ওষুধ শিল্পে ভারত সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি সম্পদ: নরেন্দ্র মোদি

    ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘‘এই মহামারী ( কারোনা) আবারও দেখিয়েছে যে ভারতের ওষুধ শিল্প কেবল ভারতের নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি সম্পদ। বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলির ওষুধের ব্যয় হ্রাসে এটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ভারতে তৈরি টিকা দিয়ে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ বাচ্চাদের টিকা দেয়া হয়।আজও, আমাদের সংস্থাগুলি কোভিড-১৯ এর টিকা আবিষ্কার ও উৎপাদনের জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাতে সক্রিয় রয়েছে। আমি নিশ্চিত যে টিকা আবিষ্কার হওয়ার পরে এটির বিকাশ এবং উৎপাদনে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।’’

    আজ বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়া গ্লোবাল উইক ২০২০ এর উদ্বোধনী ভাষণে নরেন্দ্র মোদি এসব কথা বলেন।

    তিনি আরও বলেন, ‘‘সবাই বিশ্বাস করে বৈশ্বিক পুনর্জাগরণে ভারত অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। আমি এর দু’টি কারণ দেখতে পাই। প্রথমটি হল ভারতীয় প্রতিভা। বিশ্বব্যাপী আপনারা ভারতের মেধার অবদান দেখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ভারতীয় পেশাদার চিকিৎসক, নার্স, ব্যাংকার, আইনজীবী, বিজ্ঞানী, অধ্যাপক এবং আমাদের পরিশ্রমী কর্মীরা। ভারতীয় প্রযুক্তি শিল্প এবং প্রযুক্তি পেশাদারদের কে ভুলতে পারে? কয়েক দশক ধরে তারা পথ দেখিয়ে চলেছে। ভারত হল প্রতিভার পাওয়ার হাউস, যেখানে সবাই অবদান রাখতে আগ্রহী এবং শেখার জন্য প্রস্তুত।’’

    ‘‘দ্বিতীয় বিষয়টি হল- ভারতের সংস্কার ও পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষমতা। ভারতীয়রা প্রাকৃতিক সংস্কারক! ইতিহাস বলে যে, ভারত সামাজিক বা অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করেছে তার সংস্কার ও পুনরুজ্জীবনের চেতনার মাধ্যমে। এই চেতনা এখনও অব্যাহত রয়েছে।’’

    মোদি বলেন, ‘‘একদিকে ভারত একটি বৈশ্বিক মহামারীর বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই করছে। জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি আমরা অর্থনীতির প্রতিও সমানভাবে গুরুত্ব আরোপ করছি। ভারতের পুনর্জাগরণের অর্থ হলো: যত্ন সহকারে পুনর্জাগরণ, সহানুভূতির সাথে পুনর্জাগরণ, পরিবেশ এবং অর্থনীতি উভয়ের জন্যই টেকসই পুনর্জাগরণ। ভারতীয় সংস্কৃতিতে প্রত্যেকে প্রকৃতির উপাসনা করেন। ভারতে বিশ্বাস করা হয় যে, পৃথিবী আমাদের মা এবং আমরা তার সন্তান।’’

    ‘‘গত ছয় বছরে ভারত মোট আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, রেকর্ড আবাসন ও অবকাঠামো নির্মাণ, ব্যবসা সহজীকরণ, জিএসটি সহ ট্যাক্স সংস্কার ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগ-আয়ুষ্মান ভারত প্রচলনের মাধ্যমে ভারত পরবর্তী পর্যায়ে উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করেছে।’’

    ভারতীয়দের অসম্ভবকে জয় করার স্পৃহা রয়েছে বলে উল্লেক করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে ভারতে আমরা ইতোমধ্যে ইতিবাচক সাড়া দেখতে পাচ্ছি। মহামারীর এই সময়ে, আমরা আমাদের নাগরিকদের ত্রাণ সরবরাহ করেছি এবং গভীর কাঠামোগত সংস্কার করেছি। আমরা অর্থনীতিকে আরও উৎদনশীল, বিনিয়োগবান্ধব এবং প্রতিযোগিতামূলক করে তুলছি। আমাদের ত্রাণ প্যাকেজটি ছিল আধুনিক যার মাধ্যমে সর্বোচ্চ সংখ্যক দরিদ্র মানুষকে সাহায্য পৌঁছানো ছিল আমাদের লক্ষ্য। প্রযুক্তির কারণেই আর প্রতিটি পয়সা সরাসরি উপকারভোগীদের কাছে পৌঁছেছে।’’

    ‘‘ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে: বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নগদ অর্থ প্রদান, কয়েক কোটি মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য প্রদান এবং অন্যান্য অনেক কিছু। আমরা আনলক করার সাথে সাথে লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে কর্মসংস্থান দেওয়ার জন্য আমরা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম গণপূর্ত কর্মসূচি চালু করেছি। এটি কেবল গ্রামীণ অর্থনীতিকে পুনরায় জোরদার করবে না, গ্রামীণ অঞ্চলে টেকসই অবকাঠামো তৈরিতে সহায়তা করবে।’’

    ভারত বিশ্বের অন্যতম উন্মুক্ত অর্থনীতি দেশ বলে দাবি করে মোদি বলেন, ‘‘সমস্ত বৈশ্বিক সংস্থাগুলিকে আমরা ভারতে স্বাগত জানাই। খুব অল্প সংখ্যক দেশই ভারতের মতো এ ধরণের সুযোগসুবিধা দিয়ে থাকবে। ভারতে বিভিন্ন নতুন ও দ্রুতবর্ধনশীল খাতে অনেক সম্ভাবনা এবং সুযোগ রয়েছে। কৃষিতে আমাদের বিভিন্ন সংস্কারগুলো স্টোরেজ এবং লজিস্টিক্সে বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা বিনিয়োগকারীদের জন্য আমাদের কৃষকদের কঠোর পরিশ্রমে সরাসরি বিনিয়োগের জন্য দরজা উন্মুক্ত করেছি।’’

    এমএসএমই খাতে সংস্কারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘ মএসএমই একটি ক্রমবর্ধমান খাত, যা বড় শিল্পগুলোর পরিপূরক হবে। প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ নীতিমালা শিথিল করার মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সেনাবাহিনী আপনাকে এর জন্য পণ্য তৈরি করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে! এখন মহাকাশ খাতে বেসরকারী বিনিয়োগের আরও সুযোগ রয়েছে। এর অর্থ জনগণের সুবিধার্থে মহাকাশ প্রযুক্তির বাণিজ্যিক ব্যবহারে আরও বেশি প্রবেশাধিকার থাকবে ভারতের প্রযুক্তি এবং স্টার্ট আপ সেক্টরটি খুবই সম্ভাবনাময়। লক্ষ লক্ষ ডিজিটালি ক্ষমতায়িত ও উচ্চাভিলাষী মানুষের জন্য একটি বাজার রয়েছে। আপনারা তাদের জন্য কী ধরণের পণ্য তৈরি করতে পারেন তা নিয়ে ভাবুন।’’

    মোদি ১৩০ কোটি ভারতীয়দের একটি আত্মনির্ভর ভারত গড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘একটি আত্মনির্ভর ভারত যা দেশীয় উৎপাদন এবং বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় করবে। আত্মনির্ভর মানে আত্মকেন্দ্রীক বা বিশ্বের কাছে অবরুদ্ধ হওয়া নয় বরং এর মানে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা। দক্ষতা, সাম্য এবং স্থিতিস্থাপকতা প্রচার করে এমন নীতিগুলোই আমরা অনুসরণ করব।’