বাংলাদেশ মেইল ::
সীতাকুণ্ড উপজেলায় উদ্বেগ জনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে আত্মহত্যার ঘটনা। গত ছয় মাসে সীতাকুন্ডে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে নয়টি এবং রহস্য জনক মৃত্যু হয়েছে একটি।
চলতি বছরে এইসব আত্মহত্যা জনমনে আতঙ্ক বাড়িয়েছে কয়েক গুণ।
বছরের প্রথম আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটেছে ভাটিয়ারী ইউনিয়নের অপু জল দাসের(২৮) আত্মহত্যার মধ্যদিয়ে। দ্বিতীয় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে। গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ভালোবেসে বিয়ে করে যৌতুক এর কারণে নিজের জীবন দিয়ে ভালোবাসার প্রতিদান দিলেন বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ১৮ বছর বয়সী তুশা আক্তার। গত ১৭ই মার্চ ভাটিয়ারী ইউনিয়নে আত্মহত্যা করে মোহাম্মদ শামীমের (৪০)। এর পরের মাসেই ৮ দিনের ব্যবধানে ঘটেছে তিনটি আত্মহত্যার ঘটনা। ৪ই মে এক ঘন্টার ব্যবধানে দুটি ইউনিয়নে দুই গৃহবধূ আত্মহত্যার ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে সবার মাঝে।
বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের শাহেদা আক্তার (২৬) ও বাড়কুন্ড ইউনিয়নে আয়রিন আক্তার (২১) এর আট দিন পর গুলীয়াখালীতে শহিদুল ইসলাম (২৭) নামে আরেক যুবক আত্মহত্যা করে। এছাড়া জুন মাসে ঘটেছে দুটি আত্মহত্যার ঘটনা ১৭ জুন বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে আত্মহত্যা করে আলাউদ্দিন(৩১) নামে এক যুবক। তার দু দিনের মাথায় কুমিরায় আত্মহত্যা করে অন্তঃসত্ত্বা সুষ্মিতা (৩৫)। প্রত্যক্ষ ভাবে একটি আত্মহত্যা হলে ও পরোক্ষ ভাবে দুটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে এখানে। সর্বশেষ ২৫ জুলাই মুরাদপুর ইউনিয়নে তানিয়া (১৫) নামে এক কিশোরী আত্মহত্যা করে। এছাড়া গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোড়ামরা এলাকায় নিজ ঘর থেকে শারমিন আক্তার নামে এক গৃহ বধূর লাশ উদ্বার করে পুলিশ এই ঘটনায় দুজনকে আটক করে পুলিশ।
নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ-সীতাকুণ্ডের সদস্য সচিব লায়ন মো.গিয়াস উদ্দিন বলেন, সীতাকুণ্ডে চলতি বছরে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ৯ টি, যা অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা ।
সমাজ বিজ্ঞানী ড. অনুপম সেনের মতে, বর্তমান জীবন নিয়ে হতাশা থেকে তরুনরা আত্নহত্যা বা আত্নহননের পথ বেঁচে নেয়।যাঁরা আত্নহত্যা করে তারা এক ধরনের মানসিক রোগী। তাই এ ধরনের লোকদের সামাজিক ভাবে সচেতন ও ধর্মীয় মূল্যবোধের মাধ্যমে এ পথ হতে ফিরিয়ে আনতে হবে।
সীতাকুণ্ডে মানব অধিকার কর্মী ও সাংবাদিক খায়রুল হোসেন বলেন, সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা না হওয়ার কারণে আত্মহত্যার মতো ঘটনা বেড়ে চলেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে যদি ভিকটিমের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা যেত তাহলে আত্মহত্যা অনেকাংশে কমে যেত। এছাড়া পারিবারিক কলহ কারণে অনেকেই আত্মহত্যা করছে।
সাংবাদিক কামরুল ইসলাম দুলু বলেন, ছয়মাসে ৯ জনের আত্নহত্যা, বিষয়টি উদ্ধেগজনক। অত্যাচারিত হতে হতে যখন কোনো মানুষ এমন একটা পর্যায় পৌঁছায়, যে অত্যাচারের প্রতিকার পাওয়ার কোনো রাস্তা থাকে না, তখন অনেকে আত্মহুতি দিয়ে ফেলেন। আত্নহত্যা রোধ করতে হলে সামাজিকভাবে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। সেটা হতে পারে ধর্মীয়ভাবে, পারিবারিকভাবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
সমাজ বিশ্লেষকরা মনে করছেন পারিবারিক অশান্তির, যার পেছনে কারণ গুলো হচ্ছে সামাজিক, যোগাযোগ মাধ্যম এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির দিকে মনোনিবেশ এবং পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে সমঝোতা এবং সময় না দেওয়ার প্রবণতা। এমনকি দারিদ্রতা, বেকারত্ব এবং মানসিক চাপের প্রভাব তো রয়েছে। মানসিক চাপমুক্ত থাকা এবং পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করা গেলে আত্মহত্যা অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করছেন তারা।