চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে- সুজন
    চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের সাথে চসিক প্রশাসক সুজনের বৈঠক

    বাংলাদেশ মেইলঃ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক নিযুক্ত হওয়ার পর আজ সকালে চট্টগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন খোরশেদ আলম সুজন। এসময় বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল শেখ মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ তার দপ্তরে সুজনকে অভ্যর্থনা জানান।

    বর্তমানে বন্দরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও সক্ষমতা ফিরে আসায় সন্তুষ্টি জানিয়ে সুজন বলেন, চট্টগ্রাম যেহেতু বন্দর নগরী। এই বন্দরকেই চট্টগ্রাম নগরীর লালন এবং উন্নতমানের শহরে রূপান্তর করতে ভূমিকা রাখতে হবে। চট্টগ্রাম বাঁচলেই সারা বাংলাদেশ বাঁচবে। এটা অনস্বীকার্য যে একটা দেশের কাঙ্খিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দ্রুত প্রসারের জন্য সমুদ্র বন্দর পূবশর্ত। যার মাধ্যমেই দেশের মূলতঃ সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটে। যে দেশের কোন সমুদ্র বন্দর নেই সেই দেশকে প্রচন্ড বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় আমদানি-রপ্তানী বাণিজ্যে। বেশিরভাগ বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য তারা পুরোপুরি অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল থাকে। প্রকৃতপক্ষে, একটি দেশের সুষম ও টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য সমুদ্র বন্দরের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি বলেন, নেদারল্যান্ড, সিংগাপুর ইত্যাদি দেশগুলো সমুদ্র বন্দরকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে। বর্তমান সরকার প্রকৃতি ও সৌন্দর্যের লীলাভুমি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে নেদারল্যান্ড ও সিংগাপুরের মত অর্থনৈতিক উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। তাই বর্তমান সময়ে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে। যার কারণে চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে প্রচুর শিল্প-কারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে ত্বরান্বিত হচ্ছে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। অর্থনৈতিক গুরুত্ব চট্টগ্রাম আমাদের দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী এবং এর মধ্য দিয়েই সঞ্চালিত হয় দেশের অর্থনৈতিক জীবনীশক্তি। দেশের সর্বমোট রপ্তানী বাণিজ্যের প্রায় ৭৫ ভাগ সংঘটিত হয় চট্টগ্রামের উপর দিয়ে। প্রশাসক বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর সড়কগুলোর উপর সারা দেশের আমদানি-রপ্তানি পরিবহন চলাচল করে তাই এই সড়কগুলোর রক্ষণা-বেক্ষণ ও সম্প্রসারণের দায়িত্ব বন্দরের উপরও বর্তায়। বন্দরের রাস্তায় বিশালাকৃতির গাড়ীগুলো অলস পার্কিং এর কারণে সৃষ্ট যানজট থেকে মুক্ত রাখতে হলে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের স্বার্থ রক্ষার আন্দোলনে আমি সাবেক মেয়র চট্টলবীর আলহাজ্ব এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে ছিলাম। চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে চট্টগ্রাম নগরবাসীর স্বার্থ জড়িত। তিনি বলেন, আগ্রাবাদ হতে পতেঙ্গা পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের বসবাস। কিন্তু দু:খের বিষয় এখানে একটি মাতৃসদন কিংবা জেনারেল হাসপাতাল নেই। আমাদের এতদাঞ্চলের মায়েদের কথা চিন্তা করে এখানে একটি মাতৃসদন হাসপাতাল করার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানান প্রশাসক।

    বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল শেখ মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ তাঁর দায়িত্ব পালন কালিন সময়ে চসিক প্রশাসকের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর জাতির অস্তিত্বের মত। বন্দরের সক্ষমতাবৃদ্ধি বে-টর্মিনাল বাস্তবায়ন, কর্ণফুলী নদী’র ক্যাপিটেল ড্রেজিং অব্যাহত রাখা, পতেঙ্গা ও লালদিয়ার চরের টার্মিনাল নির্মাণ, পোর্ট লেবার কলোনীতে টার্মিনাল নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর উভয় তীরের ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য তাঁর প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। রাজাখাল ও মহেষখাল ড্রেজিং করা, মহেষখালে পাম্প হাউস সহ স্লুইসগেট নির্মাণ করার বিষয়টিও এখন সময়ের দাবী। তিনি বলেন, আনোয়ারা, ফেনী ও মিরসরাই অর্থনৈতিক জোন চালু হলে এবং কর্নফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মিত হলে বন্দরের বহুমাত্রিক ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। সে বিষয়টিকে আমলে এনে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এ কারণে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। পরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান চসিক প্রশাসকের হাতে বন্দরের মনোগ্রাম খচিত ক্রেস্ট তুলে দেন।

    সাক্ষাতকালে চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, প্রধান প্রকৌশলী লে.কর্ণেল সোহেল আহমদ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য(এডমিন এন্ড প্লানিং) জাফর আলম, প্রকৌশলী কমডোর নিয়ামুল হাসান, প্রশাসকের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, সচিব মো. ওমর ফারুক, প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান, উপ-ব্যবস্থাপক(ভূমি) মো. জিল্লুর রহমান, চট্টগ্রাম বন্দর সিবিএ সভাপতি আবুল মনছুর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক নায়েবুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।