বাংলাদেশ মেইল ::
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন আন্দোলনের উৎসভূমি হয়ে ওঠা হাটহাজারী মাদ্রাসার শীর্ষ পদে শাহ আহমদ শফীর উত্তরসূরি কে হবেন, তা নিয়ে তৎপরতায় প্রকাশ্যে এসেছে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব।
বুধবার (১৭ জুন) বসতে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসার শুরা কমিটির বৈঠক। মাদ্রাসার শিক্ষক হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দিন রুহী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে শুরা কমিটির বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হবে এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। তবে একটি পক্ষের ধারণা, এ বৈঠকে মাওলানা শাহ আহমদ শফীর উত্তরসূরি নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে।
বৈঠক সম্পর্কে মঈনুদ্দিন রুহী বলেন, ‘বুধবার সকাল ১০টায় শুরা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে সব শুরা সদস্যকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’
হাটহাজারী উপজেলার আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা দেওবন্দের পাঠ্যসূচিতে পরিচালিত বাংলাদেশের অন্যতম বড় এবং পুরনো কওমি মাদ্রাসা।
এ মাদ্রাসার মহাপরিচালক (মুহতামিম) শাহ আহমদ শফী বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশেরও (বেফাক) সভাপতি।
৯৫ বছরের বেশি বয়সী শফীই ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে আসা হেফাজতে ইসলামের সর্বোচ্চ নেতা।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক (নায়েবে মুহতামিম)।
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ আহমদ শফী মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে কারো নাম ঘোষণা করতে পারেন- এমন গুঞ্জন শোনা গেলে সোমবার রাত থেকেই বাবুনগরীর অনুসারীদের তৎপরতা শুরু হয়।
জুনাইদ বাবুনগরী ছাড়াও মুফতি নূর আহমদ, মাওলানা আবদুস সালাম, মাওলানা মো. ইয়াহিয়া, মাওলানা মো. শোয়েব এবং মাওলানা মো. কবির আহমেদ এ বিষয়ে নিয়মতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত চান৷
গতকাল দুপুরে হাটহাজারী মাদ্রাসার মসজিদে নামাজে অংশ নেন বাবুনগরীর অনুসারীরা হেফাজত নেতাকর্মীরা।
মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাটহাজারী ওলামা পরিষদ নামের একটি সংগঠনের নেতারা সে সময় মসজিদের মাইকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক নিয়োগের গুঞ্জন নিয়ে বক্তব্যও দেন।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা কথা আসতে শুরু হয় । পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। হাটহাজারীর বিভিন্ন গ্রামে পুলিশের অভিযানের কথাও জানিয়েছেন বাবুনগরীর অনুসারীরা৷
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আহমদ শফীর ছেলে হেফাজত নেতা আনাস মাদানি বলেন, এখন মাদ্রাসা বন্ধ। লকডাউনের আগে মাদ্রাসার বেশিরভাগ শিক্ষার্থী চলে গেছেন। শুরা বোর্ড যে সিদ্ধান্ত প্রদান করে সে অনুযায়ী হাটহাজারী মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত মোহতামিম নিয়োগ করা হবে৷ হাটহাজারী মাদ্রাসায় যিনি মুহতামিম পদে দায়িত্বশীল আছেন, তার অবর্তমানে শুরা কমিটি (কার্যকরী কমিটি) বসে ঠিক করবে পরবর্তী মুহতামিম কে হবেন।”
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, “ফেইসবুকে কিছু ছেলে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছে। বড় হুজুরের (আহমদ শফী) সাথে সিনিয়র শিক্ষকরা দেখা করেছেন। মজলিসে শুরা নির্ধারণ করবে পরে কী হবে।”
হেফাজতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন মহাপরিচালক নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হলে সোমবার নিজের অনুসারীদের নিয়ে সভা করেন জুনাইদ বাবুনগরী।
এরপর গতকালও হাটহাজারী সদরে আরেকটি সভা হয়। সেখানে হাটহাজারী ওলামা পরিষদ নামের একটি সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে ওলামা পরিষদ নেতা মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র ইয়াসীন আরাফাত বলেন, “হুজুরের (আহমদ শফী) অসুস্থতাকে পুঁজি করে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক নিয়োগ হতে পারে বলে কানাঘুষা আমরা শুনেছি। সেটা নিয়ে ওলামা পরিষদের সভায় আলোচনা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাবুনগরীর বক্তব্য জানতে শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বাবুনগরীর ঘনিষ্ঠ একটি সুত্র জানিয়েছে, শুরা বোর্ডের সিদ্ধান্তের কথা বলা হলেও মুলত আনাস মাদানী তার পছন্দের লোককেই ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম নির্ধারন করাবেন৷ সরকারের পক্ষ থেকেও বাবু নগরীর বিষয়ে আপত্তি রয়েছে৷
আজকের শুরা বৈঠকের পরই জানা যাবে হাটহাজারী মাদ্রাসা ও হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব কার হাতে যাচ্ছে।