করোনার ডামাডোলে নাগরিক সুবিধা যেন হারিয়ে না যায়ঃ নাছিরকে সুজন

    চট্টগ্রাম মেইলঃ করোনার ডামাডোলে নাগরিক সুবিধা যেন হারিয়ে না যায় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য চসিক মেয়রের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি আজ শনিবার (২৭শে জুন ২০২০ইং) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ আহবান জানান।

    এ সময় জনাব সুজন সিটি কর্পোরেশনকে সীমাবদ্ধতার মাঝেও করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে আসার জন্য চসিক মেয়রকে ধন্যবাদ জানান। তবে তিনি বলেন পোর্ট কানেকটিং সড়কটি চট্টগ্রামের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন খ্যাত এ সড়কটির সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজ প্রায় চার বছরেও শেষ করতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন। এ সড়ক দিয়ে পুরো নগরীর চলাচলের প্রায় অর্ধেক গাড়ী আমদানি রপ্তানি কাজে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশ এবং বাহির হয়। বিশেষ করে বাস, ট্রাক, ট্রেইলর, কাভার্ড ভ্যানের মতো ভারী বাহন ছাড়াও অনেক হালকা বাহনও এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগ সড়ক হিসেবেও যাত্রীসাধারণ ব্যবহার করে এ সড়কটি। দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কটি সংস্কারের নামে বন্ধ থাকায় ভারী যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে ঐ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলোর চাপ পড়ছে নগরীর অন্য সড়কগুলোতেও। আর এর প্রভাবে পুরো নগরী যানজটে স্থবির হয়ে থাকছে ঘন্টার পর ঘন্টা। তাছাড়া এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করলে দেখা যায় ছোট বড়ো অসংখ্য গর্ত। কোথাও গর্তে পানি জমে ডোবার আকার ধারণ করেছে। সেই গর্তে প্রতিদিন বাস, ট্রাক, ট্রেইলর, কাভার্ড ভ্যানের মতো ভারী যানবাহনগুলো কোথাও উল্টে পড়ছে কিংবা আটকা পড়ছে। এতে করে ঐ সড়কটি দিয়ে যান চলাচলে মারাত্নক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিপূর্বে পোর্ট কানেকটিং সড়কের গর্তে ভারী যানবাহন উল্টে গিয়ে প্রাণহানির মতো মর্মান্তিক দূর্ঘটনাও ঘটেছে। সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে অচল থাকায় এর আশে পাশের ব্যবসা বাণিজ্যও লাটে উঠেছে। ফলতঃ ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন দোকানদারগণ। বলা যায় এটি নগরীর অতি ব্যস্ততম একটি সড়ক। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয় এতো ব্যস্ততম একটি সড়ক কিভাবে বছরের পর বছর এতো অবহেলায় পড়ে থাকে। তাই সচেতন মহলের প্রশ্ন যেখানে পদ্মা সেতুর মতো এতো বৃহৎ প্রকল্পের কাজ তিন বছরে প্রায় ৭০ ভাগ সমাপ্ত, সেখানে পোর্ট কানেকটিং সড়ক পুরোপুরি ব্যবহার উপযোগী হতে আর কত সময় লাগবে? এছাড়া পুরো নগরীর মূল সড়ক ছাড়াও অলিগলিতে ভাঙ্গা রাস্তা চোখে পড়ছে। রাস্তাগুলো সহসাই মেরামত না করলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীকে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হবে।

