সুজনের না পাবার মুকুটে প্রথম পালক

    বাংলাদেশ মেইল ::  

    খোরশেদ আলম সুজন – পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ। সত্তরের দশকে  বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যুক্ত হয়েছিলেন রাজনীতিতে। শৈশব থেকেই পার করেছেন নানা চড়াই-উতরাই। রাজনীতির হাতেখড়িটাও শৈশবেই। কিশোর বয়সেই নেমেছেন সক্রিয় রাজনীতিতে। ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় জাতীয় পরিষদ সদস্য হয়ে আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রামের  রাজনীতির দীর্ঘ অধ্যায়জুড়ে ছিলেন খোরশেদ আলম সুজন  ।

    রাজনীতির অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এ পর্যন্ত টিকে থাকলেও দলীয় প্রাপ্তির খাতা অনেকটাই ছিল শুন্য।

    শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে না পাবার সেই আক্ষেপ কিছুটা হলেও ঘুচেছে বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদের।

    চট্টগ্রামের  রাজনীতিতে অতি পরিচিত মুখ খোরশেদ আলম  সুজন। বর্ণাঢ্য তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর শুরু হওয়া অপরাজনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে তার অসামান্য অবদান। অন্যায়ের প্রতিবাদে রাজপথে তাঁর কন্ঠ ছিলো বরাবরই সোচ্চার।

    খোরশেদ আলম সুজন -১৯৭০ সালে কাট্টলী স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জ্বীবিত হয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ছাত্রলীগে যোগদানের মধ্য দিয়ে তার ছাত্র রাজনীতিতে পদার্পন। ছাত্র রাজনীতির প্রথম অবস্থায় ১৯৭০ সালেই পাকিস্তান সরকার তথা আইয়ুব খান ‘‘পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি” নামক একটি বই ছাত্র সমাজের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল। বইটির বিরুদ্ধে তৎকালীন সারা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ উম্মাতাল আন্দোলন শুরু করে। সেই আন্দোলনে  কনিষ্ট ছাত্র হিসেবে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন তিনি । দেশপ্রেম হচ্ছে রাজনীতির প্রথম পাঠ। আর সবার উপর হচ্ছে তার আদর্শ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত বাঙালি সৈন্যদের সেবা শুশ্রুষার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন সুজন । সেই অংশগ্রহণে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিহারীরা তাকে দুই দুইবার ধরে নিয়ে গিয়েছিল হত্যা করার জন্য। পরবর্তীতে এলাকাবাসী গিয়ে তাকে মুক্ত করে । যুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনে তিনি সক্রিয়  অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে ছাত্রলীগ ভাগ হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে সম্মেলনের উদ্বোধন করেছিলেন সে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তিনি ।

    ১৯৭২ সালে  বাবার পরামর্শ মতে কনডেন্স কোর্স বিধায় এসএসসি পরীক্ষা দান থেকে বিরত থাকেন সুজন । ১৯৭২ সালে কাট্টলী ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হন। এরপর কাট্টলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ অবিভক্ত ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম সরকারী উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ (বর্তমানে মহসিন কলেজ) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় খোরশেদ আলম সুজন  চট্টগ্রাম সরকারী উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের ছাত্র। ১৫ আগস্টের সেই দিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে প্রথম একটি প্রতিবাদী মিছিল বের হয় আন্দরকিল্লা থেকে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর চট্টগ্রামের মিউনিসিপ্যাল বিদ্যালয় মাঠে প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করেন একুশে উদযাপন পরিষদ নাম দিয়ে। ১৯৭৬ সালে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন । ভর্তি হয়েই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের প্রতিষ্টা করেন। মাত্র ১৩ জন ছাত্র নিয়ে ছাত্রলীগের  যাত্রা শুরু। ১৯৭৬-৭৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৭৯-৮২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৮০-৮২ সালে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে পদার্পন করেন সুজন ।

    ১৯৮২-৮৪ সালে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬-৮৮ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি নির্বাচিত এবং কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।

