বাংলাদেশ মেইল ::
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা হত্যার পর পুলিশের দায়ের করা হত্যা মামলার তিন সাক্ষীকে গ্রেপ্তার করেছে মামলার তদন্তকারি সংস্থা র্যাব। মঙ্গলবার সকালে তাদের আটকের পর সিনিয়র বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু আগের দিন রাতে স্বাক্ষীদের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ।
ওই সাক্ষীরা গ্রেপ্তার হওয়ার আগে গণমাধ্যমে দাবি করেছিলেন, এই হত্যার বিষয়ে তারা কেউ নিজের চোখে কিছু দেখেননি। ঘটনার পর স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে তাদের ডেকে নেওয়া হয়। পরে সকালে টেকনাফ থানায় নিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন তারা। পরে জানতে পারেন, তাদেরকে সাক্ষী করা হয়েছে।
মামলার তদন্তের ভার র্যাবের হলেও স্বাক্ষীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ স্বজনদের উপর চাপ প্রয়োগ করে। অপরিচিত সাদা পোষাকধারী কিছু ব্যাক্তি তাদের অপহরন করেছে এমন অভিযোগ দায়ের করায় টেকনাফ থানায়।
তবে টেকনাফ থানার নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিষয়টি অস্বীকার করে।
বাহারছরার মারিশবুনিয়ার নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দীন ও মোহাম্মদ আইয়াসের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ পুলিশ এসে তাদের হুমকি দিয়েছে। সাদা পোষাকে স্বাক্ষীদের কেউ অপহরণ করেছে এমন অভিযোগ করে মামলা দায়েরের জন্য চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগও তাদের।
সিনহা হত্যার ঘটনা তারা কেউ নিজের চোখে দেখেননি, ঘটনার পর স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে তাদের ডেকে নেয়া হয় এবং টেকনাফ থানায় নিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছিল বলে গ্রেপ্তারকৃতরা এর আগে দাবি করেছিলেন।
ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মেজর সিনহা টেকনাফের মারিশ বনিয়ায় তথ্যচিত্রের শ্যুটিং শেষে ফেরার পথে তাদের ডাকাত সন্দেহে পুলিশকে প্রথম খবর দেয় মো: আমিন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার আদালতে ওই তিনজনকে হাজির করে র্যাব। তাদের দশ দিনেন রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মন্জুর করে।
বুধবার (১২ আগস্ট) সন্ধ্যায় র্যাব সদর দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
তিনি বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) মো. নুরুল আমিন, আয়াছ উদ্দিন ও নিজাম নামে তিনজন সাক্ষীকে গ্রেফতার করা হয়। তারা পুলিশে দায়ের করা মামলার সাক্ষী ছিলেন। এরপর তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে উপস্থাপন করলে প্রত্যেকের ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
আশিক বিল্লাহ বলেন, তুলে আনার বিষয়ে টেকনাফ থানায় আসামি নুরুল আমিনের মা যে মামলাটি করেছেন সেই মামলার বিষয়েও বিভিন্ন গণমাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলো নিয়েও আদালত একটি আইনসম্মত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ রোডে টেকনাফের বাহারছড়া চেকপোস্টে তল্লাশির সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ তড়িঘড়ি করে দুটি মামলা করেন। মামলায় নিহত সিনহার সফরসঙ্গী সিফাতকে আসামী করা হয়। সেই মামমলায় বেশ কয়েকজনকে সাক্ষী করা হয়।
নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস ৫ আগস্ট বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পরিদর্শক লিয়াকত আলী, ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
৬ আগস্ট বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপসহ সাত আসামি কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। মামলার শুনানিতে র্যাবের পক্ষে প্রত্যেক আসামির ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত লিয়াকত, প্রদীপ ও নন্দ দুলাল রক্ষিতকে সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাকি চারজনকে দুইদিন কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।
অন্য দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। চারজনকে জেল গেইটে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আবারো ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছে তদন্ত সংস্থা।
গত ৩১ জুলাই রাতে সিনহা নিহতের ঘটনার পর পুলিশের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কক্সবাজার কারাগারে ছিলেন বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ। পরে তারা জামিনে ছাড়া পান।
নিহত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের সঙ্গে কক্সবাজারে প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজ করছিলেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির তিন শিক্ষার্থী শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও তাহসিন রিফাত নূর।