এই সরকার বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না মন্তব্য ফখরুলের

    ফাইল ছবি

    স্টাফ করেস্পন্ডেন্টঃ‘ আমরা একটা কথা আজ পরিষ্কার করে বলতে চাই- এই সরকার বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না। সেটি পৃথিবীর কোন রাজনৈতিক ইতিহাসে নেই। জবরদস্তি আর বন্দুকের নল দিয়ে টিকে থাকা যায় না। এই দেশের মানুষের মন থেকে তারা হারিয়ে গেছে। দেশের প্রতিটি মানুষ দোয়া করছেন কবে এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি পাবেন। তাই আর পেছনে দিকে ফিরে তাকানোর সময় নেই।’

    সোমবার (৪ নভেম্বর) যশোরে বিএনপির প্রয়াত স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে যশোর জেলা বিএনপি কর্তৃক জেলা পারিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত স্মরণ সভায় এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

    তিনি  বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের মধ্যে তরিকুল ইসলাম একজন। তিনি সারা দেশের মানুষের কাছে একজন বরেণ্য নেতা। তরিকুল ভাইয়ের জানাজায় আমি আসতে পারিনি। উনার কবরে মাটি দিতে পারিনি। এটা আমার সারা জীবনের দুঃখ। আমরা এক সাথেই রাজনৈতিক অধ্যায় শুরু করেছিলাম। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য, একটা সুষ্ঠু সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য, আমরা তরিকুল ইসলামের সহযোগী ছিলাম। আমি মধ্যে দিয়ে রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি সারাটা জীবন রাজনীতির মধ্যে ছিলেন।’

    ফখরুল বলেন, ‘তরিকুল ইসলাম আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ। যার সবকিছুতেই ছিল রাজনীতি। সত্যিকার অর্থে একজন অনুকরণীয় নেতা ছিলেন তরিকুল ইসলাম। তিনি অকুতোভয়ে সত্যা কথা বলতে এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে কখনোই দ্বিধায় ছিলেন না। কিন্তু শেষ বয়সে অসুস্থ শরীরে এসে তাকে বিভিন্ন মামলার হাজিরা দিতে যশোর-ঢাকা যশোর ছুটোছুটি করতে হয়েছে।’

    সাদেক হোসেন খোকার মৃত্যুর খবর নিয়ে ফখরুল বলেন, ‘একজনের মুত্যুর স্মরণ সভা করতে এসে আরেক জনের মৃত্যুর সংবাদ শুনলাম। আমাদের আরেক সহযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা মারা গেছেন। এ যেন এক মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়ে গেছে। এই সরকার আসার পর থেকে বিগত ১২ বছরে অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়নে আমাদের একেকজন প্রজ্ঞাবান নেতা চলে যাচ্ছেন। এই চলে যাওয়ার মধ্য দিয়েই আমাদের নতুন স্বপ্ন দেখতে হবে। এই চলে যাওয়ার মধ্যদিয়ে তাদের পথ অনুসরণ করে আগামীর সূর্যকে উঠতে দেখতে হবে।’

    বিএনপিকে খোলা মাঠে প্রোগ্রাম করতে দিতে সরকার ভয় পায় উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘আজকে তরিকুল ইসলাম ভাইয়ের স্মরণসভা করা জন্য মাঠে অনুমতি দেয়া হয়নি। একটা আবদ্ধ ঘরে আমাদের প্রোগ্রাম করতে হচ্ছে। তারপরেও হাজার হাজর মানুষ এখানে এসেছেন। তারা মাঠে প্রোগ্রাম করতে দেয় না কারণ তারা আমাদের ভয় পায়। বিএনপিকে ভয় পায়। তারা জানে এই মানুষগুলো যদি একবার জেগে উঠে তাহলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না।’

    বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘জনগণ আমাদের পাশে আছে। কিন্তু আমাদের উপলব্ধি করতে হবে জনগণ আমাদের যেভাবে চায় সেইভাবে তাদের পাশে পাই কিনা। যদি না পায় তাহলে আমাদের জনগণের পাশে থাকার সেই সিদ্ধান্তটা নিতে হবে। শহীদ জিয়ার ডাকে জনগণ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। তখনও কিন্তু আদালত ছিল, সুতরাং ওই যে আদালত যে তখন ৭০ এর নির্বাচনের ফলাফল মানল না তার জন্য আদালত কিন্তু ইয়াহিয়া খানকে বলে নাই এটা বেআইনি, ক্ষমতা হস্তান্তর করো। সুতরাং আজকের আদালত আদালতের জায়গায় নেই। আজকের আদালত প্রধানমন্ত্রীর কব্জার মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী চাইলে কারো মুক্তি হয়। না চাইলে মুক্তি হয় না।’

    পুলিশ প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘সরকার তাদের নিজেদের ক্ষমতা টিকানোর জন্য ৩০ তারিখের নির্বাচন ২৯ তারিখ রাতেই সম্পন্ন করে ফেলেছে। আজ আমরা আসার পর পুলিশ প্রশাসন আমাদের দুর্বিন দিয়ে দেখছে। একটা সময় আসবে জনগণ তাদের দুরবীণ দিয়ে দেখবে।’

    স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘স্পষ্টবাদী হওয়া একজন রাজনীতিবিদের জন্য খুব কঠিন। কারণ একজন রাজনীতিবীদ স্পষ্টবাদী হলে তার শত্রু বাড়ে। তবে তিনি এসবের তোয়াক্কা করতেন না। মরহুম তরিকুল ইসলাম এই গুণের অধিকারি ছিলেন। এর চাইতে বড় গুণ মানুষের হতে পারে না। মানুসিকভাবে বিএনপিকে এগিয়ে নিতে হলে বিত্তের দুর্বিত্তায়নমূলক রাজনীতি পরিহার করে তরিকুল ইসলামের পথে হাটতে হবে।’

    প্রয়াত তরিকুল ইসলামের স্ত্রী যশোর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক নারগিস বেগমের সভাপতিত্বে স্বরণসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকতউল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারি হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দ দাস অপু, নির্বাহী কমিটি সদস্য সাবেরা নাজমুল মুন্নি, তাঁতি দলের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার প্রমূখ।