বরগুনার আমতলী থানায় ওসির কক্ষে গলায় ফাঁস লাগানো মরদেহ

    বাংলাদেশ মেইল ::

    বরগুনার আমতলী থানায় হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন আসামি শানু হাওলাদার (৫০) এর গলায় ফাঁস লাগানো মরদেহ ওসির কক্ষে ঝুলানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় বরগুনা পুলিশ সুপারের তদন্ত দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং পরিদর্শক (তদন্ত) ও ডিউটি অফিসারকে সাময়িক বরখাস্ত করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

    পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কলাগাছিয়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী ইব্রাহীম হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে একই ইউনিয়নের পশ্চিম গোজখালী গ্রামের মৃত্যু হযরত আলীর পুত্র শাহিনুর রহমান শানু হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৫ মার্চ বুধবার রাত সারে ১১টার দিকে তার বাড়ি থেকে পরিদর্শক (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির নেতৃত্বে থানা পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

    বুধবার রাতে পরিদর্শক (তদন্ত) রুমে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই রুমেই তাকে আটকে রাখে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে ডিউটিরত পুলিশ সদস্য কনস্টেবল মনির শানুর পরিদর্শক (তদন্ত) অফিস কক্ষে ফ্যানের সাথে গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলতে দেখে আমতলী থানার পরিদর্শক মো. আবুল বাশারকে জানায়।

    তিনি তাৎক্ষনিক বিষয়টি বরগুনা জেলা পুলিশ সুপারকে জানান। ঘটনা শুনে পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন (পিপিএম) আমতলী থানায় এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিদর্শক (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রী ও ডিউটি অফিসার এএসআই আরিফুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

    অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. তোফায়েল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মহরম আলী ও সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী সার্কেল) মো. রবিউল ইসলামকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ তদন্ত কমিটিকে জরুরী ভিত্তিতে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে।

    দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. শংকর প্রসাদ অধিকারী মরদেহের সুরতাহাল রিপোর্ট তৈরি করার পরে পুলিশ মরদেহ বরগুনা মর্গে প্রেরণ করেন।

    অপরদিকে নিহতের পরিবার সূত্রে জানাগেছে, গত ২৩ মার্চ সোমবার রাত অনুমান সারে ১১টার দিকে আমতলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রী নেতৃত্বে ৫ জন পুলিশ শাহীনুর রহমান শানু হাওলাদারকে বাড়ি থেকে ইব্রাহীম হত্যা মামলায় সন্দেহজনক আসামি হিসেবে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এরপর গত ৩ দিন ধরে তাকে থানায় আটকে রেখে তাকে শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করে।

    এ হত্যা মামলায় পরিদর্শক (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি শানুকে আসামি না করার জন্য পরিবারের কাছে তিন লক্ষ টাকা দাবি করেন। গত মঙ্গলবার সকালে নিহতের পুত্র সাকিব থানায় এসে তার বাবাকে যেন শারীরিক নির্যাতন না করে সে জন্য দশ হাজার টাকা পরিদর্শক (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রিকে দিয়ে যায়। গতকাল বুধবার সকালে পরিবারের লোকজন শানু হাওলাদারের সাথে দেখা করতে থানায় আসলে পুলিশ তাদের দেখা করতে দেয়নি।

    কান্নারত অবস্থায় শানু মিয়ার স্ত্রী ঝর্ণা বেগম বলেন, আমার নির্দোষ স্বামীকে ওসি মনোরঞ্জন মিস্ত্রী টাকার জন্য থানায় নির্যাতন করে হত্যা করে তার রুমের ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে।

    কান্নাজড়িত কণ্ঠে পুত্র সাকিব বলেন, আমার বাবাকে যেন শারীরিক নির্যাতন না করে সে জন্য আমি ওসি তদন্তকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। তারপরেও ওরা আমার বাবাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে।

    শানু হাওলাদারের শ্যালক রাকিব জানান, আমি বুধবার দুপুরে ওসি তদন্ত মনোরঞ্জন মিস্ত্রীর সাথে দেখা করি। তখন আমার ভগ্নীপতিকে এ হত্যা মামলায় না জড়ানোর শর্তে তিনি আমার কাছে তিন লক্ষ টাকা দাবি করেন। এ টাকা না দেয়ায় আমার ভগ্নীপতিকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে।