আ. লীগের নেতৃত্বে আসছে অনেক নতুন মুখ

    আওয়ামী

    আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেক নেতা। তাঁদের মধ্যে জোর আলোচনা আছে যে ওবায়দুল কাদেরই সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এ ছাড়া নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে ঢেলে সাজানো হবে দলের সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলী। ফলে তিন-চার মেয়াদ ধরে একই পদে থাকা অনেক নেতাই এবার বাদ পড়বেন আবার অনেক নেতারই পদ পরিবর্তন হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ তিন সদস্যসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস মিলেছে।

    সাধারণ সম্পাদক পদে কাকে দেখা যেতে পারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি তো দেখছি, আমাদের যিনি সাধারণ সম্পাদক আছেন তাঁরই থাকার সুযোগ আছে। এর আগে যাঁরা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তাঁরা দুইবার করেই ছিলেন। আর আমাদের সাধারণ সম্পাদকের শরীর তো এখন ভালো। ফলে তিনিই থাকতে পারেন।’

    কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য পদে পরিবর্তনের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘অন্য পদগুলোতে কী হবে সে বিষয়ে কোনো আভাস আমার জানা নেই। শুধু শুধু গণমাধ্যমে মনগড়া কথা ছড়িয়ে লাভ কী?’

    সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কমিটিতে পরিবর্তনের বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপরই আমরা ছেড়ে দিয়েছি। উনি যেভাবে চাইবেন সেভাবেই হবে। সাধারণ সম্পাদক পদে মনে হয় না পরিবর্তন আসবে। তবে অন্য পদগুলোতে পরিবর্তন আসতে পারে। কমিটিতে নারীর সংখ্যাও কিছু বাড়তে পারে।’

    আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বর্তমান মেয়াদে আওয়ামী লীগে কোন্দল বেড়ে যাওয়ায় এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমরা ভেবেছিলাম নেত্রী (শেখ হাসিনা) দলের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আনবেন। তাড়াহুড়া করে সম্মেলনের দিন নির্ধারণ করায় আমরা ধরেই নিয়েছিলাম তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন। কিন্তু গত দু-তিন দিনে যা আভাস পাচ্ছি, তাতে মনে হচ্ছে না পদটিতে পরিবর্তন আসবে।’

    দলের কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের প্রায় সব সাধারণ সম্পাদকই দুইবার করে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হৃদেরাগে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি আবারও এই পদে থাকবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা এখন ভালো। তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তিনি এখন দায়িত্ব পালনে সক্ষম। এ ছাড়া একসময় ছাত্রলীগের সভাপতি থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আছে তাঁর। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর বয়সের ব্যবধানও খুব বেশি নয়। ফলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাঁরই পুনর্নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

    সূত্র মতে, সরকারের বর্তমান মেয়াদে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে এবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনেও বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। যেসব নেতা ও তাঁদের অনুসারীরা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করেছেন, তাঁদের বাদ দেওয়া হবে। সাংগঠনিক দায়িত্ব পেয়েও যাঁরা ঠিকমতো পালন করতে পারেননি, তাঁদেরও কমিটিতে ঠাঁই হবে না।

    হাসবে বেশি তরুণ মুখ : জানা গেছে, নতুন বৈশ্বিক ও স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে এবার কমিটিতে বেশ কয়েকজন তরুণ নেতাকে যুক্ত করা হবে। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবেন। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, শফি আহমেদ, বাহাদুর বেপারী, ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন, মাহমুদ হাসান রিপনসহ কয়েকজন নেতার কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে পারেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারও। গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে আসতে পারেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও টঙ্গী পৌরসভার কয়েকবারের নির্বাচিত মেয়র আজমত উল্লাহ।

    সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীতে বড় পরিবর্তন : দলীয় সূত্র মতে, টানা তিন বা চার মেয়াদ ধরে একই পদে আছেন এমন বেশ কয়েকজন নেতা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে বাদ পড়তে পারেন। আটটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদের দু-একটি ছাড়া সব কটিতেই পরিবর্তন আসতে পারে। অন্তত দুজন সাংগঠনিক সম্পাদক বাদ পড়তে যাচ্ছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর মধ্য থেকে একাধিক নেতাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হতে পারে। চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে একাধিক পদে পরিবর্তন আসতে পারে। মন্ত্রিসভায় আছেন এমন একাধিক নেতাকে কমিটি থেকে বাদ অথবা কার্যনির্বাহী সদস্য করা হতে পারে।

    নারী নেতৃত্ব বাড়ছে : বর্তমান কমিটিতে সভাপতিসহ বিভিন্ন পদে ১৫ জন নারী আছেন। নতুন কমিটিতে এ সংখ্যা অন্তত ২০ হতে পারে। আইনে ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সব স্তরের কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ নারী রাখার বাধ্যবাধকতা আছে। সে হিসাবে এবারের কমিটিতেই আওয়ামী লীগকে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হবে।

    আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন নারীকে এবার কমিটিতে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নূর, সাবেক সংসদ সদস্য ও যুব মহিলা লীগ নেত্রী ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী আমেনা কোহিনূরসহ আরো কয়েকজনকে দেখা যেতে পারে কেন্দ্রীয় কমিটিতে।