কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যাক্তিদের পর্যবেক্ষন করতে সরেজমিনে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক

    বাংলাদেশ মেইল ::

    চট্টগ্রামে সরকারি এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রবাসীদের বাড়ি বাড়ি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। কোয়ারেন্টিন মেনে চলার পাশাপাশি বাজার মনিটরিং করে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখার অনুরোধসহ কোয়ারেন্টিন না মানা প্রবাসীদের নিয়মিত জরিমানা করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। রোববার (২৯ মার্চ) জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন নিজেই প্রবাসীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা লোকজনের খোঁজ-খবর নেন। দুপুর ১২টা থেকে নগরীর খুলশী, আকবর শাহ, চাদগাঁও, হালিশহর ও পাচঁ লাইশের বিভিন্ন এলাকায় কোয়ারেন্টিনে থাকা লোকজনের সরেজমিন খোঁজ-খবর নেন তিনি।
    চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, সকালে আগ্রাবাদ এলাকায় ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে জেলা প্রশাসনের ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার পর দুপুরে খুলশী এলাকায় আসেন জেলা প্রশাসক। খুলশীর বিভিন্ন এলাকায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসী এবং বিদেশি নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ-খবর নেন। সবাই হোম কোয়ারেন্টিন পালন করছেন কী না- তা তদারকি করেন তিনি।
    জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার মাসুদুর রহমান জানান, প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিন পর্যালোচনার পাশাপাশি আগ্রাবাদ মুহুরীপাড়া এলাকায় প্রায় ৩০০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা দেন জেলা প্রশাসক। ত্রাণ সহায়তার মধ্যে প্রতি পরিবারকে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি চিড়া, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি লবন, ১ লিটার তেল এবং আধা কেজি নুডলসসহ ১৬ কেজি ৫০০ গ্রামের একটি প্যাকেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এসময় হোম কোয়ারেন্টিন পর্যালোচনা, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ ছাড়াও রোববার কয়েকটি বাজারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে কী না- তা তদারকি করেন জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন।
    এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের কনফারেন্স হলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও বিস্তার প্রতিরোধ এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সমন্বয় সভায় নিজ নিজ দপ্তরের প্রস্তুতির কথা জানায় করোনা মোকাবেলায় কাজ করা সরকারি বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধিরা। সভায় করোনা মোকাবিলায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তার রোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন সভায় অংশগ্রহণকারীরা।
    সভায় করোনা মোকাবিলায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে সন্দেহজনক রোগীকে করোনা পরীক্ষা, করোনা আক্রান্ত হলে রোগীদের আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা নিশ্চিত করা, করোনা মোকাবেলায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকি, কেউ করোনা আক্রান্ত হলে সেই রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়াসহ আরও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্বাস্থ্য বিভাগসহ অন্যান্য দফতরের সঙ্গে সমন্বয় করার কথাও জানানো হয় সভায়।
    সভায় করোনা মোকাবিলায় স্থানীয় কাউন্সিলরসহ জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমানের সভাপতিত্বে সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও বিস্তার প্রতিরোধ এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের। পুলিশ কমিশনার বলেন, করোনা আক্রান্ত হলে নিজ নিজ পরিসরে সকলকে আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা গেলে আশা করছি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আমরা শতভাগ সক্ষম হবো। সিএমপি কমিশনার বলেন, করোনা মোকাবেলায় স্থানীয় কাউন্সিলরসহ জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। সমন্বয় সভায় সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) আমেনা বেগম, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এসএম মোস্তাক আহমেদ খান, অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) শ্যামল কুমার নাথ, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী, জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।