করোনায় আক্রান্ত হয়ে শিল্পী মুর্তজা বশীরের মৃত্যু

    বাংলাদেশ মেইল :: 

    করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করলেন  বাংলার শিল্পকলার অন্যতম নক্ষত্র মুর্তজা বশীর।

    তার মেয়ে মুনীর বশীর  জানান, শনিবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি।

    মুনীর বশীর জানিয়েছেন, শনিবার জোহর থেকে আসরের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে মুর্তজা বশীরকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

    ৮৮ বছর বয়সী এ চিত্রশিল্পীকে এর আগেও বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা নিয়ে একাধিকবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। ফুসফুস ও কিডনি জটিলতার পাশাপাশি তার হৃদরোগও ছিল।

    চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত

    বাংলার জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র কনিষ্ঠ সন্তান মুর্তজা বশীরের জন্ম ১৯৩২ সালের ১ ৭ অগাস্ট। জন্মবার্ষিকীর দুদিন আগে চিরবিদায় নিলেন তিনি।

    মুর্তজা বশীরের শিক্ষা জীবন শুরু হয় ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউশনে, এরপর তিনি শিক্ষাগ্রহণ করেছেন বগুড়ার করোনেশন ইনস্টিটিউশন, ঢাকা গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টস (এখন যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) ও কলকাতা আশুতোষ মিউজিয়ামে।

    এছাড়াও ইতালির ফ্লোরেন্স একাডেমি দেল্লে বেল্লে আরতিতে চিত্রকলা ও ফ্রেস্কো বিষয়ে ও পরে প্যারিসের ইকোলে ন্যাশিওনাল সুপিরিয়র দ্য বোজার্ট এবং আকাদেমি গোয়েৎসে মোজাইক ও ছাপচিত্রে অধ্যয়ন করেন তিনি। ১৯৭৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণে এক মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ৮টি রাজ্যের বিভিন্ন জাদুঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রদর্শন করেন তিনি।

    ১৯৫৫ সালে ঢাকার নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ড্রইং শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ১৯৯৮ সালে অধ্যাপক হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন।

    বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে, প্রতিবাদে মুর্তজা বশীর ছিলেন অগ্রভাগে।
    ১৯৫০ সালে কমিউনিস্ট পার্টি আহুত ময়মনসিংহের হাজং, ভারতের তেলেঙ্গানা ও পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগণার কাকদ্বীপে মুক্ত এলাকা দিবস এই প্রচার অভিযান চলাছিল। ওই সময়ে গ্রেপ্তার হন মুর্তজা বশীর। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঁচ মাস জেল খাটেন তিনি।

    ১৯৫২ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত সুভাষ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘পরিচয়’ পত্রিকায় ভাষা আন্দোলনের ওপর ‘পারবে না’ শিরোনামে তার কবিতা ছাপা হয়। কলকাতা থেকে প্রকাশিত একুশের স্মরণিকায় ‘ওরা প্রাণ দিল’ কবিতাটি পুনর্মুদ্রিত হয়।

    ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ভাষা আন্দোলনে শহীদ আবুল বরকতকে রক্তাক্ত অবস্থায় অন্যদের সঙ্গে তিনি হাসপাতালে নিয়ে যান। ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের ছাদে কালো পতাকা উত্তোলনকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন।

    ‘রক্তাক্ত ২১’ কে ভাষা আন্দোলনের ওপর আঁকা প্রথম ছবি হিসেবে গণ্য করা হয়।

    ১৯৭১ সালে ১৬ মার্চ শহীদ মিনার থেকে বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত বাংলাদেশে চারু ও কারুশিল্পী পরিষদের উদ্যোগে ‘স্বা-ধী- ন-তা’ মিছিলে নেতৃত্ব দানকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।