বিশ্বনেতার জন্মদিন আজ

    আজ সেই দিন যেদিন বাংলার বুকে জন্ম নিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- যিনি শোষণের যাঁতাকলে পিষ্ট জাতিকে মুক্তি দেয়ার লক্ষে জীবনের সোনালী দিনগুলো দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন, যৌবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সময় কাটিয়েছেন গরাদের ওপাশে আর দিনক্ষণ গুনেছেন কবে সুযোগ পাবেন সকলের প্রিয় মাতৃভূমিকে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করতে। তিনি উৎসর্গ করেছিলেন নিজের সবকিছু বাংলার মুক্তির জন্য। তাঁর মনের গহীনে নিরন্তর বাজনা বাজিয়েছে মুক্তির জয়গান।

    সেই কবে ১৯৪৮ সালের প্রথম মাসে ছাত্রলীগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু করেছিলেন আন্দোলন আর মুক্তির সংগ্রাম। আন্দোলন-সংগ্রাম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এগিয়েছেন ধাপে ধাপে, বুঝে শুনে, সন্তর্পণে। গঠন করলেন আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব দিলেন ভাষা আন্দোলনের।

    ১৯৪৮-এর ১১ সেপ্টেম্বর শাসকদের চক্রান্তে বহিস্কৃত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব হারানোর পরেও একটুও দমে যাননি তিনি। বরং আরও ক্ষুরধার হলো তার সংগ্রামের নেতৃত্ব। ১৯৫২’র ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিনের ‘উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে’ ঘোষণার প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে বাংলা ভাষা রক্ষার আন্দোলনকে এগিয়ে দেন অনেক দূর।

    দিন যায়, রাত যায়, বাঙলার এ অংশের মানুষের উপর শোষণ বাড়তে থাকে। তিনিও সেনাশাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম জোরদার করতে থাকেন, আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র, সামরিক শাসন আর সব প্রদেশকে একত্রে জুড়ে দিয়ে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার এক-ইউনিট পদ্ধতির বিরুদ্ধে অন্যান্য নেতাদের সাথে মিলে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন।

    পূর্ব বাঙলার স্বায়ত্ত্বশাসনের পক্ষে ছয় দফা দাবির রূপকার হিসেবে সারা দেশের হয়ে উঠেন দুর্দমনীয় নেতা। এভাবে তিনি ক্রমান্বয়ে হয়ে উঠলেন বাঙালির মুক্তির প্রতীক। তিনিই বাঙালিকে জাগিয়ে তুললেন, ‘পাক সার জমিন সাদা বাদ’ থেকে মোহমুক্তি ঘটালেন, হিমালয়ের মতো মাথা উঁচু করে অকুতোভয়ে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করলেন, বাঙালির আত্মপরিচয়ের সুযোগ করে দিলেন, দোর্দন্ড রূপকার হয়ে স্বাধীনতার পথে সাড়ে সাত কোটি মানুষকে হাঁটতে উদ্বুদ্ধ করলেন, একটি নতুন দেশের জন্ম দিলেন, মর্যাদাবান জাতি হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পাইয়ে দিলেন আর স্বাধীন জাতিকে দিয়ে গেলেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িকতার আলোকে দেদীপ্যমান একটি সংবিধান।

    ঊনসত্তরের ২৩ ফেব্রুয়ারির সোনালী বিকেলে লক্ষ লক্ষ প্রিয় অনুসারীর উপস্থিতিতে তৎকালীন মশহুর ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমদের ঘোষণায় তিনি হয়ে উঠলেন ‘বঙ্গবন্ধু’, একাত্তরের ৭ মার্চে একই ময়দানে ‘রাজনীতির কবি’ হিসেবে বিশ্বজোড়া খ্যাতি কুড়ালেন ১৮ মিনিটের কাব্যময় ভাষণ দিয়ে আর বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি একইস্থানে স্বাধীন ভুমিতে পা দিয়ে আরেকবার উজ্জীবিত করলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের দিশাহারা মানুষগুলোকে। আলোর পথ দেখালেন সামনে এগিয়ে যাবার। হলেন স্বাধীনতার মহানায়ক।

    যে মহাপুরুষের কথা বলছি তিনি হলেন টুঙ্গিপাড়ার নিভৃত গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মনেয়া বাংলাদেশের স্থপতি, স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীনতার ঘোষক আর সোনার বাংলার রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

    জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক ইতিহাস হচ্ছে একটি বিস্ময়। বঙ্গবন্ধু-বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের স্থপতি নয়, বঙ্গবন্ধু বিশ্বনেতা। তার নেতৃত্বকে বিশ্ববাসী যে সম্মান দেখিয়েছেন, সেই সম্মানে বাংলাদেশ আজও ভূষিত। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করেই তরুণ প্রজন্মকে পথ চলতে হবে।

    আজ বাংলাদেশের উন্নয়ন, প্রযুক্তির যে বিকাশ তা থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে তরুণরাই। তরুণদের মাঝে উদ্যমী শক্তি, দেশপ্রেম, মানবতার যে বিকাশ তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই সম্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনার কারণেই তরুণরা আজ ঐক্যবদ্ধ। যদি বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে তা আমাদের জীবনে কাজে লাগাতে পারি, তা হবে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা ও স্মরণ করার শ্রেষ্ঠ উপায়।

    বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এই স্বাধীন দেশে মানুষ যখন পেট ভরে খেতে পাবে, পাবে মর্যাদাপূর্ণ জীবন; তখনই শুধু এই লাখো শহিদের আত্মা তৃপ্তি পাবে।’ এই কথাটা গভীরভাবে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।

    ২০২০ সালে পূর্ণ হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সাল হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এ উপলক্ষেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হবে বলে ঘোষণা দিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

    শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম তারিখ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ পালিত হবে।

    জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হওয়া এবং মুজিববর্ষ পালন শুরুর আজকের এ দিন। তার জন্মদিনে ১৭ মার্চে কামনা করি এ বিশাল হৃদয়ের মানুষটির আত্মার মাগফিরাত আর স্বগের্র একটি সুন্দর স্থান।

    বাংলাধারা/এফএস/টিএম