    এরপর মজুরী কমিশন আন্দোলনসহ বিভিন্ন শ্রমিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন সুজ।।  এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ২ বার জেলে যান তিনি।
    ১৯৮৮-৯০ সালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সিবিএ ননসিবিএ সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত হন।  ১৯৯০-৯৮ সালে চট্টগ্রামে সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী সংগঠনের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বানিজ্য উপকমিটির সদস্য নির্বাচিত হন ।

    ১৯৯৬ সালের অসহযোগ আন্দোলনে তৎকালীন  বিরোধীদলীয় নেতা জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চট্টগ্রাম বন্দর অবরোধসহ অসহযোগ আন্দোলন করতে গিয়ে বার বার মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে গিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর অবরোধ আন্দোলন সফল করেছেন বর্ষিয়ান এই নেতা।

    ক্রেতা স্বার্থ সংরক্ষণ ও ভেজাল বিরোধী আন্দোলনের আহবায়ক হিসেবে সাধারণ জনগনের ক্রেতা স্বার্থ আদায়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও পানির দাবীতে লাগাতার আন্দোলন সংগ্রাম করেন । পানির দাবীতে ওয়াসা ভবন ঘেরাও এবং খালি কলসী ভাঙ্গা কর্মসূচী পালন করেন । এছাড়া বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং বন্ধ এবং সঞ্চালন লাইন মেরামতের দাবীতে বিদ্যুৎ ভবন ঘেরাও কর্মসূচী পালন করি এবং বিদ্যুৎ ভবনে বিশাল আকৃতির প্রতীকি তালা লাগানো কর্মসূচীও পালন করেছিলেন । তাছাড়া নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবার দুরবস্থার প্রতিবাদে নগরীর জিইসি মোড় থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত খাটিয়া মিছিল কর্মসূচী পালন করে আলোচিত হন তিনি। ধারাবহিকভাবে নাগরিক সমস্যা নিয়ে করা তাাা ররকাজ বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে।
    জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে লালদিঘীর পাড়, নিউমার্কেট চত্বরে জমকালো অনুষ্টানসূচী পালন করেন । এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সাগর পাড়ে আলোর মেলা শীর্ষক আয়োজনে সমুদ্র সৈকতে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন ঘুড়ি ও ফানুস উড়ানো এবং রাত্রে আতশ বাজির মনোমুগ্ধকর আয়োজন সম্পাদন করেন।
    মহেশখালের মুখে অপরিকল্পিত বাঁধের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেন । বাঁধ অপসারণ ও স্লুইস গেট নির্মাণের দাবীতে ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে অবশেষে বাঁধ অপসারণে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে সিডিএ কতৃক উক্ত মহেশখালে স্লুইস গেট নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।