    তিনি বলেন বাংলাদেশের উপকূলে প্রবেশ করেছে মৌসুমি বায়ু। উকি দিচ্ছে আষাঢ়। প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশে চলছে তীব্র তাপদহ, সঙ্গে মাঝে মধ্যে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার প্রভাবে সারাদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশংকা করছেন তারা। নগরবাসীর মনে শুরু হয়েছে অজানা আতংক। সম্প্রতি সামান্য বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তাই করোনার পাশাপাশি জলাবদ্ধতাকেও অধিকতর গুরুত্ব দানের আহবান জানান তিনি। বিশেষ করে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে নগরীর অধিকাংশ খাল নালাকে বাঁধ দিয়ে পানির স্বাভাবিক গতিপথ রূদ্ধ করা হয়েছে। এতে করে অল্প বৃষ্টিতেই নগরীর অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। দ্রুততার সাথে এ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য চসিক, চউক এবং জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্পের মধ্যে সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই। নচেৎ নগরবাসীকে এর খেসারত দিতে হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি। সমন্বয়হীন কর্মকান্ডের কারণে আসন্ন বর্ষায় নগরবাসী জলাবদ্ধতায় নিমগ্ন হলে সংশ্লিষ্ট সকলকে এর দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। তিনি কালবিলম্ব না করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি সবিনয় অনুরোধ জানান।

    তিনি আরো বলেন সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম অনেকটাই বন্ধ। অবাধে বেড়েছে মশার দৌরাত্ম্য। নগরীর অধিকাংশ এলাকার মানুষ মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। মশার অত্যাচারে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। সন্ধ্যার পর কোথাও একটু বসার উপায় নেই। মশা নিধন কাজে অনেকটা স্থবিরতা নেমে এসেছে। সেই সাথে বর্ষা সমাগত। দেখা যাচ্ছে যে বর্ষার আগমনীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ইতিমধ্যেই ডেঙ্গু রোগী ভর্তির খবর পাওয়া যাচ্ছে। দ্রুততার সাথে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে করোনা মহামারীর সাথে ডেঙ্গুও মহামারী আকার ধারণ করে নগরবাসীর দূর্ভোগ বাড়াবে। তিনি নগরীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মশার বংশ বিস্তার রোধকল্পে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান। এছাড়া মশক নিধন কার্যক্রমকে অধিকতর গুরুত্ব দানের জন্য চসিক মেয়রের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

    জনাব সুজন বলেন সিটি কর্পোরেশনের প্রধানতম কাজ হচ্ছে নগরবাসীর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা এবং এ লক্ষ্যে যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করা। কিন্তু উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মকান্ডকে ঠিক সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে স্তুপকৃত ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখা হচ্ছে। এর ফলে পরিবেশ দূষণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা কর্মকান্ডে শিথিলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রতিদিনের আবর্জনা প্রতিদিন পরিস্কার করা হয় না। এছাড়া নগরীর নালা ড্রেনসমূহও ময়লা আবর্জনায় ভর্তি হয়ে রয়েছে। ফলে পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি হয়ে উৎকট গন্ধ এবং মশার উর্বর প্রজণন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে নালা ড্রেনগুলো।

    এছাড়া পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলছে না। পিপিই, গ্লাভস, মাস্কসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই পরিচ্ছন্নতা কর্মকান্ড পরিচালনা করছে তারা। এতে করে করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পরিচ্ছন্নতা কর্মীগণ। তিনি করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পিপিই, গ্লাভস, মাস্কসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং সিটি কর্পোরেশনকে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নিকট উপরোক্ত সামগ্রী সমূহ সরবাহের অনুরোধ জানান।

    তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে করোনা কেন্দ্রিক মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালগুলোর বিপুল পরিমাণের চিকিৎসা বর্জ্য অস্বাস্থ্যকরভাবে ফেলে দেয়া হচ্ছে। এতে করে নগরীতে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। আর বহুল জনবসতিপূর্ণ এই দেশে করোনাভাইরাস সক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে পড়লে তা হবে মারাত্মক রকমের দুর্যোগ। আর এই ভাইরাস বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির ক্ষেত্রে মেডিক্যাল বর্জ্যের অব্যবস্থাপনাই হবে সবচেয়ে বড় কারণ। সঠিক প্রক্রিয়ায় মেডিকেল বর্জ্য জীবাণুমুক্ত করে অপসারণ করা যাচ্ছে না। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। হাসপাতাল, ক্লিনিক, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ইত্যাদিকে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। তিনি করোনা কেন্দ্রিক মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপরও নজর দানের জন্য চসিক মেয়রের প্রতি বিনীত আহবান জানান।