ভেজাল ও উচ্চমূল্যের ঔষধ সিন্ডিকেটকে ক্রসফায়ার দিনঃ হাজারী লেইনে সুজন

    চট্টগ্রাম মেইলঃ করোনাকালীন পরিস্থিতিতে ভেজাল ঔষধ বিক্রয়, বিপণন এবং উচ্চমুল্যের সিন্ডিকেটের সাথে জড়িতদের ক্রসফায়ারের মতো কঠিন শাস্তি প্রদানের দাবী জানিয়েছেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি আজ মঙ্গলবার (১৬ই জুন ২০২০ইং) বেলা সাড়ে ১২টায় নগরীর ঔষধ পাড়া খ্যাত হাজারী লেইনে নাগরিক উদ্যোগ আয়োজিত প্রচারণায় উক্ত দাবী জানান।

    এ সময় জনাব সুজন বলেন, হাজারী লেইন নগরীর বিশাল ঔষধের চাহিদার বিশাল একটি অংশ পূরণ করে। ঐতিহ্যগতভাবে এ বাজারের প্রচুর সুনাম রয়েছে। নগরীর অনেক নামী দামী ব্যবসায়ীও হাজারী লেইনে ঔষধ ব্যবসার সাথে জড়িত। করোনাভাইরাসকালীন বর্তমান সময়ে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চেয়েও একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে হাজির হয়েছে ঔষধ। তাছাড়া ভাইরাসজনিত কারণে নগরীর অধিকাংশ এলাকার জনগন জ্বর, সর্দি, কাঁশিসহ বিভিন্ন মৌসুমী রোগে ভূগছে। এ পরিস্থিতিতে একটি চক্র জনগনের নিত্য প্রয়োজনীয় ঔষধ সামগ্রীর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে জনগনকে ভোগান্তিতে ফেলছে। দেখা যাচ্ছে যে সাধারণ রোগীর জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধপত্রও পাওয়া যাচ্ছে না এখানে। সাধারণ জ্বরের জন্য ডাক্তারের পরামর্শকৃত সহজলভ্য ঔষধ যেমন- নাপা এক্সটেন্ড, প্যারাসিটামল, এইস এক্স আর, এইস পাওয়ার, সিভিট, ডকসিক্যাপ, জিম্যাক্সসহ জিথ্রক্স চাইলেই পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ এসব ওষুধগুলো আগে ঔষধের দোকানে হাতের নাগালেই পাওয়া যেতো। প্রশ্ন করলে সরবরাহ নেই বলে সোজা জবাব বিক্রয়কর্মীর, অথচ বাড়তি মূল্য দিলে নিমিষেই পাওয়া যাচ্ছে এসব ঔষধপত্র। এভাবে বাড়তি মূল্য নিয়ে জনগনের পকেট কেটে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গিয়েছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীচক্র। যেন করোনা তাদের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে নেমে এসেছে। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন মৃত্যুর এ সন্ধিক্ষণে ঔষধই যখন জীবন বাঁচিয়ে রাখার একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে প্রতিটি ঘরে ঘরে হাজির হয়েছে ঠিক সেই মূহুর্তে ঔষধের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, ভেজাল ঔষধ বিক্রয়, বিপণন, ঔষধ লুকিয়ে রাখা এবং ঔষধের উচ্চ মূল্যের মতো গর্হিত কাজ করছে এক শ্রেণীর অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী। এরা মানবতার শত্রু, এরা অমানুষ, এরা গণদুশমন। এদের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারই একমাত্র উপযুক্ত শাস্তি বলে মত প্রকাশ করেন তিনি, না হয় করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাঁচানো কোনভাবেই সম্ভব হবে না। দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন গ্রাম থেকেও মানুষজন ঔষধের জন্য এসে বাজারের দোকানে দোকানে ঘুরে কাংখিত ঔষধ না পেয়ে বিফল মনোরথে বাড়ীতে ফিরে যাচ্ছে। অথবা কোনভাবে পেলেও অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য তাদেরকে প্রচন্ডরকম নিরাশ করছে। তিনি আরো বলেন অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির দুষ্টু সিন্ডিকেট চক্রটি জনগনের স্বাস্থ্যসেবার আবশ্যকীয় উপাদান ঔষধের উপর ভর করেছে। করোনা পরিস্থিতিকে পুঁজি করে জনগনকে অস্থির করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এসব ওষুধের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া যেসব ঔষধ জ্বর, সর্দি এবং কাশির জন্য অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ সেসব ঔষধগুলো অধিক হারে উৎপাদনের মাধ্যমে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিজস্ব বিক্রয়কর্মীর মাধ্যমে জনগনের কাছে পৌছে দেওয়ার অনুরোধ জানান। ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্টানগুলোর সময় এসেছে এখন সরকারের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জনগনের পাশে দাড়ানোর। কোন ধরনের দুষ্টু চক্রের ফাঁদে পা দেওয়া হবে আত্নঘাতি সিদ্ধান্ত।

    নাগরিক উদ্যোগের প্রচারনা চলাকালীন সময়ে হাজারী লেইনে উপস্থিত ক্রেতা সাধারণ জনাব সুজনকে হাততালি দিয়ে ধারাবাহিকভাবে জনসম্পৃক্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অভিনন্দন জানান। ক্রেতাসাধারণ এক পর্যায়ে তাঁকে কাছে পেয়ে তাদের হতাশার কথা ব্যক্ত করেন ও ঔষধের দুস্প্রাপ্যতা এবং উচ্চমূল্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি নিজেও বিভিন্ন দোকানের সামনে ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ী কর্তৃক বিক্রয়কৃত বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রী হেক্সিসল, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ডেটল ও স্যাভলন পরীক্ষা করে ভেজাল এবং নিম্নমানের অননুমোদিত পণ্য বিক্রয়ের প্রমান পান। যেগুলোর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কোন অনুমোদন নেই। বিভিন্ন নামী দামী ব্র্যান্ডের লোগো সুপার কম্পোজের মাধ্যমে নকল করে ভেজাল পণ্যকে বোতলে ভরে ক্রেতাসাধারণকে প্রতারিত করছে এসব ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা। তাদেরকে এসব ভেজাল পণ্য বিক্রয়ের ব্যাপারে হাতেনাতে অভিযুক্ত করলে তারা এসব পণ্য আর বিক্রয় করবেন না বলে অঙ্গীকার করেন। তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা সাদা পোশাকে ক্রেতা সেজে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার সবিনয় অনুরোধ জানান। ঔষধ নৈরাজ্য বন্ধের দাবীতে প্রশাসনের যে কোন কর্মসূচীতে নাগরিক উদ্যোগ প্রয়োজনে যে কোন সহযোগিতা করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।