    ২০১৭ সালে আনুষ্টানিকভাবে জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগ নামক সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। যার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নাগরিক সমস্যা এবং জনদুর্ভোগ লাঘবে পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করেন সুুুুজন। যাত্রার শুরুতেই নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে তৃণমূল থেকে সমস্যা খুঁজে বের করেন এবং স্বশরীরে বিভিন্ন সেবা সংস্থার দফতরে দফতরে গিয়ে সমস্যা সমাধান করেন। ইতিপূর্বে নাগরিক উদ্যোগের সহযোগিতায় অনেকগুলো কাজ সফলতার সাথে সম্পন্ন হয়েছে। বাকী কাজগুলো চলমান রয়েছে সেগুলোও সম্পন্ন হওয়ার পথে।
    ধারাবাহিকভাবে চলমান কর্মসূচী গুলোতে বিভিন্ন সময় চট্টগ্রাস সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, সিডিএ চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম এর প্রধান প্রকৌশলী, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক, বিএসটিআই চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক, পরিচালক (স্বাস্থ্য), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক, বিআইডব্লিউটিসি উপ-পরিচালক, সিভিল সার্জন, হাটহাজারী ইউএনও, খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন, রাশিয়ান অনারারি কনসাল, পরিবহন মালিক গ্রুপসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় এবং আলাপ আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কার্যকর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তিনি ।
    এছাড়া অযৌক্তিক হোল্ডিং ট্যাক্স এর বিরুদ্ধে রাজপথে সরব প্রতিবাদ করেন , ভেজাল পণ্য বিক্রয় ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে নগরীর বাজারে বাজারে প্রচারণা, বন্দর শ্রমিকদের কল্যাণে বন্দরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা, নারী শ্রমিকদের স্বার্থ আদায়ে মতবিনিময়, ট্রাফিক ব্যবস্থা আধুনিকায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে ফলপ্রসু আলোচনা, সার্কিট হাউস সংলগ্ন পার্কটিকে সবুজ চত্বর করার দাবীতে মানববন্ধন, ভর্তি বাণিজ্য বন্ধে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা, নগরীতে আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদানের দাবীতে মানবন্ধন, চিকিৎসা বেনিয়াদের হাত থেকে স্বাস্থ্য সেবা রক্ষার দাবীতে মানববন্ধন, অগ্নিদূর্যোগের ভয়াবহতা থেকে নগরবাসীকে রক্ষার্থে সতর্কতামূলক প্রচারপত্র বিলি, পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে হামিদউল্লাহ খাঁ বাজারে প্রতিবাদ কর্মসূচী এবং জনগনের মাঝে ব্যতিক্রমী পেঁয়াজ বিহীন রান্না পরিবেশন, প্রবাসীদের কল্যাণে মতবিনিময় সভা, হাসপাতালের নামে বাণিজ্যিক লীজ বাতিল করার দাবীতে মানববন্ধন, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিআরটিসি বাস চালু করাতে পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানানো, উপকূলীয় জেলেদের দাবী আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, মাদকের বিস্তার রোধে নগরীতে মাদক বিরোধী প্রতিবাদ সভাসহ বিভিন্ন নানামূখী জনবান্ধব কর্মসূচী গ্রহণ করি এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জন করেছেন খোরশেদ আলম সুজন ।
    তাছাড়া সামাজিক সংগঠন জাগ্রত ছাত্র যুব জনতার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সাড়া দিয়ে ঘোড়ার গাড়ী সহকারে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করেন এবং নগরবাসীর মাঝে ঔষধি ও ফলজ গাছের চারা বিতরণ, প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম আগমন উপলক্ষ্যে স্বাগত জানিয়ে বিশাল আনন্দ মিছিল, ২১শে আগস্ট গ্রেণেড হামলাকারীদের ফাঁসির দাবীতে নগরীর সিইপিজেড চত্ত্বরে বিশাল সমাবেশ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম আলোড়ন সৃষ্টিকারী গণমিছিল অনুষ্টিত হয় তার নেতৃত্বে।
    এসব কর্মকান্ড পরিচালনা করতে গিয়ে নগরীর সাধারণ জনগনের অকুণ্ঠ সমর্থন এবং ভালোবাসা পেয়েছি। বিশেষ করে গণমাধ্যম তথা অনলাইন মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সহযোগীতা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন খোরশেদ আলম সুজন।

