রাষ্ট্রপতিকে গ্রামীণফোনের উকিল নোটিশ

গ্রামীণফোন

সরকারের পাওনার বিষয়ে সালিসে (আরবিট্রেশন) যেতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেলিকম খাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ তথ্য জানিয়েছেন।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, গ্রামীণফোন সিঙ্গাপুরের একটি ল ফার্মের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা করবে, আবার সেই প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিশ পাঠিয়ে আরবিট্রেশনের জন্য চাপ দেবে—এটা বোধ হয় খুব সহজে গ্রহণ করার মতো নয়। নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত জানানো হয়েছে। তারা (গ্রামীণফোন) বোঝাতে চেয়েছে যে আরবিট্রেশন চায়। কিন্তু বিষয়টি তো আদালতে। আদালতের বাইরে আরবিট্রেশনের কোনো সুযোগ নেই।

অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে গ্রামীণফোনের কাছে বকেয়া ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা চেয়ে গত এপ্রিলে চিঠি দেয় টেলিযোগাযাগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। এতে কাজ না হওয়ায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। আরেক অপারেটর রবির কাছে বকেয়া ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকার দাবিতে একই পদক্ষেপ নেয় বিটিআরসি। ফলে দুই অপারেটরই উচ্চ আদালতে যায়।

মন্ত্রী জানান, রবি মামলা প্রত্যাহার করবে বলে জানিয়েছে। সরকারের কড়াকড়ি অবস্থানের কারণে দেশে-বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এখন চিত্র বিপরীত। দেশে ফাইভ-জি সেবা দিতে নতুন অপারেটর আসতে চায়। টেলিটকে বিনিয়োগ করতে চায় বিদেশি প্রতিষ্ঠান। বরং পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। আগের মতোই আছে।’

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্বের জায়গায় পৌঁছেছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা। ২০২১ সালের মধ্যে প্রথম ধাপটি বাস্তবায়িত হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ, ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ উপলক্ষে পরিকল্পনা এবং ২১০০ সালে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা করে রেখেছেন।

ইন্টারনেটের দাম কমানোর বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ। কাজ শুরু হয়েছে। ইন্টারনেট মানুষের মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। আমাদের দেশে ইন্টারনেটের দাম যে তুলনামূলকভাবে উচ্চ তা বলব না। তবে ইন্টারনেটের দাম বেঁধে দেওয়া নেই। এটাও সমস্যার কারণ। মোবাইল অপারেটররা ইচ্ছামতো ইন্টারনেটের দাম নিচ্ছে। আমরা এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যত লাইসেন্স দিয়েছি তার দ্বিগুণ হলো অবৈধ লাইসেন্স। তারা সেবা দিচ্ছে। বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। এ জন্য আমরা কাজ করছি। এর সমাধান হয়ে যাবে।’

মতবিনিময় অনুষ্ঠানে টিআরএনবির সভাপতি মুজিব মাসুদ ও সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল আনোয়ার খান শিপুসহ সাধারণ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

টেলিনর গ্রুপের বক্তব্য : প্রক্রিয়াটিতে গ্রামীণফোন কোনো পক্ষ নয়। বাংলাদেশে  নিজেদের সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা টেলিনর গ্রুপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অডিট আপত্তির বিষয়টি স্বচ্ছভাবে নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে একটি গঠনমূলক সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আলোচনার আহ্বান জানাতেই এই নোটিশ দেয় টেলিনর। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির মধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়টি রয়েছে।

টেলিনর গ্রুপের পরিচালক-কমিউনিকেশন্স (এশিয়া) ক্যাথরিন স্ট্যাং লন্ডের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়—টেলিনর গ্রুপ বিশ্বাস করে, একটি স্বচ্ছ ও গঠনমূলক সমাধান নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ ও অপারেটর একযোগে কাজ করতে সম্মত হওয়াই এই অডিট বিরোধ নিষ্পত্তির সর্বোত্তম পন্থা।