন। একারণে আমি টাকা দিয়েই বাড়িটি নিতে বাধ্য হয়েছি।

    তাছাড়া বাড়িটি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ হওয়ায় এখানে উন্নতমানের ইট ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করার কথা থাকলেও ৩ নম্বর গুড়িয়া ইট দিয়ে বানানো হয়েছে। সে সাথে মিস্ত্রির খরচ ও খাওয়া, মালামাল আনার ভ্যান ভাড়াও দিতে হয়েছে। বাড়ির মেঝেতে মাটি ভরাটের জন্য লেবারের মজুরিও দিয়েছি। এগুলো ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের করার কথা থাকলেও তার ছেলে বুলবুল চৌধুরী দায়িত্ব নিয়েও সকল খরচ আমাকেই বহন করতে হয়েছে।

    এ ব্যাপারে ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলিফ ওরফে ফকিরের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বাড়িটি মূলত: সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন আওয়ামীলীগের দরিদ্র সদস্যের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন। একারণেই আমি ২৫ হাজার টাকা নিয়েছি। চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেই আপনাকে জানানো হবে।
    ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার আখতারা বেগম ও তার স্বামীর বাচ্চা বাউয়ের বাড়িতে গেলে তাদের পাওয়া যায়নি। এ কারণে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা রিসিভ না করায় তাদের কোন মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

    ঠিকাদার তথা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক চৌধুরীর ছেলে বুলবুল চৌধুরী জানান, বাড়ির কাজ শেষ। এখন আপনি ২ নম্বর ইট খুজতেছেন? কোথাও কোন ২ নম্বর ইট দিয়ে বাড়ির কাজ করা হয়নি। কাজ করার কথা চেয়ারম্যানের সেখানে আপনি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বাবার পরিবর্তে আমিই কাজটি দেখাশোনা করছি। তাতে সমস্য কী?

    সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন বলেন, ওবায়দুল হক আওয়ামীলীগের একজন কট্টর সমর্থক। তার ব্যাপারে আমি জানি। সে খুবই গরীব। সৈয়দপুর উপজেলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ দুর্গোয ও ত্রাণ মন্তনালয়ের ৩০টি বাড়ির মধ্যে ৫টি বাড়ি আমি পেয়েছি। তার একটি ওবায়দুলকে দেওয়ার জন্য ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। এক্ষেত্রে কেউ যদি আমার নাম করে বা অন্যকোনভাবে ওই দরিদ্র ওবায়দুলের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে থাকে তাহলে তা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি।

    উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু হাসনাত সরকারের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন যে আমি আমার চেষ্টা মত কাজ করেছি। মেম্বার চেয়ারম্যানরা অনিয়ম করে থাকলে তার দায়ভার আমরা নিবো না।
    উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম গোলাম কিবরিয়া বলেন, টাকা নেওয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা। কেউ যদি নিয়ে থাকে তাহলে লিখিত অভিযোগ দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর নিম্নমানের ইট দেওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। কেননা বাড়ি করার জন্য ইট আমরাই সংগ্রহ করে সরবরাহ করেছি। এখানে দুই নম্বরি করার কোন সুযোগ নেই।

    উলে­খ্য, সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের ৫টি বাড়ি দেওয়ার নামে প্রকাশ্যে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম করার মাধ্যমে হরিলুট করা হয়েছে। বিষয়টি যেন ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষের মুখে মুখে। তাদের বক্তব্য হলো যে বাড়ি প্রধানমন্ত্রী গরীব লোকদের জন্য বিনামূল্যে দিয়েছেন। সেই বাড়ি দেওয়ার নামে আওয়ামীলীগের লোকজনই যদি আওয়ামীলীগের লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দেয়। তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা? এতে আওয়ামীলীগসহ সরকারের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে।