ওয়াসার প্রস্তাবে বাধ সাধল মন্ত্রণালয়
    চট্টগ্রামে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়ছে

    চট্টগ্রাম ওয়াসা

    লোকসান কমানো ও ঋণের কিস্তি পরিশোধের দোহাই দিয়ে গত ৯ আগস্ট পানির ইউনিটপ্রতি দাম ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ টাকা থেকে এক লাফে ১৬ টাকা করার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ড। তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সেই প্রস্তাব নাকচ করে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন-১৯৬৬ এর ২২ (২) ধারা অনুযায়ী পানির ইউনিটপ্রতি দর ৫ শতাংশ বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে। যা নতুন বছরের প্রথমদিন অর্থাৎ আজ বুধবার থেকে কার্যকর হবে। নতুন দর অনুযায়ী, প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির জন্য আবাসিক গ্রাহককে পূর্বের দর ৯ টাকা ৯২ পয়সার পরিবর্তে ১০ টাকা ৪২ পয়সা পরিশোধ করতে হবে।

    অপরদিকে অনাবাসিকে (বাণিজ্যিক ও শিল্প) প্রতি হাজার লিটার পানির দাম এখন ২৭ দশমিক ৫৬ টাকা। পাঁচ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২৮ দশমিক ৯৪ টাকা।

    চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘আইন অনুসারে বছরে আবাসিক ও অনাবাসিকে একবার ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। তাই এই দর বৃদ্ধি নিয়ে গ্রাহকের কোনও আপত্তি থাকার কথা না।’

    তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসার আয়ের প্রধান উৎস পানির বিল বাবদ অর্থ। উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম দামে গ্রাহকদের পানি সরবরাহ দিচ্ছে ওয়াসা। প্রতি ইউনিট পানির উৎপাদন খরচ এখন ১৬ টাকা। কিন্তু আমরা বিক্রি করছি প্রায় দশ টাকায়। আমাদের প্রতি ইউনিটে ক্ষতি ছয় টাকা।’

    এর আগে আগস্ট মাসে বোর্ডসভায় অনুমোদনের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবাসিকে প্রতি ইউনিট পানির দাম ৯ টাকা ৯২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা এবং বাণিজ্যিক খাতে প্রতি ইউনিট ২৭ টাকা ৫৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করতে অনুমতি চেয়েছিল ওয়াসা। পানি উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধি এবং শোধনাগার প্রকল্পগুলোর ঋণ ও সুদ পরিশোধের জন্য দাম বৃদ্ধির এই প্রস্তাব বলে জানিয়েছেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

    চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়ায় চট্টগ্রাম ওয়াসা। তখন আবাসিকে প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) ৯ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৯২ পয়সা এবং বাণিজ্যিক খাতে প্রতি ইউনিট ২৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৭ টাকা ৫৬ পয়সা করা হয়।

    রাজস্ব কর্মকর্তা গোলাম হোসেন জানান, ওয়াসার আবাসিক এবং বাণিজ্যিক গ্রাহক সংখ্যা ৭৪ হাজার। এর মধ্যে ৮৮ শতাংশ সংযোগ আবাসিকে, বাকি ১২ শতাংশ শিল্প ও বাণিজ্যিকে। এর মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ বিল আদায় হয়ে থাকে। আর এ সব বকেয়ার মধ্যে অধিকাংশই বাণিজ্যিক ও আবাসিক গ্রাহক। জানা যায়, বর্তমানে প্রায় ৭২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।

    পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন-১৯৬৬ এর ২২(২) ধারামতে প্রতি বছর একবার করে পাঁচ শতাংশ হারে ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে। সে অনুযায়ী বছরের শুরুতে একবার বাড়ানোর হয়। এর অতিরিক্ত বাড়াতে হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে।

    ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, আবাসিক ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার মোট গ্রাহক ৭১ হাজার ১৩০ জন। এর মধ্যে ৬৪ হাজার ১৯টি আবাসিক সংযোগ এবং বাকি ৭ হাজার ১১১টি অনাবাসিক সংযোগ। চট্টগ্রামে দৈনিক পানির চাহিদা ৫০ কোটি লিটার। ওয়াসার দাবি অনুসারে তারা ৩৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করতে পারে। সে হিসাবে বন্দরনগরের বাসিন্দারা চাহিদা অনুসারে পানি সরবরাহ পান না। পাশাপাশি সরবরাহ লাইন প্রতিস্থাপনে সারা বছর চলতে থাকা নগরজুড়ে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।