    ২০১৯ সালের নভেম্বরে চীনের উহানে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস নামক প্রাণঘাতি ভাইরাসটি। পরবর্তীতে যা ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিস্তার লাভ করতে শুরু করে। করোনাভাইরাসের বিধ্বংসী মনোভাব আঁচ করতে পেরেই নাগরিক উদ্যোগের নেতৃত্বে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২০ইং বুধবার সকালে নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজারে উপস্থিত শত শত জনতাকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক তরল সাবান দিয়ে হাত ধোয়া কর্মসূচি, মাস্ক ও প্রচারপত্র বিতরণ করেন তিনি। এর পর ১৫ই মার্চ রবিবার সকালে নগরীর চকবাজার কাঁচা বাজার এবং এর আশে পাশের বাজারে পূণরায় সচেতনতামূলক তরল সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হেক্সিসল দিয়ে হাত ধোয়া কর্মসূচী, গ্লাভস এবং প্রচারপত্র বিতরণ করেন। জনগনকে সচেতনার অংশ হিসেবে পূণরায় ১৮ই মার্চ বুধবার দুপুরে নগরীর কাজির দেউড়ি বাজারে তরল সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হেক্সিসল দিয়ে হাত ধোয়া কর্মসূচী, গ্লাভস এবং প্রচারপত্র বিতরণ করেন। ধারাবাহিকভাবে এসব কর্মসূচীর মূল উদ্দেশ্য ছিল জনগনকে সচেতন করা এবং এর বিস্তার থেকে মুক্তি পাওয়া। তখনই এসব কর্মসূচীতে  মাস্ক, হেক্সিসল, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী মজুতদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান সুজন। পরবর্তীতে করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধ এবং জনগণকে এর সংক্রমণ থেকে দূরে রাখার জন্য ২৫শে মার্চ থেকে সারা দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। জনগনকে নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক পরিধান করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কার রাখা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং ঘরে থাকার নির্দেশনা প্রদান করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
    করোনা চলাকালীন সময়েও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগনের কোভিড চিকিৎসা নিশ্চিতের লক্ষ্যে মা ও শিশু হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা চালুর দাবীতে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ৩১শে মে রবিবার সকালে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন তিনি। এর পর ৭ই জুন রবিবার সকালে প্রেস ক্লাব চত্ত্বরে চট্টগ্রামের করোনা চিকিৎসায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস সহ বিভিন্ন শিল্পগ্রুপকে এগিয়ে আসার দাবীতে বিশাল মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। পরবর্তীতে ১৬ই জুন মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর ওষুধ পাড়া খ্যাত হাজারী লেইনে ভেজাল ওষুধ বিক্রয়, বিপণন এবং উচ্চমূল্যের সিন্ডিকেটের সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তি প্রদানের দাবীতে গণপ্রচারণা করেন এবং একই দিন রেলওয়ে হাসপাতালে আইসিইউ বেড এবং সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় জেনারেল ম্যানেজারের সাথে ফলপ্রসূ মতবিনিময় করেন।
    এর পাশাপশি মিডিয়ায় বিভিন্ন বক্তৃতা বিবৃতি এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেন চট্টগ্রামের করোনা চিকিৎসার প্রতিবন্ধকতাসমূহ বোঝাতে সক্ষম হন। এছাড়া চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার উপযোগী করে গড়ে তুলতে সহযোগিতার হাত উম্মুক্ত করার জন্য ধনাঢ্য ব্যক্তিদের উদ্বুদ্ধ করেন তিনি। ফলশ্রুতিতে উক্ত ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গ চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। বর্তমানে ঐ হাসপাতালে আইসিইউ বেড, অক্সিজেন প্ল্যান্ট এবং নিত্য নতুন স্বাস্থ্য সেবাসহ ১০০ শয্যার করোনা চিকিৎসার দ্বার উম্মোচিত হয়েছে। জনগনের চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে।
    পরবর্তীতে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ইপিজেডসমূহে আইসোলেশন সেন্টার এবং পিসিআর ল্যাব স্থাপনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ইপিজেডসমূহের মহাব্যবস্থাপকদ্বয়কে টেলিফোনে অনুরোধ করেন সুজন । অনুরোধের প্রেক্ষিতে মহাব্যবস্থাপকদ্বয় পরিস্থিতির বাস্তব অবস্থা উপলব্দি করতে সমর্থ হয়ে এ বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বেপজা প্রধান কার্যালয়কে অনুরোধ জানান। এর সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসকে ফোন করে আইসোলেশন সেন্টার এবং পিসিআর ল্যাব স্থাপনে সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

    ইতিমধ্যে ইপিজেডসমূহে আইসোলেশন সেন্টার স্থাপনের প্রয়োজনীয় অনুমোদন প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
    এভাবে প্রতিদিন নগরবাসীকে কোভিড চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা প্রদান, পিসিআর ল্যাব স্থাপন, সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন, আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন, বেসরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম নৈরাজ্য বন্ধ, জনগনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে বক্তৃতা, বিবৃতি এবং টেলিফোনের মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন খোরশেদ আলম সুজন   ।
    বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে আসলেও ক্ষমতার কাছ থেকে ততটাই দুরে ছিলেন সুজন। শেষ পর্যন্ত তাকে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের মতো গুরুত্বপূর্ণ  দায়িত্ব দেবার ঘোষনা আসলো।

    এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে চট্টগ্রামের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ।