বাংলাদেশ মেইল ::
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব নিয়ে আলোচনায় আসা সাইফুল আলম চৌধুরী নিজের নামে প্লট বরাদ্ধ নিয়ে আবারো সংবাদ শিরোনাম হলেন । নগরীতে বিভিন্ন আবাসিক ভবন ও প্রকল্পে সিডিএ’র অনুমোদনের বাইরে বাড়ি তৈরির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন সিডিএ’র স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল আলম । বিল্ডিং কোড না মেনে তৈরি করা ভবন মালিকদের জেল জরিমানা দিয়ে জনপ্রিয়তা কুড়ানো এই কর্মকর্তা সিডিএ থেকে প্লট বরাদ্ধ পেয়েছেন । তবে সলিমপুর এলাকার একটি লেক ভরাট করে তৈরি করা হবে এই প্লট । এ লেকটি ৬০ বছর ধরে সংরক্ষিত হয়ে আসছে ।
সুত্রমতে ,লেক ভরাট করে প্লট বরাদ্দ দেবার প্রস্তাব ইতিমধ্যে সিডিএ চেয়ারম্যান অনুমোদন করে দিয়েছেন। এখন শুধু বোর্ড সভার অপেক্ষা। আগামী সপ্তাহে বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই সভায় তা অনুমোদন পেলেই পাঁচ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ দিতে আইনগত আর কোনো বাধা থাকবে না বলে জানা যায়। সীতাকুন্ডের সলিমপুরে সিডিএ’র ভারপ্রাপ্ত সচিবকে প্লট বরাদ্ধ দেয়া হলেও তিনি স্থানীয় এলাকারই বাসিন্দা । নিজের এলাকায় প্লট আবেদন কেন করেছেন এমন প্রশ্নও সিডিএ’র বিভিন্ন কর্মকর্তাদের মুখেমুখে। সেই প্লট আবার জলাশয় ভরাট করে প্রস্তুত করা হচ্ছে ।
জানা যায় , ১৯৬০-৬১ সালে পাহাড় ও সমতল ভূমি ঘেরা ১৯৬ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে তিন দফায় ১২০৮টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। আর এসব প্লট বরাদ্দ দিতে এবং রাস্তা তৈরিতে এপর্যন্ত প্রায় আট দফায় আবাসিক এলাকার লে আউট পরিবর্তন করা হয়। সকল লে আউট প্ল্যানে আবাসিক এলাকার মসজিদের সামনে প্রায় তিন একর আয়তনের লেকটি রয়েছে। কিন্তু এখন লেকটির উত্তর অংশে একটি পাঁচ কাঠার প্লট তৈরি করা হচ্ছে। এবিষয়ে সিডিএ সিলিমপুর আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির সভাপতি আরজু খান বলেন, ‘লেকটি ৬০ বছর ধরে সংরক্ষিত হয়ে আসছে। এই লেকটি আবাসিক এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। লেকের পাড়ে আবাসিক এলাকার মানুষের বিনোদনের জন্য ওয়াকওয়ে এবং বসার কিছু স্থাপনা নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এখন এই লেক ভরাট করে প্লট বরাদ্দ দেয়ার উদ্যোগ কখনো মঙ্গলজনক হবে না।’
জানা গেছে ২০১৩ সালে সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এই লেক ভরাট করে প্লট বরাদ্দ দেয়ার জন্য আবেদনপত্রও বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু পরিবেশ আইন ও আমাদের দাবির মুখে পিছু হটেন তিনি । যদি এবারো লেক ভরাট করে কাউকে প্লট বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয় তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবার কথা জনান সিলিমপুর আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির সভাপতি আরজু খান ।
প্লট বরাদ্দ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর আগে সিডিএ একটি খেলার মাঠ এবং পার্কের জায়গায় প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। এভাবে উন্মুক্তস্থানগুলো বরাদ্দ দিয়ে আবাসিক এলাকাটিকে বসবাসের অনুপযোগী করে তুলছে। ইতিমধ্যে সিডিএ চেয়ারম্যানের কাছে আমরা লিখিতভাবে এর প্রতিবাদ জানিয়েছি।’
লেক ভরাট করে কোনোভাবেই প্লট বরাদ্দ দেয়া যাবে না জানিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন,‘জলাধার সংরক্ষণ আইনে কোনোভাবেই লেক ভরাট করে প্লট বরাদ্দ দেয়ার এখতিয়ার নেই। আর যদি দিতেই হয় তাহলে ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করতে হবে। আর জলাধারের শ্রেণী পরিবর্তন সম্ভব নয়। গেল ২৬ আগস্ট এ বিষয়ে শুনানীর জন্য সিডিএ কর্তৃপক্ষকে উপস্থিত হতে বলা হলেও নির্ধারিত দিনে তথ্য উপাত্ত প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। ‘
প্লট বরাদ্দ দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিডিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ এ এম হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে আমি শুধু স্বাক্ষরের মালিক। সিডিএ’র উর্ধতনগণবলেছেন লেকের ওখানে প্লট তৈরি করার জন্য। সেই হিসেবে লেকের ওখানে প্লটের ডিজাইন করা হচ্ছে।’
লেকে প্লট নির্মাণ করা যায় কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন সিলিমপুর আবাসিক এলাকার দায়িত্বে ছিলাম। কিন্তু ওখানে প্লট তৈরি করা হয়নি। এমনকি ২০১৩ সালে লেক ভরাট করে প্লট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও পরবর্তীতে তা থেকে সরে আসে সিডিএ।’
লেক ভরাট করে প্লট কেন এমন প্রশ্ন করা হলে সিডিএ’র একাধিক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, লেকের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে একটি প্লট নিতে চেয়েছেন সিডিএ’র ভারপ্রাপ্ত সচিব সাইফুল আলম চৌধুরী। সচিবের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই লেক ভরাট করে প্লট বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়া নেয়া হচ্ছে।
এবিষয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন,‘সিডিএ’র বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সচিব একটি প্লটের জন্য আবেদন করেছেন এবং সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান তা অনুমোদন করে প্লট দেয়ার প্রক্রিয়া করতে বলেছেন। প্রক্রিয়ার আলোকে বোর্ড সভায় অনুমোদন দিলে প্ল্যানিং বিভাগ লেআউট পরিবর্তন করে প্লট তৈরি করবেন।’
লেক ভরাট করে প্লট দেয়ার আবেদন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিডিএ’র বোর্ড সদস্য এম আর আজিম বলেন , লেক ভরাট করে পরিবেশের ক্ষতি করে প্লট দেবার কোন পরিকল্পনা নেই । কেউ এ ধরনের অনৈতিক সুবিধা নিতে চাইলে বিষয়টি নিয়ে বোর্ড সদস্যরা অবশ্যই আপত্তি জানাবে । সিডিএ’র কর্মকর্তা হিসেবে তিনি প্লটের আবেদন করতেই পারেন । তবে জলাশয় ভরাট করে প্লট বরাদ্ধ দেবার কোন সুযোগ নেই । এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সিডিএ ব্যাখা প্রদান করেছে । ”
এবিষয়ে সিডিএ’র পরিকল্পনা শাখার দায়িত্বে থাকা পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, ‘লেক ভরাট করে আমরা আগেও প্লট বরাদ্দ দিতে দেইনি। এবারো তা করতে দেয়া হবে না। কারণ, লেকটি হলো আবাসিক এলাকার সৌন্দর্য। অনেক এলাকায় এখন লেক তৈরি করতে হয়, সেখানে লেক ভরাট করে প্লট করতে দেয়া হবে না।’
বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হবার পর নড়েচড়ে উঠে সিডিএ কর্তৃপক্ষ। ২১ আগস্ট প্লট বরাদ্ধের বিষয়ে সিডিএ চেয়ারম্যানের অনুমোদনের বিষয়টি অস্বীকার করে প্রতিবাদ দেয়া হয় । স্থানীয় গণমাধ্যমে পাঠানো প্রতিবাদ লিপিতে সিডিএ কর্তৃপক্ষ লেক ভরাট করে প্লট বরাদ্ধ দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে । সলিমপুর আবাসিক এলাকার প্রকল্প পরিচালক মোঃ হাছান স্বাক্ষরিত ব্যাখ্যায় বলা হয় সিডিএ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কতৃক সিডিএ সলিমপুর লেক সংলগ্ন খালি জায়গাটুকু হতে ৫ কাঠা একটি প্লটের আবেদন করা হয়েছিল। তৎপ্রেক্ষিতে সিডিএ এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করে নি। অদ্যাবধি প্লট বরাদ্দের বিষয়ে কোনো পরিকল্পনাও গ্রহন করেনি।
প্রসঙ্গত , সিডিএ’র সচিব পদে স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল আলমকে দায়িত্ব দেয়া নিয়ে ৭ই জুন সিডিএ’র সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলমের সাথে দেখা করে তাদের ক্ষোভের কথা জানান। বিধি অনুযায়ী উপ সচিব ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল আলমকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
সুত্র : সুপ্রভাত বাংলাদেশ