ঢাকাকে কাছে টানতে চায় চীন

    বাংলাদেশ মেইল::

    নেপাল, শ্রীলঙ্কার পর ভারতের অপর এক প্রতিবেশী বাংলাদেশকে নীরবে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে চীন। গত ১লা জুলাই বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্য আমদানিতে শুল্কহীন নীতিমালা গ্রহণ করেছে কমিউনিস্ট দেশটি। এর ফলে, চীনে অতিরিক্ত ৫ হাজার ১৬১টি পণ্য কোনো শুল্ক ছাড়াই রপ্তানি করতে পারবে বাংলাদেশ। চীনের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশ সরকারের হৃদয় জয় করে নিয়েছে।

    স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে, পূর্বে চীনে ৩ হাজার ৯৫টি পণ্য শুল্ক ছাড়া রপ্তানি করতে পারতো বাংলাদেশ। যদিও অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে শুল্কহীন রপ্তানির সুবিধা ২০১৫ সাল থেকেই দিয়ে আসছে চীন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ সুবিধা দেয়া হয়েছে চলতি মাসের শুরুতে। বাংলাদেশ সরকার যখন করোনা ভাইরাস মহামারিতে ধসে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে হিমশিম খাচ্ছে, তখনই এ সুবিধা দিলো চীন। এছাড়া, বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশকে ৬৪০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথাও চলছে দুই পক্ষের মধ্যে।চীনের শুল্কছাড় সুবিধাকে সাদরে গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ।

    দিল্লি-ভিত্তিক থিংক-ট্যাংক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) এর রিসার্চ ফেলো জয়ীতা ভট্টাচার্য সম্প্রতি এক নিবন্ধে লিখেছেন, পদক্ষেপটিকে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক জয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ভারতীয় সংবাদ পত্র ডেকান হেরাল্ডের এক প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে।

    এতে বলা হয়, চীনের এসব পদক্ষেপ নয়া দিল্লির নজর কেড়েছে। ভারতের চারপাশে ভূ-তাত্ত্বিক প্রভাব বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছে চীন। মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায় কভিড-১৯ সহায়তা প্রদান করেছে, দেশ দুটিকে এই সংকট মোকাবিলায় ঋণ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। যদিও ইতিমধ্যেই চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের আওতায় ঋণের ফাঁদে আটকা পড়েছে দেশ দুটি। ওই ফাঁদ থেকে বের হয়ে আসা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য।

    এক সূত্র ডেকান হেরাল্ডকে জানিয়েছে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে চীনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ আদতে ভারতের চারপাশজুড়ে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় ভূ-তাত্ত্বিক প্রভাব বৃদ্ধির বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ। বেইজিং ইতিমধ্যে কাঠমা-ুর মাধ্যমে নেপাল-ভারত ভূখ-ীয় বিবাদ সৃষ্টি করেছে। এছাড়া, কলম্বো সমুদ্র বন্দরের ইস্ট কনটেইনার টার্মিনালের উন্নয়ন করতে গত বছর ভারত ও জাপানের সঙ্গে করা একটি চুক্তি পর্যালোচনা করে দেখতে শ্রীলঙ্কাকে চাপ দিয়েছে চীন। অবশ্য, চীনের বাণিজ্যিক সুবিধা বাংলাদেশকে যে বাণিজ্য ঘাটতি ও ঋণের ফাঁদে আটকে ফেলতে পারে সে বিষয়ে ঢাকাকে সতর্ক করে দিয়েছে নয়া দিল্লি।
    ভট্টাচার্য ডেকান হেরাল্ডকে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক ইতিহাসে প্রোথিত। দুই দেশ একে অপরের রক্তের ভাই। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার সম্পর্কটি বিনিময়-ভিত্তিক।

    ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে উন্নয়নমূলক প্রকল্পে সহায়তা হিসেবে ৮০০ কোটি ডলার দিয়েছে ভারত। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদারও বাংলাদেশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৯২১ কোটি ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে ভারত। একইসময়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১০৪ কোটি ডলার সমমূল্যের পণ্য।

    ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীনে ৮৩ কোটি ১০ লাখ ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। আমদানি করেছে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার সমমূল্যের পণ্য।