শীত-কুয়াশায় দেশের মানুষ ধরা

    শৈত্যপ্রবাহ

    উত্তুরে হিমেল হাওয়া আর কুয়াশার দাপটে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে কাহিল হয়েছে পড়েছে মানুষ। ঘরের বাইরে বের হলে একটু দূরের জিনিস দেখা যাচ্ছে না। রাস্তাঘাটে রিকশাসহ যানবাহনের সংখ্যা অনেক কম। জরুরি কাজ ছাড়া মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না।

    গত তিন দিন ধরে চলা শৈত্যপ্রবাহ এখনো অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

    এদিকে, তীব্র শীতে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। শীতের কবল থেকে বাঁচতে খড়-কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে রংপুর অঞ্চলে অন্তঃসত্ত্বাসহ আট নারী দগ্ধ হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

    আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শৈত্যপ্রবাহের বিস্তার আরো বাড়বে এবং আগামী দুই দিন এই অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করবে। উচ্চ চাপ বলয় ও উত্তর-পশ্চিমা শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ বেশি সক্রিয় থাকায় এবং কুয়াশা ও জলীয় বাষ্পে আর্দ্রতা বেশি হওয়ায় তীব্র  শীত অনুভূত হচ্ছে। এসময় কুয়াশা স্তর নিচে নেমে আসায় মেঘলা আবহাওয়া বিরাজ করছে।

    ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকা-সৈয়দপুর-ঢাকা রুটে বিমানের ফ্লাইট শিডিউলে বিপর্যয় ঘটেছে। গতকাল সকালের ফ্লাইটগুলো প্রায় তিন-চার ঘণ্টা বিলম্বে ঢাকা থেকে উড্ডয়ন করে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এতে যাত্রীদের সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়।

    বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, শিডিউলে বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ারের একটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে ছেড়ে সকাল সাড়ে ১০টায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণের কথা ছিল। সেটি দুপুর দেড়টায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইট নির্ধারিত সময় সকাল পৌনে ১১টার পরিবর্তে পৌঁছে দুপুর ১টা ২১ মিনিটে। এভাবে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে গতকাল সকালের শিফটের সব ফ্লাইটের শিডিউলে বিপর্যয় ঘটে।

    ঘন কুয়াশার কারণে ফেরির মার্কিং বাতির আলো অস্পষ্ট হয়ে আসায় দুর্ঘটনা এড়াতে আজ শনিবার ভোর ৪টার দিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। কুয়াশার ঘনত্ব কমে গেলে সকাল ৮টার দিকে পুনরায় তা স্বাভাবিক হয়। তবে ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা।

    চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮ থেকে ৯ কিলোমিটার। যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বৃহস্পতিবার এখানে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

    পঞ্চগড়ে ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এবার পৌষের প্রথম দিন থেকেই পঞ্চগড়ে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশা আর উত্তুরে বাতাসে জেলার সর্বত্র হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। গতকাল জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। থেকে থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশাপাত চলছে। নীলফামারীতে তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

    আজও বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরেছে রংপুরে। তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কনকনে শীত থেকে রক্ষা পেতে খড়-কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে গতকাল পৃথক ঘটনায় আট নারী দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেয় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট কর্তৃপক্ষ।

    ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, গাইবান্ধা, নওগাঁ, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শীতবস্ত্রের অভাবে নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।